এমনিতেই দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও ঢাকা ৩-এর সাবেক সাংসদ ফেরদৌস আহমেদ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে অনেকটাই নিখোঁজ রয়েছেন তিনি।
মাঝে খবর এলো, আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতায় জনপ্রিয় নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর বাড়িতে। কিন্তু গতকালই ঋতু গণমাধ্যমকে জানালেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক। ফেরদৌসও আমার একজন ভালো বন্ধু। কিন্তু সে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে আমার বাড়িতে উঠেছে এমন নয়!'
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় না, সে দেশ থেকে বেরিয়েছে। বের হলে আমরা তো জানতে পারতাম। বিষয়টা তো এমন নয় ফেরদৌস অপরিচিত মুখ। তার মতো মানুষ দেশ থেকে বের হলে এমনিতে সবাই জানতে পারবে। আমার পরিষ্কার কথা, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক, বাংলাদেশের সবাই ভালো থাকুক।’
এই যখন অবস্থা তখন কলকাতায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া ছবি থেকে বাদ পড়লেন ফেরদৌস। টলিউডের ‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’তে বেশ আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এই চিত্রনায়ক। তবে ছবিটি থেকে তাকে সম্প্রতি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এই ছবির প্রযোজক রানা সরকার স্পষ্ট করে বলেছেন, ফেরদৌস বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না! তাই তাকে সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হলো। ফেরদৌসের পরিবর্তে বাংলাদেশের জিয়াউল রোশানকে মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন প্রযোজক রানা সরকার।
কারণ হিসেবে প্রযোজক জানান, ‘সিনেমাটি দুই বাংলার দর্শকদের টার্গেট করে বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষত ছাত্রদের আবেগের কথা মাথায় রেখে আমার সিনেমায় বাংলাদেশের এমন কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে অভিনয় করাবো না, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না। সে হিসেবেই ফেরদৌসকে আমরা সিনেমাটিতে রাখছি না।’
প্রযোজকের ভাষায়, ‘রোশান নিয়ে আমাদের কোনও ঝামেলা নেই। শুটিং শুরুর আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সে করতে চাইলে অবশ্যই সিনেমায় থাকবে।’
গত বছরের শুরুর দিকে অভিনয়শিল্পীদের লুক প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছিল ‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমার। তবে এখনও শুটিং শুরু হয়নি।
ফেরদৌসের কারণেই কি এই বিলম্ব? জবাবে রানা সরকার বলেন, ‘২০২৩ সালেই শুটিং হওয়ার কথা ছিল, তবে সেটা সম্ভব হয়নি। ফেরদৌসের কারণে নয়, বিভিন্ন কারণে একটু দেরি হচ্ছে। যেহেতু এটার শুটিং হবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায়, তাই সেখানে অনুমতির একটা বিষয় ছিলো।’
‘মীর জাফর: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমায় স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল ফেরদৌস ও শ্রীলেখা মিত্রের। এখন কথা হলো, ফেরদৌসের বদলে জিয়াউল রোশানকে নিলে তার সঙ্গে কি শ্রীলেখা মিত্রকে মানাবে? নাকি ফেরদৌসের জন্য শ্রীলেখারও ছবিটি হাতছাড়া হবে? এ প্রশ্নগুলো থেকেই যায়। এ নিয়ে অবশ্য প্রযোজক কোন কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বাসু চ্যাটার্জির ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমা দিয়ে রাজকীয় অভিষেক হয় ফেরদৌসের। এরপর মাঝের দুই দশক দুই বাংলায় অসংখ্য সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘মিট্টি’ সিনেমা দিয়ে নাম লেখান বলিউডেও। তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা (এ বছর মুক্তি পায়) ছটকু আহমেদের ‘আহারে জীবন’ ব্যবসাসফল হয়নি।