সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে তারকা হয়ে উঠেছেন টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে। জামালউদ্দিনের স্ত্রী অভিনয়শিল্পী রওশন আরা হোসেন। তার ছেলে কানাডায় এবং মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তিনি গত এক দশক ধরে ছেলেমেয়েদের কাছেই থাকতেন। এজন্য তাকে অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি।
কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৮১ বছর বয়সী এই অভিনেতা। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ খবর জানা গেছে।
চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘জামাল আঙ্কেল শেষ সময়টা তার ছেলের কাছে ছিলেন কানাডার ক্যালগেরি শহরে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বেশ কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মাঝে ক্ষণিকের জন্য অবস্থা ভাল হলেও শেষাবধি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।’
স্থানীয় সময় আজ শনিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে ক্যালগেরি শহরেই তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
তিন সপ্তাহের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেলেন অভিনয়শিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন। এর মধ্য দিয়ে অভিনয়শিল্পী রওশন আরা হোসেনের সঙ্গে তার ৫৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটেছে। বেশ কিছুদিন ধরে ভালো নেই রওশন আরা হোসেনও। তিনি পারকিনসনস রোগে ভুগছেন। ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার ক্যালগ্যারি থেকে আজ শনিবার গণমাধ্যমকে বললেন, ‘বাবা মৃত্যুর সময় মা হাসপাতালেই ছিলেন। তার অবস্থাটা এখন এমন, এই মনে থাকে তো এই মনে থাকে না। তাকে নিয়ে তো আমাদের চিন্তার শেষ নেই। বাবা যেমন রোগে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, মা–ও আসলে খুব কষ্ট পাচ্ছেন।’
তাশফিন হোসেন আরও জানালেন, শুক্রবার এখানকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় তার বাবা মারা যান। এই সময়ে তাদের সবার সঙ্গে মা–ও ছিলেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন। কাঁদলেনও কিছুক্ষণ। বুঝতে পেরেছেন, আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
তাশফিন বললেন, ‘ওই যে বললাম, আম্মার অবস্থা এখন এমন, এই কিছু মনে থাকে তো পরক্ষণে মনে থাকে না। তাই হাসপাতালের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে আম্মাকে নিয়ে আমরা বাসায় চলে আসি। এরপর কিছু সময় আমরা ভাইবোন মায়ের সঙ্গে কথা বলি। এরপর রাত নয়টার সময় খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
অভিনয়শিল্পী দম্পতি রওশন আরা হোসেন ও জামালউদ্দিন হোসেন একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। গত ১৫ বছর অভিনয়ে একেবারেই অনিয়মিত ছিলেন তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। মাঝেমধ্যে যখন দেশে আসতেন, টুকটাক অভিনয় করতেন। তবে সাত-আট বছর ধরে একেবারেই অভিনয়ে নেই। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক। মেয়ে তার পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৪৩ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করে জামালউদ্দিন হোসেন। দেশভাগের সময় পরিবারের সবাই চট্টগ্রামে আসেন। ওখানেই বসবাস শুরু করেন। জামালউদ্দিন হোসেনের স্কুলে কেটেছে চট্টগ্রামের সেন্ট ক্ল্যাসিক স্কুলে। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে এইচএসসি শেষ করে তিনি বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি রেলওয়েতে চাকরি শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে অভিনয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
জামাল ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল’ নামে আরেকটি নাট্যদল গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি মঞ্চ নাটকে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালে তিনি একুশে পদক পান।