বিরল আইপিএফ রোগে ভুগছিলেন জাকির হুসেন, কেন হয় এই রোগ?

, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-12-16 21:08:17

৭৩ বছর বয়সি জাকির দীর্ঘ দিন ধরেই ফুসফুসের বিরল রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, পঞ্চাশ পেরোনো ধূমপায়ী পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রোববার (১৬ ডিসেম্বর) সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত তবলাবাদক উস্তাদ জ়াকির হুসেন। ৭৩ বছর বয়সি জ়াকির দীর্ঘ দিন ধরেই ফুসফুসের বিরল রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইডিয়োপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস’। সেই সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েই বিগত দু’সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করানো হয়। ভেন্টিলেটরে রাখা হলেও শেষরক্ষা হয়নি।

ইডিয়োপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস কী?

সাধারণত শ্বাস নেওয়ার সময়ে ফুসফুস ফুলে ওঠে, আবার শ্বাস ছাড়ার সময়ে তা চুপসে যায়। ‘ইডিয়োপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস’ বা ‘আইপিএফ’-এ আক্রান্ত হলে শ্বাস নেওয়ার সময়ে ফুসফুস ঠিকমতো ফুলতে পারে না। ফলে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসক আরাত্রিকা দাসের বক্তব্য, “ফুসফুস তো স্পঞ্জের মতো নরম একটি প্রত্যঙ্গ। আইপিএফ হলে ফুসফুস ক্রমশ তার নমনীয়তা হারাতে শুরু করে। সহজ কথায় বললে যা দাঁড়ায় তা হল, ফুসফুস শুকিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, শ্বাসযন্ত্রের ভিতর যে ছোট ছোট বায়ুথলি বা অ্যালভিয়োলাই রয়েছে, সেগুলিও ক্রমশ শক্ত এবং পুরু হতে শুরু করে। ফলে পালমোনারি হাইপারটেনশন বা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেখান থেকে কিন্তু হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।”


কেন হয় এই বিরল রোগ?

আরাত্রিকা বলেন, “আইপিএফ কেন হয়, তা এখনও পর্যন্ত কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তাই রোগটির নামের সঙ্গে ‘ইডিয়োপ্যাথিক’ (অজ্ঞাত কারণ) শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।” তবে এই রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় কারণ হিসাবে পরিবেশ দূষণ, ধূমপান এবং জিনঘটিত ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে।

আইপিএফ-এর লক্ষণগুলি কী কী?

ফুসফুসের সমস্যায় শ্বাসকষ্ট স্বাভাবিক একটি লক্ষণ। তবে আইপিএফ হলে সামান্য হাঁটাচলা, হালকা শরীরচর্চাতেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ছাড়া বছরভর শুকনো কাশি, ক্লান্তির মতো একেবারে সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত জ্বর-সর্দি হলে আইপিএফ কিন্তু বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করতে পারে।

সঠিক চিকিৎসায় কি এই রোগ সারে?

এই রোগের তেমন কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে গেলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করাতে হয়। সে সব বেশ খরচসাপেক্ষ। তা ছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আরাত্রিকা বলেন, “আইপিএফ কিন্তু এক দিনে হয় না। এই রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। এমন ওষুধ বাজারে রয়েছে, যা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করার এই গতি শ্লথ করে দিতে পারে। তাতে কষ্ট খানিকটা লাঘব হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কমবয়সি হলে আমরা ‘লাং এক্সপ্যানশন এক্সসারসাইজ়’ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর