‘তুফান, খুব ভয় পাইছি রে’- ঈদের আলোচিত সিনেমা ‘তুফান’-এর ভাইরাল সংলাপ এটি। ছবির টিজারে জাদরেল অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মুখে এই সংলাপ প্রকাশের পর থেকেই তা নেটিজেনদের মন জয় করেছে। এবার সেই জনপ্রিয় সংলাপ তৈরীর নেপথ্যের গল্প শোনালেন চঞ্চল চৌধুরী নিজেই।
সম্প্রতি উপস্থাপক চঞ্চলকে প্রশ্ন করেন, আপনার সিনেমার একাধিক সংলাপ মানুষের মুখে মুখে। এখন যেমন ‘তুফান, খুব ভয় পাইছি রে’ সংলাপটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সংলাপগুলো শুটিং করার সময়েই কি পরিকল্পনা করে কাজ করেন যে এটি মানুষের মুখে মুখে রটাতে হবে?
উত্তরে চঞ্চল বলেন, ‘না, এটা পরিকল্পনা করে হয় না। তুফানের সংলাপটির কথাই বলি- এটি যখন শুট হচ্ছিল তখনই পরিচালক রাফী আমাকে বলেছিলেন, চঞ্চল ভাই আপনি যে ডেলিভারিটা দিলেন, এই ডায়লগ ভাইরাল হবে!’
তিনি যোগ করে বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র অভিনেতার ডেলিভারির জন্য হয় না। সংলাপটি ঠিক জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই সংলাপ হয়তো বিভিন্ন অভিনেতা বিভিন্ন প্রোডাকশনে দিতে পারে, হয়তো অনেকেরটা অনেক ভালো ডেলিভারিই হচ্ছে, কিন্তু সঠিক জায়গায় হয়তো সংলাপটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটা হলো একটা ম্যাজিকের মতো। ম্যাজিকটা ঠিকঠাকভাবে যে তৈরী করতে পারে সে সাকসেসফুল! দর্শকের মনোভাব একজন নির্মাতা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বুঝতে হয়। তাহলেই ম্যাজিকটা তৈরী হয়।’
এই সংলাপে চঞ্চল তার ধারাবাহিক সফলতাকে কিভাবে হ্যান্ডেল করেন সে বিষয়েও কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, ‘আমি প্রতিদিন যতোবারই আয়নায় নিজেকে দেখি ততোবারই চঞ্চল চৌধুরী হিসেবেই দেখি। অভিনেতা হিসেবে একটি চরিত্র পেলে সেটির মতো হওয়া আমার কাজ, যা আমি ক্যামেরার সামনে করি। এতে সফলতা ব্যর্থতা আসবে। কিন্তু মনের দিক থেকে আমি সেই পুরনো চঞ্চল চৌধুরী। আমি শেকড়কে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করি। এ কারণে পরিবার, বন্ধু বান্ধব, পুরনো স্মৃতি সবই আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে চঞ্চলের ঝুলিতে অনেক সাফল্য। তিনি এ দেশের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা। যখন নতুন নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেন তখন কি তারা আপনাকে অভিনয়ের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দিতে পারেন? নাকি সবটাই আপনার ওপর ছেড়ে দেন?
জানতে চাইলে চঞ্চল বলেন, ‘কোন নির্মাতা যদি বলেন আপনি আপনার মতো করেন, তাহলে আমি খুব মাইন্ড করি! আমি তখন তাদের সোজাসাপ্টা বলে দিই যে, আমি আমার মতো করলে সেটা আমার মতোই হবে, আমি তো আমার মতো করার জন্য তোমার এখানে আসিনি। তুমি কি চাও সেটা আমাকে বলো, আমি সেভাবেই কাজ করব। আসলে পরিচালক যেভাবে চান সেভাবেই কাজ করি আমি। কোথাও যদি মতের পার্থক্য হয় সেটি আমি নির্মাতার সঙ্গে শেয়ার করি। রাফীর সঙ্গেও তাই করেছি। এর আগে যাদের সঙ্গে সিনেমা করেছি সেটি মেজবাউর রহমান সুমন হোক কিংবা গীয়াস উদ্দিন সেলিম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা সবার সঙ্গেই একইভাবে কাজ করেছি। এমনকি এতো নাটক করেছি, সেখানেও এভাবে কাজ করেছি। গতকালই সালাহউদ্দিন লাভলুর নাটকে কাজ করলাম, সেখানেও একটি সংলাপে আমার মনে হলো উনি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে ডেলিভারি করাটা ঠিক হবে না। তিনি আমাকে ১৫-২০ বছর আগে থেকে তার নাটকে নিচ্ছেন, আমাকে দিয়ে একভাবে ডায়লগ ডেলিভারি করিয়েছেন। কিন্তু ওই সময়ে আমার যে বয়স, যে ইমেজ তাতে যেভাবে দিয়েছি এখন এই বয়সে এসে সেভাবে দেয়াটা ঠিক হবে না। আমি তাকে বিষয়টি বললাম, তিনিও বিষয়টি বুঝতে পারলেন। এটা আসলে সময়ে দাবী। কোন সময়ে কোন স্পেসে কাজটি করিছি সেটা বোঝা খুব জরুরী।’