মুক্তি পেল মহালয়া, কিন্তু কেমন হলো?

সিনেমা, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কলকাতা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:38:45

মহালয়া ছবিটি এমন এক ঘটনাকে ঘিরে, যাকে সামাজিক আন্দোলন বললে ভুল বলা হবে না। এটি এমন এক আন্দোলন, যা ঘটেছিল কোনো অস্ত্র ছাড়াই। আর প্রমাণ করে ছেড়েছিল, কলমের শক্তি তলোয়ারের চেয়ে ঢের বেশি। বাঙালির তখন ফেসবুক ছিল না, তবে ছিল বিবেক বোধ। সেই সঙ্গে সাদাকে- সাদা এবং কালোকে- কালো বলার সততা। তখন বাঙালি কাউকে রেয়াত করেনি। এমনকী, তার মহানায়ক উত্তমকুমারকেও না। সেই উত্তমকুমার, যাকে নিয়ে আপামর বাঙালির গর্ব। আজও এই ২০১৯ সালেও তার নামে আবেগে থরথর।

ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে সেই ১৯৭৬ সালের উত্তমকুমাকে। যখন তিনি বাংলার এক ও অদ্বিতীয়। এই ছবিতেও উত্তমকুমারের চরিত্রাভিনেতা যীশু সেনগুপ্তর মুখেও শোনা গিয়েছে এমনই সংলাপ। ছবিটি নির্মিত গত শতকের সাতের দশকের শেষ দিকে ঘটা এক অবিস্মরণীয় কাণ্ডকে কেন্দ্র করে।

সে বছর আকাশবাণী কলকাতা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজ মল্লিককে বাদ দিয়ে একেবারে নতুন করে মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানটিকে সাজিয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে সেই অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জায়গায় আসেন, উত্তমকুমার। কিন্তু বাংলা এই ঘটনাকে গ্রহণ করেনি। অজস্র চিঠি এবং ফোনে জর্জরিত হয়ে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হোন সিদ্ধান্ত বদল করতে। বাধ্য হয়ে ষষ্ঠীর দিন মহালয়ার রেকর্ড বাজাতে হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজ মল্লিককের কণ্ঠের।

তার পরের বছর থেকে আজ পর্যন্ত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ ছাড়া মহালয়ার সকাল শুরু হয় না। আসে না দুর্গাপুজোর আমেজ। এই ঘটনা নিয়ে পরিচালক সৌমিক সেন- মহালয়া ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। প্রতিটি চরিত্রই বাস্তব। রবীন্দ্রনাথ থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, উত্তমকুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক প্রমুখ সকলেই মহালয়া ছবিতে উপস্থিত।

এবার আসা যাক, ছবি প্রসঙ্গে। যীশু সেনগুপ্ত নিজেকে বাঙালির অন্যতম প্রধান হিরো উত্তম হিসেবে কতখানি প্রমাণ করতে পেরেছেন? এক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিলেও উত্তমকুমারের ক্যারিশমার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেননি যীশু। আর গলার স্বরের ব্যাপারেও একই কথা বলার। উত্তমকুমারের কণ্ঠের জাদু ধারণ করা যীশুর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, অভিনেতা যীশু সেনগুপ্ত, উত্তমকুমারের কাছাকাছি না যেতে পারলেও তাঁর পরিমিত অভিব্যক্তি প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রসেনজিৎ আকাশবাণীর -শশী সিনহা দারুণ। যাবতীয় ম্যানারিজম দূরে রেখে, বাটি ছাঁট দেওয়া অবাঙালি সরকারি অফিসার শশী সিনহাকে তিনি জীবন্ত রূপ দিয়েছেন। একই কথা বলা যায় কাঞ্চন মল্লিক, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সপ্তর্ষি রায়, সুদীপা বসু সম্পর্কেও। সবাই খুব ভালো কাজ করেছেন। আলাদা করে যাঁর কথা বলার, তিনি শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায় শুভাশিসকে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। তাঁর থেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে আর কোনও অভিনেতার পক্ষেই সম্ভবত এই চরিত্রটি করা সম্ভব ছিল না। প্রতিটি ফ্রেমেই তিনি নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।

এছাড়া শেষ দৃশ্যে দেখাচ্ছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়িতে আশীর্বাদপ্রার্থী উত্তমকুমার কিংবা পঙ্কজ মল্লিকের শেষ শয্যার পাশে চোখে জল নিয়ে বসে থাকা ক্ষমা চাইতে আসা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এঁরা বিরলে মিলিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মহালয়া থাকবে। এমন একটি ছবি উপহার দেওয়ার জন্য প্রযোজক ও পরিচালককে ধন্যবাদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর