দেশের অন্যতম মেধাবী অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস। কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ চুজি। কিন্তু সে কাজটি ধরেন তাতে তার নিমগ্নতা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। এই তারকা এখন দূর্গা পূজা কাটাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি খুলনায়। আজ মহাষষ্ঠীতে থাকলো মৌটুসীর সাবেকি ডিজাইনের শাড়ি আর গয়নার এক্সক্লুসিভ পূজার ফটোশুট। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: বার্তা২৪-এর সঙ্গে দূর্গা পূজার স্পেশ্যাল ফটোশুটের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই...
মৌটুসী বিশ্বাস: এক কথায় অনবদ্য। আমি যেমনটি আশা করেছিলাম তেমনি কাজটি। এর পেছনে আপনি অনেক শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছেন। তাছাড়া অনেকদিন পর আমার প্রিয় ফটোগ্রাফার নূরকে পেয়েছি। সবমিলিয়ে দারুণ একটি টিমওয়ার্ক ছিলো। যদিও বৃষ্টি আমাদের বেশ ভুগিয়েছে। এজন্য সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা অবধি শুট করতে হয়েছে। আমি খুব একটা শুট করি না। পূজার জন্য শুট তো আরও কম করা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে পূজার একটি শুট করেছিলাম কাশবনে, সেটিও খুব প্রশংসা পেয়েছিলো।
এ বছর দেখলাম অনেকেই কাশবনেই পূজার শুট করছে। তাই আমরা এমন একটি লোকেশন বেছে নিতে চাইলাম যেটি আর কেউ করেনি এ বছর। লালবাগ কেল্লার প্রাচীন নিদর্শনের ওপরই আস্থা রাখলাম। সব মিলিয়ে আমি খুব উপভোগ করেছি।
মাসিদ রণ: পূজায় আপনার সাজ পোশাক নিয়ে জানতে চাই...
মৌটুসী বিশ্বাস: আমি খুব একটা সাজ পোশাক পছন্দ করি না। কম্ফোর্টেবল লাগে এমন জিনিসই পরি। সেক্ষেত্রে পূজায় প্রথম পছন্দ সুতি শাড়ি। এবার দু খানা সুন্দর শাড়ি উপহার পেয়েছি। আমিও উপহার দিয়েছি কাছের মানুষদের। পূজা বলেন আর যে কোন ব্যক্তিগত উপলক্ষ্য বলেন, আমি কখনোই মনে করি না আমি একজন অভিনেত্রী, আমাকে ওই ইমেজ বহন করতে হবে সবসময়। ক্যামেরার বাইরে আমি অতি সাধারণ।
তবে এই যে আপনাদের সঙ্গে পূজার ফটোশুট করলাম, আমি যদি সব সময়ের মতো আটপৌরে অবস্থায় ক্যামেরার সামনে চলে আসি সেটি কিন্তু ভালো উদাহরণ নয়। ক্যামেরার সামনে নিজেকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে যাতে আমার সাজ পোশাকে ভুল কোন বার্তা না ফুটে ওঠে। আজকের সাজে পূজার আমেজ ঠিকঠাকভাবে ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে ছবিগুলো দেখে হয়ত কেউ কেউ মোটিভেটেড হতে পারে। এজন্য আমি পূজার একেবারে সাবেকি ডিজাইনের অফ হোয়াইট শাড়ি উইথ লাল পাড় বেছে নিয়েছি। গয়নায়ও রয়েছে ঠাকুর বাড়ির সাবেকীয়ানা। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লেগেছে গয়নার মোটিয়ে আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যবাহী জামদানির নকশা করা। শাড়ির জন্য ‘সিরিমোনিয়াল অ্যাটায়ার’ আর গয়নার জন্য ‘পস গ্যালারি’কে ধন্যবাদ। আজ মেকাপ করেছে একদম তরুণ একটি ছেলে, ওর নাম নূর।
মাসিদ রণ: এবারের পূজা কেমন কাটছে?
মৌটুসী বিশ্বাস: জন্মসূত্রে সনাতন ধর্মের মানুষ আমি, ফলে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে একটা আনন্দ তো কাজ করেই মনের কোনে। এ সময় ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। বাবা-মায়ের চাকরী সূত্রে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতাম। তাই বেশিরভাগ পুজো কেটেছে চট্টগ্রামের রামকৃষ্ণ মিশনে। তবে বাবা-মায়ের চাকরীজীবন শেষ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর পুজো কাটাই গ্রামের বাড়ি খুলনায়। এবারও খুলনায় এসেছি পুজো করতে। তবে এবার সত্যি বলতে নানা কারণে আমার পূজার আনন্দটা বেশ ফিকে লাগছে।
প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো- এ বছরই প্রথম ‘বাবা’ ছাড়া পূজা কাটাতে হচ্ছে। গত বছরও বাবা পূজার সময় আমার সঙ্গে ছিলেন বা বাবার সঙ্গে আমি ছিলাম। একদম সুস্থ সবল মানুষ ছিলেন, বার্ধক্যজনিত কিছু সাধারণ সমস্যা ছাড়া তেমন কিছু ছিলো না তখন। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি আমাকে একা করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। যেহেতু আমার আর কোন ভাই বোন নেই, তাই বাবা আমার ওপরেই সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি চেষ্টা করেছি সবটা পালন করতে।
মাসিদ রণ: পূজার রঙ ফিকে হওয়ার আর কি কারণ রয়েছে?
মৌটুসী বিশ্বাস: আজ মহাষষ্ঠী, এখনো দেশের মানুষ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে পূজা উদযাপন করছে। এটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু পূজা শুরুর আগেই দেশের বেশকিছু জেলায় প্রতিমা ভাঙার খবরে মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়েছে।
এছাড়া শুনেছি রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় দীর্ঘদিন পূজা মণ্ডপ হলেও এবার নাকি তা করতে দেওয়া হয়নি। এটা তো সংখ্যালঘুদের ওপর এক ধরনের অন্যায়। এসব আমাকে পীড়া দিয়েছে। মনে হয়েছে আমাদের সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য, সেটি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ বিশে^র বুকে অসাম্প্রদায়িক দেশের অনন্য উদাহরণ গড়বে।
মাসিদ রণ: জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘একান্নবর্তী দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু। এরপর ‘ব্যাচেলর’সহ একাধিক সিনেমা, অনেক নাটক ও থিয়েটার চর্চা। কিন্তু আজকাল আপনি একদম পর্দায় নেই। কেন?
মৌটুসী বিশ্বাস: অভিনয়টা গত কয়েক বছর যাবত শুধুই ভালোলাগা থেকে করি। অভিনয় এখন আর আমার পেশা নয়। তবে একটা সময় এটাই ছিলো পেশা। কিন্তু পেশাদার অভিনয়শিল্পী হতে গেলে আমাদের দেশে কাজের মান ধরে রাখা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এখন অভিনয়কে শুধুই পেশা হিসেবে দেখি না। কর্মসূত্রে নতুন পরিচিতি যোগ হয়েছে। বাবার ফার্মিং দেখাশোনা করছি এটা অনেকেই জানেন, সেই সাথে আরো একটি কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় পর করছি গত এক বছর ধরে। তাছাড়া সংসার আছে, সেখানে সময় দেয়ার কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই। সব মিলিয়ে নিজেকে প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যস্ত রাখি। কিন্তু যেনতেন চিত্রনাট্য আসলেই রাজী হয়ে যাই না।
এরমধ্যে বেশকিছু কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু কোনটিই মনঃপুত হয়নি। যে দু-একটা কাজের কথা এগিয়েছে তা ফাইনালি ব্যাটে-বলে মেলেনি বলে করিনি। তবে সামনে একটা ইন্টারেস্টিং কাজ আসছে। এখনই প্রযোজনা সংস্থা থেকে এ নিয়ে কিছু বলতে নিষেধ আছে।