দেশের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী হুমায়ূন ফরীদির জন্মদিন বুধবার। মৃত্যুর এক যুগ পরও তিনি সমান জনপ্রিয় দর্শকের কাছে। এমনকি তার সহকর্মীরা এখনো তাকে মনে করেন বিভিন্ন কাজের সময়। তেমনিভাবে তাঁর জন্মদিনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নিচের ছবিটি শেয়ার করে রুনা লিখেছেন, ‘‘এটা ছিলো তার সাথে আমার শেষ দেখা। ২০০৯-এর জুলাই বা অগাস্ট। দীপন দা’র ‘মায়ের দোয়া পরিবহণ’ নাটকের সেটে ধামরাইয়ে। তখন রাজেশ্বরী পেটে, ১-২ মাস সবে। চলমান কাজগুলো শেষ করে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যাই। রাজেশ্বরীর জন্মের পর আমার ছোট-বড় তাবত সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র জন যিনি আমাকে প্রথম নিজে থেকে ফোন করেন, স্পষ্ট শুনতে পাই আমি এখনো ফরিদী ভাইয়ের ফোনের ওপাশের গলার আওয়াজ, ‘রুনা.. তোমার সন্তান হয়েছে, অভিনন্দন। সন্তানকে নিয়ে ভালো থেকো।’’
হুমায়ূন ফরীদির চলে যাওয়ার দিনটির কথা স্মরণ করে রুনা লিখেছেন, ‘তিনি যেদিন চলে যান, সেদিন আমার হোতাপাড়া শুটিং ছিলো, ‘সাত-সওদাগর’ নাটকের। শুটিংয়ে না গিয়ে আমি ধানমন্ডি যাই। তার খাটের পাশে, ঘরে, বসার-খাবার ঘরে, নীচে গ্যারেজে সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু একবারের জন্যও তার মুখ দেখিনি, হাত স্পর্শ করিনি।’
হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে প্রথম দেখার স্মৃতি এখনো রুনার মনে জ্বলজ্বলে। তিনি লিখেছেন, ‘‘জীবনে প্রথমবার তার মুখ দেখেছিলাম, তার হাত ধরেছিলাম নিকুঞ্জের কাশবনে, ২০০৪ সালে। শমী কায়সার আপার পরিচালনায় একটি টেলিছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে কাজ করেছিলাম, শমী আপার বান্ধবী। শিল্পী ছিলেন দিলারা আন্টি, ফরিদী ভাই, শমী আপা আর আমি। প্রথম টেলিছবি ওটা আমার, ক্যামেরার আংগেল বুঝি না, বারবার ক্যামেরার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে টেনে ঠিক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এই মেয়ে এখানে দাঁড়াও, এদিকে তাকিয়ে কথা বলো, ক্যামেরাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ক্যামেরা তোমার বন্ধু!’ সেই থেকে অভিনয় জগতে ক্যামেরাই আমার একমাত্র বন্ধু!’’
২০০৮ এ তার পরিচালনায় হুমায়ুন আহমেদের ‘ছায়াবিথী’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘নায়লা’তে নির্বাচিত হন রুনা খান। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো রুনা জনপ্রিয় নয় তারপরও কেনো সে সময়কার জনপ্রিয়দেরকে না নিয়ে রুনাকে ‘নায়লা’ চরিত্রে নিলেন?
তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন ‘‘রুনা জনপ্রিয় নয়, তবে ও আমার চোখে এই সময়ের ফাইনেস্ট অভিনেত্রীদের একজন, সেজন্য সে আমার কাছে ‘নায়লা’ !’’
সবশেষে রুনা লিখেছেন, ‘আপনি আমার কাছে এখনো জীবন্ত ফরিদী ভাই। শুভ জন্মদিন। ভালোবাসা। রুনা খান।’