‘যা করি মানুষ যেন মনে রাখে সে চেষ্টাই থাকে'

বিবিধ, বিনোদন

মাকসুদা লিপি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 10:05:15

অভিনেত্রী দিলারা জামান। বয়স ৭৭ ছুঁই ছুঁই। ১৯৬৬ সালে ‘ত্রিধরা’ নাটকের মধ্য দিয়ে পা রাখেন অভিনয় জগতে। এরপর এক এক করে নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়তা পান গুণী এই অভিনেত্রী। প্রবীণ বয়সে এসে এবার দেখালেন ব্যতিক্রমী কিছু। আলোড়ন সৃষ্টি করলেন ‘আইস টুডে’ নামের একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ মডেল কন্যা হয়ে। তিনি প্রমাণ করে দিলেন আস্থা আর মনোবল থাকলে যে কোনো বয়সেই সফল হওয়া যায়।

নতুন এই অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বার্তা২৪.কমকের সঙ্গে কথা হয় অভিনেত্রী দিলারা জামানের। তিনি বলেন, `নতুন অভিজ্ঞতা ভাল লাগছে। সবাই শেয়ার দিচ্ছে। ভাল কিছু করলে সংবাদ মাধ্যমগুলো দু’এক লাইন লিখলেই ভাল লাগে। আমাদের সময় তো এমন ফেসবুক, টুইটার এগুলো ছিল না। আমার ফেসবুক নাই তারপরও অনেকে আমাকে শেয়ার করে বলছে তুমি তো দারুণ দেখিয়ে দিলা, কথাগুলো শুনতে আসলে অনেক ভাল লাগছে।'

প্রবীণ বয়সে ওয়েস্টার্ন লুকে ব্যতক্রমী সাজের ব্যাপারে দিলারা জামান বলেন, `এ লুকে এতো যে আলোড়ন তুলব এটা বুঝিনি। ‍ওরা (ম্যাগাজিন) একদিন আমাকে বলল আপনার এবার অন্যরকম করপোরেট লুকে ছবি তুলব। আমার অতো ধারণা ছিল না যে, করপোরেট মানে একেবারে সাংঘাতিক শুট টাই-টুই পরে ওইরকমভাবে ছবি তুলবে। যাই হোক তারপর ছবিটা তুললাম, এই আর কি।'

ক্যারিয়ারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, `কাজ দিয়ে কথা। আমি যদি অল্প সময়ের জন্যও পর্দায় থাকি সেই সময়টা দিয়ে যেন সবাই আমাকে মনে রাখে এটাই কথা। অনেকক্ষণ পর্দায় থাকলাম কিন্তু মানুষের মনে জায়গা করতে পারলাম না, তাহলে কি হবে? কাজকে সবাই ভালোবাসে সেটা যে চরিত্রেই হোক। তাই যতদিন বাঁচি অভিনয়ের মাধ্যমেই সবার মনে থাকতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, কাজের স্বীকৃতি হচ্ছে বড় কথা। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করি না। সবাই যে আমাকে ভালোবেসে গ্রহণ করছে এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া, ভালোবাসা। আমার নিজের কিছু নেই। কবির কথায়, আমি তোমাদেরই লোক।'

বয়সের কথা অকপটে স্বীকার করে দিলারা জামান বলেন, `ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে, যেকোনো সময় ডাক চলে আসবে তাই বয়স লুকিয়ে আর কি করব। সময় তো ফুরিয়ে এলো। ৭৬ বছর বয়সে যেমন থাকা যায়। কারণ, এই বয়সে শরীরে নানান অসুখ বাসা বাধে। তবে চেষ্টা করি যতটুকু ভাল থাকা যায়। কেউ তো আর অসুখের কথা শুনতে চায় না।'

ব্যক্তি জীবন নিয়ে তিনি বলেন, `একা থাকি, বাজার থেকে শুরু করে সব একাই করতে হয়। মেয়েরা থাকে বিদেশে ওখানে তারা স্যাটেল। মাঝে মাঝে আমি যাই আবার ওরা আসে, এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন।'

এদিকে মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে দুই মাস আগে দেশে আসেন মেয়ে জুবায়রা জামান চৌধুরী। মায়ের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আসলে আম্মাদের সময় এমন সুযোগ ছিল না। ম্যাগাজিনে তাদের চরিত্রগুলো নিয়ে তেমন আলোচনায় আসতো না, এখন যেভাবে আসে। আমার আম্মা তো ‘এইজলেস বিউটি’। এমন মায়ের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।'

মায়ের একা থাকার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের মতো অনেক মেয়ে আছে যাদের স্বামী সন্তান একদিকে আর বাবা-মা থাকে আরেকদিকে। এই দুই যুদ্ধের মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। এটা যে কতটা কষ্টের যারটা সেই বুঝে। মাকে ছাড়া দূরে থাকি সবসময় চিন্তায় থাকতে হয়, কিছু তো করার নেই আর আমেরিকায়ও আমার সন্তানরা থাকে তাদের কাছেও যেতে হয়। সবদিকেই খেয়াল রাখতে হয়। তারপরও সময় পেলেই মায়ের কাছে চলে আসি বা মাকে নিয়ে যাই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর