কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফুসফুসজনিত অসুস্থতা থেকে উদ্ভূত জটিলতার কারণে জাকির হোসেন মারা গেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ছিলেন এবং অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল।
এর আগে, ওস্তাদ জাকির হোসেন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন বলে তাঁর ম্যানেজার নির্মলা বাচানী জানিয়েছিলেন। নির্মলা বাচানী পিটিআইকে জানান, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে। ৩ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে তবলায় তাঁর হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম কনসার্ট। সেই থেকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। তিনি তাঁর বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি আনতে পেরেছেন।
১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি। তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি।
সংগীতে তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত। তবলায় তিনি সংগত করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে। ১৯৯২ সালে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সংগীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীতের খ্যাতিমান সেরা সংগীতশিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসংগীত।
স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেন।