তার জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায় ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি। শৈশবেই পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। জীবন সংগ্রামের পথে বেছে নেন অভিনয়। প্রমিত ও পূর্ববঙ্গে ভাষাশৈলীতে রূপালি পর্দায় কমেডিয়ান চরিত্রে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় তিনি।
বলছিলাম চিন্ময় রায়ের কথা। ৭৯ বছর বয়সে দক্ষিণ কলকাতার নিজের ফ্ল্যাটে রোববার (১৭ মার্চ) রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি। অনুপস্থিত ছিলেন অভিনয়েও। বছরখানেক আগে নিজের বাসার কাছ থেকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেই সময়ই তার মাথা, হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। তারপর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বার্ধক্যজনিত কারণেও ভুগছিলেন। অবশেষে তিনি চলে গেলেন চিরবিদায়ের পথে।
স্ত্রী, অভিনেত্রী জুঁই বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন চিন্ময় রায়। তদুপরি দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। একাকীত্ব, অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুর আগের কয়েক বছর 'হাসির রাজা' নামে খ্যাত এই কৌতুক অভিনেতার ভালো কাটেনি।
চিন্ময় রায়কে গণ্য করা হয় কলকাতার সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ানদের একজন হিসেবে। নবদ্বীপ হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের উত্তরসূরী বলা হতো তাকে। সমকালের কলকাতার বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় রবি ঘোষ বা অনুপ কুমারের সঙ্গেও তিনি পাল্লা দিয়েছেন সমান তালে।
চিন্ময় রায়ের অভিনয়ের শুরু থিয়েটারের মঞ্চে। 'নান্দীকার'-এর মতো নামকরা গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয়ের দীক্ষা নিয়েছেন তিনি। দলে। অথচ কখনও ভাবেননি অভিনয় জগতে পা রাখবেন। ম্যাট্রিকে থার্ড ডিভিশনে পাশ করায় ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে তার। চাকরির পথ হয় রুদ্ধ। পূর্ববঙ্গের রিফিউজি পরিবারের সন্তান হিসেবে ব্যবসা করার মূলধনও তার ছিল না।
অগত্যা বেছে নেন অভিনয়। মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্রে এসে দেখা পান সৌভাগ্যের। ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। সিনেমা ও টিভি পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করেন তিনি। হয়ে উঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম সারির কমেডিয়ান।
চিম্ময় রায় অভিনিত প্রথম ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’। তপন সিংহের পরিচালনায় প্রথম ছবিতেই দর্শকদের নজর কাড়েন তিনি। তারপর আর থেমে থাকেননি। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘চারমূর্তি’, 'মৌচাক,‘ 'হাটে বাজারে’, ‘ঠগিণী’, ‘ফুলেশ্বরী ’, 'সূবর্ণ গোলক’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ইত্যাদি ছবিতে তিনি মাতিয়েছেন চলচ্চিত্র দর্শকদের।
তবে চিন্ময় রায়ের অন্যতম অভিনয় সাফল্য হলো সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে কাজ করা। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননাও লাভ করেন তিনি।