পরিকল্পনা করে বিয়ের খবর গোপন করিনি: আইরিন

ছোটপর্দা, বিনোদন

মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-06-24 16:11:59

ছোটপর্দার পরিচিত মুখ আইরিন আফরোজ। মডেলিং ও টিভি নাটকে সাবলিল উপস্থিতি দিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। এই তারকা সাত মাস আগেই বিয়ের পীড়িতে বসেছেন। তবে সেই খবর জানাজানি হয়েছে সদ্য। কেন এতোদিন বিয়ের খবর জানাননি? কখন কিভাবে বিয়েটা হলো? এসব নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ

আইরিন আফরোজ

নতুন জীবন শুরু করেছেন, অভিনন্দন। যদিও সাত মাস আগেই বিয়েটা করেছেন...


ধন্যবাদ। হ্যাঁ বিয়েটা করেছি গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে কোরবানির ঈদের সময় ফেসবুকে স্বামীর সঙ্গে ছবি দেখে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় এখন অনেকেই আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। যেদিন প্রথম খবরটি মিডিয়ায় আসে তার পরদিন ঘুম থেকে উঠে আমি তো অবাক। ফোন, এসএমএস, ইনবক্স, সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টে ভরে যায়। সবাই নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। আমার খুব ভালো লাগছে।

নব দম্পতি বাবু ও আইরিন / ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খবর এতোদিন পরে কেন জানালেন?


আমি জানি, অনেকে এই বিষয়েও কথা তুলেছেন। কারণ শোবিজে এর আগে অনেক তারকা বিয়ে-বাচ্চা লুকানোর নিউজ খুব সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা কেন এই কাজ করেছেন তা আমি জানি না। তবে আমার বিষয়টি বলতে পারি যে, ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়বে, ডিমান্ড কমে যাবে, দর্শকপ্রিয়তা হারাবো এসব চিন্তা থেকে নয়। কারণ ২০২৪-এ এসে বিয়ের কারণে এসব হয় না। আমি আসলেই কোন পরিকল্পনা করে বিয়ের খবর গোপন করিনি!

বিয়েটা যে গোপন করেছি তাও কিন্তু নয়। আমার আশেপাশের মানুষ বা যেসব সেটে কাজ করেছি, যারা বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছেন সবাইকে বিয়ের ব্যাপারে জানিয়েছি। তবে এটা ঠিক যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের ছবি দিয়ে বিয়ের ঘোষণা করিনি!

আইরিন আফরোজ

কারণ, আমার বিয়েটা খুবই দ্রুত সিদ্ধান্তে হয়েছে। তখন আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না! বিয়ের কিছুদিন আগেই আমার আব্বুকে হারাই। তিনি বরাবরই চাইতেন, আমি বিয়ে করে সুখী হই। এমনকি মৃত্যুর আগে হাসপাতালে থাকাকালীন আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলেছেন। তারপর তো তিনি চলেই গেলেন! এজন্য আমি ভাবলাম দ্রুতই বিয়েটা সেরে ফেলা উচিত। এতে আব্বুর আত্মা শান্তি পাবে।

তাছাড়া বরাবরই চেয়েছি, আমার বিয়েটা হবে খুব সুন্দর আয়োজন করে। সেই ছবি উৎসাহ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করবো। কিন্তু সেভাবে তো বিয়েটা করতে পারিনি। তাই ইচ্ছে ছিল এ বছরেই সবাইকে জানিয়ে বড় পরিসরে বিয়ের আয়োজন করার। তার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছবি দেখে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়ে গেছে।

স্বামীর সঙ্গে আইরিনের রোমান্টিক মুহূর্ত / ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

আপনার স্বামী তো শোবিজের বাইরের মানুষ। তার সম্পর্কে জানতে চাই...


আমার স্বামীর নাম মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডাকনাম বাবু। সে একজন শিক্ষিত মানুষ, সফল ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে তাদের পরিবারের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির সবাই বলতে গেলে ইতালি নয়তো লন্ডনে থাকেন। শুধু আমি আর আমার স্বামীই মিরপুরে আছি। বাবু আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষদের একজন। পার্টনারকে সম্মান করা, স্পেস দেয়া, তার কাজকে সম্মান করা, কাজে অনুপ্রেরণা দেওয়া- সব গুণই তারমধ্যে আছে। এমনও হয় যে, আমি কিছুদিন অলসতার জন্য শুটিং না করলে সে-ই আমাকে বলে, ‘এভাবে বসে থেকো না। শুটিং করো, কারণ তুমি অভিনয়টা ভালোবাসো। আমি তো সারাক্ষণ ঘর সংসার সামলাবে এমন মেয়ে করিনি। তুমি একজন অভিনেত্রী, দর্শক তোমাকে ভালোবাসে, তাদের জন্য হলেও তোমাকে কাজ করতে হবে।’

আমি অবশ্য সংসারটা মন দিয়েই করি। আগের মতো প্রতিদিন শুটিং করি না। আমার রান্না খেতে বাবু খুব ভালোবাসে। তার জন্য রান্নাটা আমিই করি। এবার কোরবানির ঈদে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বড় পাতিলে গুরুর মাংস করেছি। তা দেখে গ্রামের মানুষ তো অবাক, বলছে- আপনি নায়িকা মানুষ। রান্না বান্নাও পারেন (হাহাহা)।

বিয়ের মঞ্চে আইরিন ও তার স্বামীর মালাবদল / ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

বিয়েটা কিভাবে হলো?


একেবারেই ঘরোয়াভাবে দুই পরিবারের ক্লোজ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বিয়েটা করেছি। অবশ্য বাবা আমার বিয়েটা দেখে যেতে পারেননি। তবে তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাবুকে দু-একবার দেখেছেন। তখন আমি আব্বুকে বলেছি বাবু আমার খুব ভালো বন্ধু। তখন আমরা প্রেমের সম্পর্কে ছিলাম। আব্বুও বলেছিলেন, ‘ছেলেটা খুব ভালো। নামাজ-কালাম করে, তুমি ডাকা মাত্র চলে এসেছে, তার মানে তোমাকে কেয়ার করে।’ বাবা একথা বলার পরই আসলে বিয়েটা দ্রুত করার সিদ্ধান্ত নিই।

স্বামীর সঙ্গে আইরিনের রোমান্টিক মুহূর্ত

আপনাদের পরিচয় কিভাবে?


আমার একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল। তাদের মাধ্যমেই বাবুর সঙ্গে পরিচয় ২০১৬-১৭ সালের দিকে। তখনই আমরা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠি। কিন্তু কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। একটা পর্যায়ে আমাদের ওই সার্কেলটার যোগাযোগ কমে যায়। যে যার লাইফ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কোভিডের পর আবার ফ্রেন্ড সার্কেলটার রিইউনিয়ন হয়। এবার আমরা সবাই আগের চেয়ে অনেক ম্যাচুরড। আমি আর বাবু দুজনই বিয়ের ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলাম। দুজন দুজনকে মনে হয়েছে একসঙ্গে আমরা থেকে যেতে পারবো। এই চিন্তা থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো।

বিয়ের মঞ্চে আইরিন ও তার স্বামী / ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

বাবু লাইফ পার্টনার হিসেবে সত্যি খুব ভালো। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম, তেমনটাই। আমার স্বামীর অনেক টাকা থাকবে, দেখতে রাজপুত্রের মতো হবে- সেগুলো চাইনি। চেয়েছি এমন একজন মানুষ যে আমার সঙ্গে সম্পর্কে সৎ থাকবে, আমাকে বুঝবে। যদিও আমার স্বামীর বাড়ি গাড়ি সব আছে, সিক্স প্যাক অ্যাবস আছে (হাহাহা)- এগুলো তো আসলেই বাড়তি পাওনা! সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আজীবন একসঙ্গে দারুণভাবে কাটিয়ে দিতে পারি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর