অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন এক সময়ের টিভি নাটকের প্রিয় মুখ রিশতা লাবনী সীমানা। অকালে (৩৯ বছর) এই অভিনেত্রীর শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখেই শোবিজের অনেকেই তার জন্য দোয়া চেয়েছেন, শুভকামনা জানিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে চলেই গেলেন সীমানা। রেখে গেছেন মাত্র আট ও তিন বছর বয়সী দুটি পুত্রকে। শেষ বিদায়ে এই তারকাকে সোশ্যাল মিডিয়ার স্মরণ করেছেন অনেক তারকা। তেমনি কিছু পোস্ট তুলে ধরা হলো
সীমানার সঙ্গে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সাকিন সারিসুরি’তে অভিনয় করেছিলেন নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘‘সীমানা, জীবনের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেলি মৃত্যুর সীমানায়! অনন্তলোকে তুই চির শান্তিতে থাকিস। তোর জন্য রইল গভীর শোক। ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘কলেজ টুডেন্ট’সহ কত কত স্মৃতি!’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান অকালপ্রয়াত সীমানার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘২০১২-১৩ তে একটা সিরিজ করতে গিয়ে তোর সাথে প্রথম পরিচয়। একটা মাত্রই কাজ হয়েছিলো আমাদের একসাথে। তারপর তোর বিয়ে সন্তানদের জন্ম। আমি নিজে সিরিজে কাজ করা বন্ধই করে দেই প্রায়। যোগাযোগ-দেখা কিছুই ছিলো না তোর সাথে। ২১ এর ডিসেম্বরে হঠাৎ তোর টেক্সট-কল, আপু আমার ছোট-ভাই এর বিয়ে তোমাকে আসতেই হবে! কেন? কি ভেবে অমন পাগল হয়েছিলি ভাইয়ের বিয়েতে আমাকে নেবার জন্য কে জানে? সবগুলো আয়োজনে যেতে না পারলেও জানুয়ারিতে তোর ভাইয়ের বৌভাতে গিয়েছিলাম। তোর এত ভালোবাসার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করা সম্ভব ছিলো না আমার পক্ষে। ২০২২ এর ২ জানুয়ারি তোকে দেখলাম প্রায় ৯-১০ বছর পর, তোর ছেলে দুটোকে দেখলাম। নিজে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দেখলি আমি খাচ্ছি কিনা ঠিক মতন! মাত্র ২ বছর আগে! আমি কি জানতাম ওটাই তোর সাথে আমার শেষ দেখা। সেজন্যই কি অমন করে ছোট্ট ছেলেকে কোলে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শেষবার খাওয়ালি? আমরা কিছুই জানি না, কোনটা শেষ দেখা, শেষ কথা.. কিচ্ছু জানি না! সীমানা, তোর আত্মার শান্তি হোক বাবু, আদর।’
ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম লিখেছেন, ‘অভিনয়শিল্পী রিসাত লাবনী সীমানা আজ ভোর ছটার দিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ দুপুর ১২ টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, না ফেরার দেশে অভিনয়শিল্পী সীমানা! তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
চিত্রনায়িকা নিপুণ ও রত্না লিখেছেন, ‘আজ সকাল ৬ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অভিনেত্রী সীমানা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।’
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘কিছুই বলার নেই। বাচ্চা দুটোর জন্যে অনেক প্রার্থনা, পরপারে ভালো থেকো আর উপরে যিনি আছেন তিনি যেন এই বাচ্চা দুটোকে দেখে রাখেন এই প্রার্থনা করি। পৃথিবীর সকল মাহারা সন্তান ভালো থাকুক, কারোর যত্নে আনন্দে থাকুক।’
জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ লিখেছেন, ‘কিছু লিখতে পারছি না। আল্লাহ আপনি বাচ্চা দুইটাকে দেখে রাখবেন।’
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লিখেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে উঠেই আগে নিউজ স্ক্রল করে দেখি, তোর কোন ভাল খবর আছে নাকি। আজও তাই করতে যেয়ে, তোর এ খবর পেলাম! তোর সাথের সব স্মৃতি দুই চোখে ভীড় করছে, তোর বাচ্চা দুইটা! সব যন্ত্রণার অবসান হলো আজ। শান্তিতে ঘুমা!’
গুণী অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা লিখেছেন, ‘সীমানা, জীবন বড়ই বিচিত্র। কিন্তু মৃত্যু রঙহীন একরকম। তোকে এই পৃথিবীর আর কোন কিছুই তার সীমানায় আবদ্ধ করতে পারলো নারে। সব সীমানা পেরিয়ে তুই পাড়ি দিলি অনন্তলোকের অজানা সীমানায়... ভালো থাকিস বোন, চির শান্তিতে থাকিস ওপারে। রেখে গেলি বাচ্চা দুটো, ওদেরকে ওপার থেকে দেখে রাখিস।’
নির্মাতা সতীর্থ রহমান লিখেছেন, ‘সীমানার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভনিতা ছিল না। সত্যি সত্যিই খুব কষ্ট পাচ্ছি। এর রেশ থেকে যাবে বেশ কিছুদিন। মেনে নেয়া যায় না। তবুও মেনে নিতে হবে। এ কেমন প্রস্থান! মিডিয়ায় আমাকে স্বার্থহীণভাবে ভালোবাসে এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। তারাও ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করেছে। বুঝলাম যাবার সময় হলো বিহংগের। যেখানেই থাকো ভাল থাকো।
(ছবিটি গুলশান এভিনিউ নাটকের ৫০০ পর্ব অনুষ্ঠান উদযাপন অনুষ্ঠান থেকে নেয়া)
অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ লিখেছেন, ‘চলে গেলি সীমানা? আহারে বাচ্চা ২টা...’
অভিনেত্রী তাহমিদা সুলতানা মৌ লিখেছেন, ‘সীমানা....ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।’
গত ২১ মে রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সীমানা। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে দ্রুত ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জানা যায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে তার। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত কয়েক দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৫ মে এই হাসপাতালে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। গত বুধবার বিকেল থেকে সীমানার চিকিৎসা চলছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ধীরে ধীরে সীমানার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত অবনতি হতে থাকে। শুরুর দিকে তাকে আইসিইউতে রাখা হলেও বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সীমানা চলে যান না ফেরার দেশে।
সীমানা ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরে নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ ২০১৬ সাল থেকে অভিনয়ে বিরতি। মা হওয়ার জন্য এই বিরতি। গত বছর আবার নাটকে অভিনয় শুরু করেন। সীমানার দুই সন্তান। বড় সন্তান শ্রেষ্ঠর বয়স আট, আর ছোট সন্তান স্বর্গ তিন বছর বয়সী।