শাকিব খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘অনন্ত ভালোবাসা’ মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালের ২৮ মে। সেই হিসেবে তার অভিনয় জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে গত দুদিন আগেই। এতো বছর পরও তিনি দেশীয় সিনেমার শীর্ষ নায়কের আসনে রয়েছেন। দীর্ঘ এই অভিনয় জীবনে অর্জন করেছেন চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ২৪৯। বর্তমানে প্রতিটি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এক কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন শাকিব খান। ঢালিউডের সফলতম এই অভিনেতাকে তার চলচ্চিত্রের রজত জয়ন্তীতে শুভেচ্ছায় ভাসিয়েছেন তার কাছের সহকর্মীরা। তা নিয়ে এই আয়োজন সাজিয়েন মাসিদ রণ
অঞ্জনা, চিত্রনায়িকা
দীর্ঘ ২৫ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তুমি অনন্য, একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তুমি ভূষিত হয়ে অলংকৃত করেছ আমাদের এই চলচ্চিত্র অঙ্গনকে। বাংলা চলচ্চিত্রের বরপুত্র, রাজকুমার, বীর, শাহেনশাহ, নবাব, কিংখান, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। এই চলচ্চিত্রশিল্পে তোমার মেধা ও যোগ্যতায় তুমি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছ জনমনে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও তুমি সুঅভিনয়ের যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছ তা চির অম্লান। খ্যাতির শীর্ষ সোপানে অধিষ্ঠিত হও। অনেক শুভ কামনা তোমার জন্য।
শাবনূর, চিত্রনায়িকা
২৫ বছর ক্যারিয়ার অতিক্রম করলেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান। অনেক অনেক শুভ কামনা ও অভিনন্দন! ঢালিউডকে আরো অনেক কিছু দেওয়ার আছে তোমার। এগিয়ে যাও!
মিশা সওদাগর, শীর্ষ খল অভিনেতা
তোমার জীবনের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত শেষ শুটিং করা সিনেমার সাথে আমি জড়িত। আমার তিন যুগের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে চাই, সাকসেসের জন্য সবাই কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু সাকসেস পাওয়ার পর তোমার মত তুফানি পরিশ্রম করতে আমি কাউকে দেখিনি। ২৫ পেরিয়ে ২৬ এর সফল অগ্রিম শুভেচ্ছা। সুস্থ থাকো, চলচ্চিত্রকে এমন করেই ভালোবাসো।
দীপঙ্কর দীপন, নির্মাতা
২৫ বছর ধরে ইন্ড্রাস্ট্রীতে নিজের অবস্থান ধরে রাখা, ক্রমশ নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া, বির্তকে সময় নষ্ট না করে কাজ দিয়ে জবাব দেয়া, নিজেকে সফলতার অনতিক্রমনীয় চূড়ায় নিয়ে গিয়েও না থামা- এমন বৈশিষ্ট্য খুব বিরল। এসব কারণেই শাকিব খান বিষ্ময়কর। অনেক আগে আমি যখন শাকিব খানকে বাংলাদেশের সম্পদ বলে পোস্ট দিয়েছিলাম, তখন যারা আড়ালে হেসেছিল, কটু কথা বলেছিল, তারাও এখন শাকিব খানে মুগ্ধ। শাকিব খানের এই অর্জন, নিজেকে অতিক্রমের ক্ষুধা থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।
শাকিব ভাই অভিনন্দন, ভালবাসা। সুস্থ থাকবেন, সাবধানে থাকবেন। কেবল ২৫ হলো, সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রিতে হাফ সেঞ্জুরি মারতে হবে, মনে রাখবেন।
ফুটনোট : আমার প্রিয় দুটো লুকের ছবি দিলাম। আমি আগেও বলেছি আমার কাছে বাস্তবের শাকিব খান কখনো কখনো পর্দার শাকিব খানের চেয়ে অনেক চার্মিং ও ম্যাজিকাল।
দেবাশীষ বিশ্বাস, উপস্থাপক ও নির্মাতা
মেগাস্টারকে সিনেম্যাটিক রজত জয়ন্তীর অভিনন্দন! এই জয়যাত্রা চলুক অব্যাহত!
ইমন, চিত্রনায়ক
২৫ বছরে পৃথিবীর অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেলেও আমাদের শাকিব খান আছেন তার মতো করে! Congratulations to our Megastar Shakib Khan for your successful silver jubilee career in Dhallywood.
সৈকত সালাহউদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশক
শাকিব খান মনে করিয়ে দেন যে চেষ্টা করতে থাকলে নতুন মুখের সংগ্রাম থেকে একসময়ে শীর্ষস্থানে দীর্ঘদিন রাজত্ব করা যায়। তার শুরুটা এক সিনেমায় বাজিমাত ছিলো না। তিনি এসেছেন সিনেমার প্রতিযোগিতামূলক সময়ে। সে সময়ের বড় তারকাদের সাথে কাজ করেও তিনি নিজের সম্ভাবনা জানান দিতে পেরেছেন। এরপর চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে পারিশ্রমিক নিয়ে রেকর্ড গড়েন তিনি। দীর্ঘদিন শীর্ষ অবস্থানের পর ব্যক্তিগত কারণে তিনি অনেক প্রশ্নের মুখে পড়ে যান। সেই সাথে ইন্ডাস্ট্রিতে নিষিদ্ধ করা এবং হামলাও হয়েছে তার উপর। বলতে গেলে পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন থেকে তিনি আগের জায়গা ছাড়িয়ে যে উচ্চতায় উঠে এসেছেন সে গল্প দিয়েও একটা সিনেমা বানানো যায়। পর্দায় শুভ পঁচিশ শাকিব খান। একজন মানুষই জানেন তিনি কি ঠিক করেছেন বা ভুল করেছেন। সে হিসাব কষে এগিয়ে যান। আনন্দভুবন-এর প্রচ্ছদের জন্য এই ছবিগুলো যখন তোলা হয়েছিলো তখন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেয়ার জন্য লড়ছেন। এখনও তার ভালো করার জন্য চেষ্টাটা আছে। আশা সেখানেই।
তপু খান, নির্মাতা
২৫ বছরের এই পথ চলায় ছোট একটি অংশীদার হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। বাংলা সিনেমার ৬৯ বছরের পথ চলায় ২৫ বছর পর্দায় আর মানুষের মনে রাজত্ব করছেন আপনি। পৃথিবীর চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আপনার এই অর্জনে জাতীয়, সাংগঠনিক বা সামাজিকভাবে যে কোন উদযাপন হতেই পারতো। তবে দেশ এবং দেশের বাইরে সকল মানুষ, দর্শক, ভক্তদের মনে আপনার যেই অবস্থান আপনি তৈরি করেছেন, যে কোনো উদযাপন, পুরষ্কার, মূল্যায়ন তার কাছে খুবই খুবই ক্ষুদ্র।
কাজের মাধ্যমে মানুষের মনের ভালোবাসা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন এবং পুরস্কার। সেই ভালোবাসার সীমা পৃথিবীর মানচিত্রে তার অবস্থান কে দিনে দিনে আরো বাড়িয়ে চলেছে। সিনেমার প্রতি আপনার এই ভালোবাসা আর আপনার নিরলস পরিশ্রম রকেটের গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আপনাকে যা অব্যাহত থাকবে বিশ্বের বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে বাংলা সিনেমার অবস্থান উন্নত করা পর্যন্ত। চাইলেই তো আর রকেটকে ধরা যায় না। দূর থেকে দেখতে হয়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে থামবে সেই শিল্পের রকেট।
একজন মানুষ যিনি সিনেমার জন্য কতটুকু ভাবতে পারে তা আপনার সাথে থেকে দেখেছি আর শিখেছি। আপনার সাথে কাজ করার সময়টুকু যে কোন নবীণ পরিচালকের জন্য সিনেমার উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন থেকে কোন অংশে কম নয়। এই মুহুর্তে ইউ আর দ্য ইন্ডাস্ট্রি। হ্যাপী ২৫ সাকেসসফুল ইয়ার ভাইয়া।
এছাড়া চিত্রনায়িকা তানহা তাসিনয়া, জাহরা মিতু, বিপাশা কবির, সাংবাদিক নাহিয়ান ইমনসহ অনেক ভক্ত দর্শক শুভাকাক্সক্ষী তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শাকিব খান অভিনীত প্রায় আড়াইশ’ ছবির মধ্যে ৯৪টি সিনেমা ঈদে মুক্তি পেয়েছে। দুই বাংলা মিলিয়ে সিনেমার গানের সবচেয়ে বেশি ভিউ তার দখলে। শাকিব ও মিশা সওদাগর নায়ক-ভিলেন জুটি হিসেবে সর্বোচ্চ ১২৬টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের নায়ক হিসেবে প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান ‘দরদ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। প্রযোজনা সংস্থা ভার্সেটাইল মিডিয়ার তথ্যমতে, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি সারা বিশ্বে প্রায় ৪১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। চলচ্চিত্রের শীর্ষ এই নায়ক দেশ-বিদেশের ৭০ জন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাসের বিপরীতে। এই জুটি সর্বমোট ৭২টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। শাকিব খান ও শবনম বুবলি জুটি সর্বমোট ১১টি সিনেমায় অভিনয় করেছে।
শাকিব খানের সিনেমার জীবন বদলে যায় ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিটি মুক্তির পর। সিনেমাটি পরিচালনা করেন এফ আই মানিক। তার আগে দর্শকনন্দিত নায়িকা শাবনূরের বিপরীতে ‘গোলাম’ সিনেমায় অভিনয় করেও আলোচনায় আসেন ঢাকাই সিনেমার শাকিব।
চলচ্চিত্র জীবনের ২৫ বছরে চরিত্রের প্রয়োজনে নানান লুকে দেখা গেছে শাকিব খানকে। তবে দর্শক তার ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ লুক বেশি পছন্দ করে। তার এমন লুক প্রথম নজরে আসে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজিত ‘শিকারি’ সিনেমায়। সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শক নতুনভাবে তাকে আবিষ্কার করেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না (২০১০), খোদার পরে মা (২০১২), আরো ভালোবাসবো তোমায় (২০১৫) ও সত্তা (২০১৭) ছবিগুলোতে।