হুমায়ূন ফরীদি সেই বিরল অভিনেতাদের একজন যাকে অন্য অনেক অভিনেতাই গুরু মনে করেন। তার অভিনয় দক্ষতার এতোটাই উচ্চমার্গীয় ছিল যে, মৃত্যুর এক যুগ পরও তার ঝলক আমরা পাই এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতাদের মাঝে। আজ এই প্রখ্যাত শিল্পীর জন্মদিন। বিশেষ দিনে প্রিয় সহকর্মীরা তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধাভরে। তেমনি কিছু শুভেচ্ছাবার্তা ও স্মৃতিচারণা নিয়ে এই আয়োজন সাজিয়েছেন মাসিদ রণ
আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
আজ ২৯ মে হুমায়ুন ফরীদির জন্মবার্ষিকী। এই বিশেষ দিনেই প্রকাশ পেয়েছে ‘হুমায়ূন ফরিদী সাধারণ এক অসাধারণ’ নামের বইটি। আহমেদ রেজাউর রহমানের সম্পাদনায় বইটির প্রচ্ছদ করেছি আমি। বইটিতে ফরীদিকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন ৬০ জন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। যারা ছিলেন প্রয়াত অভিনেতার কাছের মানুষ। আমি ছাড়াও তাকে নিয়ে কথা বলেছেন ফেরদৌসি মজুমদার, নাসির উদ্দীন বাচ্চু, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ইমদাদুল হক মিলন, জয়া আহসান, আফরান নিশো, জিতু আহসানসহ অভিনেতার পরিবারের সদস্যদের লেখা।
চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা
ফরীদি ভাই
আপনার অভাব কখনো পূরন হবার নয়।
তাইতো এখনো গভীর রাতে আপনার ছবি আঁকি ক্যানভাসে
নানান রেখায় জীবন্ত হয়ে ওঠেন আপনি,
স্মরন করি গভীর শ্রদ্ধায়
হুমায়ুন ফরীদি..একজনই..
শুভ জন্মদিন ফরীদি ভাই।
রুনা খান, অভিনেত্রী
জীবনে প্রথমবার তার মুখ দেখেছিলাম, তার হাত ধরেছিলাম নিকুঞ্জের কাশবনে, ২০০৪ সালে। শমী কায়সার আপার পরিচালনায় একটি টেলিছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে কাজ করেছিলাম, শমী আপার বান্ধবী। শিল্পী ছিলেন দিলারা আন্টি, ফরিদী ভাই, শমী আপা আর আমি। প্রথম টেলিছবি ওটা আমার, ক্যামেরার আংগেল বুঝি না, বারবার ক্যামেরার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে টেনে ঠিক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এই মেয়ে এখানে দাঁড়াও, এদিকে তাকিয়ে কথা বলো, ক্যামেরাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ক্যামেরা তোমার বন্ধু!’
সেই থেকে অভিনয় জগতে ক্যামেরাই আমার একমাত্র বন্ধু!
মৌটুসী বিশ্বাস, অভিনেত্রী
হুমায়ূন ফরীদি স্যারের সঙ্গে প্রথমবার বোধহয় কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা এবং আবদুল্লাহ রানার পরিচালনায় টেলিফিল্ম ‘গেস্ট হাউজ’-এ। ফরীদি স্যার, আলী যাকের চাচা, আসাদুজ্জামান নূর চাচা, পারভীন সুলতানা দিতি আন্টি, সুবর্ণা মুস্তাফা আপা, ফজলুর রহমান বাবু ভাইদের মাঝে আমি ২২ বছরের চট্টগ্রাম-ঢাকা করা এক এ্যামেচার।
আজ মনে পড়ছে ফরীদি স্যারের কথা। শুটিং হাউজে তিনি ঘড়ি ধরে আসতেন, কাজ করতেন তারপর সময়মতো চলে যেতেন। তার প্রশ্নের ভয়ে তটস্থ থাকত শুটিং টিম। ধরুন, ক্যামেরাম্যানকে উনি ডাকলেন, ডিওপি বলার চল তখনো শুরু হয়নি। কী ক্যামেরা জেনে তিনি তৎক্ষণাৎ কিছু প্রশ্ন করতেন। বেচারার ধরণী দ্বিখণ্ডিত হলেই বোধহয় ভালো ছিল। বকা দিতেন না। শুধু জিজ্ঞেস করতেন, তারপর নিজেই উত্তর দিয়ে দিতেন। এমন অবস্থায় আমি আগেই আত্মসমর্পণ করতাম আর নানা রকম অভিনয় সংক্রান্ত প্রশ্ন করতাম।
নানাবিধ প্রশ্নের মাঝে একদিন তিনি কিছু বই নিয়ে আসলেন আমার জন্য। কনস্তান্তিন স্তানিস্লাভস্কি-এর দুটো বই সাথে স্তানিস্লাভস্কির ছাত্রী সোনিয়া মুর-এর একটা বই। দিলেন। আমি ‘হা’ হয়ে গেলাম। আমার ‘হা’ আর বন্ধ হয় না। ফরীদি স্যার স্তানিস্লাভস্কির বই দিচ্ছেন আমাকে? কেন?
তাকে জানাই আমি ফটোকপি করে উনার বই ফেরত দিয়ে আসব। তিনি হেসে বললেন, লাগবে না। আমার মুখ তখনো হা হয়েই আছে। তিনি আশ্বস্ত করলেন যে এই বইগুলোর কাজ শেষ। আমার কোনোদিন শেষ হলে যার প্রয়োজন তাকে যেন আমি দিয়ে দেই। আহ্ তিনি যদি জানতেন যে এই প্রয়োজন আমার কখনোই মিটবে না।
দেবাশীষ বিশ্বাস, নির্মাতা ও উপস্থাপক
বাংলাদেশের 'অভিনয় প্রতিষ্ঠান' হুমায়ুন ফরিদীকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা! আমার বাবা'র পর আপনার অভিজ্ঞতালব্ধ সুপরামর্শ আমার এ জগতে চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে আজীবন! আপনার সাথে উপস্থাপক, সহঅভিনেতা আর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুখ আর সৌভাগ্য নিয়েই কাটিয়ে দিতে চাই বাকী পার্থিব জীবনটাকে!
সাজু খাদেম, অভিনেতা
তিনি শুধু আমার গুরু নন, সবার গুরু। শুভ জন্মদিন ফরীদি ভাই।
শাহেদ আলী সুজন, অভিনেতা
হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়ের শেষ বিদায়ের এক যুগ হয়ে গেল। তিনি যখন মারা যান, অনেকেই ভেবেছিলেন, ‘লোকজন হয়তো-বা তাকে খুব একটা মনে রাখবে না।’ কিন্তু সময়ের আবর্তে দেখেছি, যারা তাকে সে সময় পছন্দ করতেন, শুধু তারাই নন, নতুন প্রজন্মও ফরীদি ভাইকে শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করছে। অভিনেতা কিংবা মানুষ হিসেবে তাকে যারা পছন্দ করতেন, জীবনের বিভিন্ন কিছুতে তারা হুমায়ুন ফরীদিকে রাখতে চান। এ বিষয়টি আমার ভালো লাগে।
বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে ফরীদি ভাইয়ের অবদান আছে। আমি মনে করি তিনি থিয়েটারের একজন দিকপাল। টিভি নাটকের ইন্ডাস্ট্রিতে পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল। আবৃত্তির ক্ষেত্রেও একটা স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করেছিলেন। তাই শুধু চলচ্চিত্র-অভিনেতা বললে একটা গণ্ডির মধ্যে তাকে আবদ্ধ করে ফেলা হবে, উনার ব্যাপ্তিটা আরও বিশাল।