বন্ধু হারিয়েছেন সালমান খান। উৎসবমুখর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে খুন করা হয় সাবেক মন্ত্রী ও সালমানের বন্ধু বাবা সিদ্দিককে। প্রতিবছর ঈদের অনুষ্ঠানে বাবা সিদ্দিকের নিমন্ত্রণে সাড়া দিতেন সালমান।
বাবা সিদ্দিকের মৃত্যুর পর নতুন করে শঙ্কায় সালমান খানের নিরাপত্তা। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল এরই মধ্যে এই হত্যার দায় শিকার করেছে। কৃষ্ণকায় হরিণ শিকারকে কেন্দ্র করে এই বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সালমানের বিরোধ পুরোনো। সালমানের ঘনিষ্ঠ হওয়াই নাকি কাল হয়েছে বাবা সিদ্দিকের। সেই কারণেই নাকি মরতে হলো তাকে, এমনই দাবি করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
এ ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বাবা সিদ্দিকের শেষকৃত্যেও হয়তো দেখা যাবে না সালমানকে। কারণ, সেই দিনই একের পর এক হুমকি ফোন পান তিনি। তবে কোনো কথা শোনেননি ভাইজান। ‘বিগ বস ১৮’-এর শুটিং মাঝপথে ফেলেই চলে যান বন্ধুকে বিদায় জানাতে। বাইরে অবশ্য মৌনতা বজায় রেখেছিলেন এত দিন। অবশেষে কথা বললেন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে।
সালমান এখন রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর ১৮তম মৌসুম সঞ্চালনা করলেন। এই অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে যা চলছে...খুবই কঠিন সময় চলছে; আমাকে এসব সামলে চলতে হচ্ছে।’
এদিনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির বাইরে আসা তার ঠিক হয়নি। তবে আগে থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকায় তিনি শুটিং বাতিল করতে চাননি। অভিনেতা আরও বলেন, তাকে নিয়ে মা-বাবা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন; এটা তাকে আরও চিন্তায় ফেলেছে। কারণ ওই গ্যাংয়ের মূল টার্গেটই এই বলিউড স্টার। প্রায় ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই আতঙ্কের শেষ কোথায়!
এর সমাধান একটাই- বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের থেকে ক্ষমা পেতে হলে অপরাধী ব্যক্তিকে অবশ্যই রাজস্থানের বিকানিরে অবস্থিত ‘মুক্তিধাম মোকাম’ মন্দিরে যেতে হবে। সেখানে একাগ্রচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ‘অল ইন্ডিয়া বিষ্ণোই সমাজ’-এর সদস্যরা ক্ষমার সিদ্ধান্তে আসলে তবেই হয়তো এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
বিষ্ণোইরা মনে করেন, কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করে গর্হিত অপরাধ করেছেন সালমান খান। যেটি বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের আচারবিধির লঙ্ঘন। মূলত ‘মুক্তিধাম মোকাম’ মন্দির বিষ্ণোইদের সব থেকে পবিত্র ধর্মীয় স্থান। তাদের সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করেন, তবে তার মধ্যে অবশ্যই অনুশোচনাবোধ থাকতে হবে। যা তাকে প্রায়শ্চিত্তের পথে নিয়ে যাবে। কেউ যদি বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনোরকম অপরাধ বা অন্যায় করেন, তাহলে তাকে মুক্তিধাম মোকামে গিয়ে পুরো সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষমা চাওয়া হলে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে যাচাই করেন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
এ দিকে সালমান খানের বাবা সেলিম খানের মন্তব্য, যে ছেলে ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কোনো দিন একটা আরশোলা পর্যন্ত মারতে পারেনি, সে কীভাবে হরিণ মারবে? তাই ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে একই ধরনের বক্তব্য সালমানের প্রাক্তন প্রেমিকা সোমি আলিরও। এ অভিনেত্রী জানিয়েছেন, সালমান এই বিষয়ে তাকে বলেছিলেন, হরিণ হত্যার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। শুধু তাই নয়, সালমান খানের হয়ে বিষ্ণোইদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন সোমি।
ভাইজান সালমানের জীবনের ঝুঁকির সূত্রপাত ১৯৯৮ সালে। সে সময়ে রাজস্থানের কঙ্কানি গ্রামে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার পর থেকেই বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায় সালমান। এর আগে বেশ কয়েকবার খুনের হুমকি দিয়ে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই।
প্রায় মাসখানেক আগে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলি চালানো হয়। বিদেশে সালমান খানের বন্ধু-গায়কের বাড়িতে হামলা করে একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বিষ্ণোই গ্যাং। এ কারণে ওয়াই ক্যাটাগরির পাশাপাশি বর্তমানে সালমানের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। দুবাই থেকে ২ কোটি টাকা খরচ করে বুলেট প্রুফ গাড়িও আনিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস