‘তারায় তারায় রটিয়ে দেব’, ‘মা’, ‘বাবা’, ‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে বলছি’, ‘কত কষ্টে আছি’, ‘বাংলার লাঠিয়াল’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘তুমি জানলে না’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা’, ‘যেদিন বন্ধু চলে যাব’, ‘পথের বাপই বাপরে মনা’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘চিরটা কাল সঙ্গে রব’, ‘অবশেষে জেনেছি মানুষ একা’, ‘উঠেছে তুফান’, ‘সেলাই দিদিমণি’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘নাগরালী’, ‘ফুল নেবে না অশ্রু’সহ কালজয়ী এসব গানের স্রষ্টা ও শিল্পী জেমস।
তার সঙ্গীত প্রতিভা নজর এড়ায়নি বলিউডের মতো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরও। তাইতো মহেশ ভাটের মতো প্রখ্যাত বলিউড ব্যক্তিত্ব তাকে ডেকে নিয়ে গাইয়েছেন একাধিক ছবিতে। এখনো ভারতের রিয়েলিটি শো-গুলোতে নতুন প্রতিভারা গেয়ে থাকেন ‘ভিগি ভিগি’ ‘আলবিদা’, ‘চাল চালে’, ‘বেবাসি’, ‘রিশতে’ গানগুলো।
তার পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। এই বড় নামটি আরও বড় হয়ে যায় এই নামের পাশে একের পর এক বিশেষণ যুক্ত হওয়ায়। ‘গুরু’, ‘নগর বাউল’, ‘দেশসেরা রকস্টার’, ‘সংগীত মহিরুহ’, ‘কিংবদন্তি’– এমন অনেক বিশেষণে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নন্দিত এই শিল্পীকে। কিন্তু সত্যি এটাই, চিনে নেওয়ার জন্য তার কণ্ঠস্বরই যথেষ্ট। যে কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়া অজস্র গান যুগ যুগ ধরে অনুরণন তুলে যাচ্ছে শ্রোতাহৃদয়ে।
যে দিনটি ঘিরে প্রতিবছরই জন্ম হয় নতুন ঘটনার। যার দৃশ্যপটে থাকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে ভক্ত-অনুরাগীর ছুটে আসা, ট্রাকভর্তি কেক নিয়ে শহরজুড়ে বিলানো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিকৃতি নয়তো বিলবোর্ডে বিশালাকৃতির ছবি জুড়ে দিয়ে জন্মদিনকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা।
শুধু তাই নয়, বিশেষ এই দিনে রক্তদান কর্মসূচি ও দোয়া মাহফিল ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কেক কেটে গান-আড্ডার আয়োজন করতে দেখা গেছে তার ফ্যান ক্লাবের সদস্যদের। আর নিয়মিত বিষয়ে হয়ে গেছে, কার্ড, ফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বিনিময়, স্মৃতিচারণ, গান ও গায়কি নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করা। কিন্তু দেশের বাইরে নগর বাউল জেমসের শো থাকায় এবার প্রিয় শিল্পীর জন্মদিনে ব্যতিক্রমী কিছু করার সুযোগ পাচ্ছেন না অনুরাগীরা।
তবে দূরে থেকেও জেমস তার ভক্তদের উদ্দেশে ছুড়ে দিয়েছেন একমুঠো ভালোবাসা। যার মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংগীতপ্রেমীদের জন্যই তাঁর এই শিল্পী জীবন। তাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন সব সময়, গানে গানে ফিরে আসতে চান তাদেরই মাঝে। ঠিক তাঁর অ্যালবামের বার্তায় যেভাবে বলেছিলেন–
‘আমি ছিলাম, আমি আছি; আমি থাকব।
মনে রেখো– আমার জন্মের শেষ নাই।
আজ যদি আমি দেহ ত্যাগ করি,
নয় মাস পর আবার তোমাদের গর্ভে
জন্ম নেব, জন্ম নেব; জন্ম নেব ...
মনে রেখো– আমার জন্মের কোনো শেষ নাই।
নগরবাউলকে নিয়ে তার গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, জেমস ভাইকে শিল্পী হিসেবে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি। দেখেছি, বড় হতে হতে কীভাবে আসমান ছোঁয়া মহিরুহ হয়ে উঠেছেন। আজ তিনি উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রকারদের একজন। জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি প্রার্থনা করি, তিনি যেন সুস্থ থাকেন, গানে গানে দীর্ঘদিন আমাদের আনন্দ দিয়ে যান। সবশেষে চাওয়া একটাই, তাঁর কণ্ঠস্বর যেন নিবেদিত থাকে মানুষের কল্যাণে।