ফার ফ্রম হোম ব্যাংককের থিয়েটারে ‘স্পাইডারম্যান’

সিনেমা, বিনোদন

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 19:13:03

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: ব্যাংককের চাতুচাকের বিশাল মল সেন্ট্রাল প্লাজা লাওপ্রাও। এটা সড়কের এপাশ-ওপাশ নিয়ে এক এলাহি মার্কেট। এই প্লাজার বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে যেমন একটি পাশ উচ্চবিত্তদের জন্যে, তেমনি নিম্নবিত্তের সাধ্যেরও সমন্বয় রয়েছে।

দুপুরে খাবার শেষে আমি আর কানালাউই ওয়াক্লেহং মলের এই পাশ ওই পাশ ঘুরে চলে এলাম টপ ফ্লোরে। এখানে রয়েছে এসএফএক্স সিনেমার মুভি থিয়েটার হল আর বিস্তর জায়গাজুড়ে ফান জোন। এখানে ফান জোনের একাংশে চলছে পাবজি গেমের টুর্নামেন্ট। ১৪টি টেবিলে ১৪টি গেমার দল অংশ নিয়েছে। আর বড় স্ক্রিনে গেমিং উপভোগ করছেন আমাদের মতো এখানে ঘুরতে আসা লোকেরা। রোববারে ছুটির দিনে এখানে ভিড়টা একটু বেশিই। এখানে কিডস জোনেও রয়েছে গেমিংয়ের সুযোগ। আমরা সেখানেই কিছুটা সময় কাটানোর আগেই কেটে নিয়েছিলাম মার্বেল ফিল্মসের সাম্প্রতিক মুভি, 'স্পাইডারম্যান, ফার ফ্রম হোম' -এর টিকিট। এখানে যেমন হাতে হাতে টিকিট কাটা যায়, তেমনি ভিসা বা ক্রেডিট কার্ড দিয়েও টিকিট কাটতে পারেন দর্শকরা।

মাত্র গত ২ জুলাই দুনিয়াজুড়ে মুক্তি পেয়েছে সুপার হিরো সিরিজের সর্বশেষ ছবি। তাই ভিড় কিছুটা বেশি। সুপার হিরো সিরিজ ছেলে বুড়ে সকলের। তাই সব বয়সী দর্শকই রয়েছে। এখানে ১০টি হলের সাতটিতে চলছে বিদেশি ছবি আর তিনটি হলে দেশীয় সিনেমা।

থাইদের ইংরেজিতে দুর্বলতাকে অনেকে যেমন দুঃখ হিসেবে নিয়েছেন, আবার অনেকে গর্ববোধও করেন। গর্ববোধকারীরা বলে থাকেন, থাইল্যান্ড কখনো পশ্চিমের উপনিবেশ ছিল না। তাই ইংরেজিকে কখনোই আবশ্যক মনে হয়নি। আর এখানে হলিউডের মুভি থেকে শুরু করে পশ্চিমের বা পূর্বের জনপ্রিয় সব লেখকের বই থাই ভাষায় পাওয়া যায়। ফলে বিদেশি ভাষাকে রপ্ত করা হয়নি ভালো করে।

ব্যাংককে এর আগেও সিনেমা দেখেছিলাম- 'গ্রিন বুক'। তবে সেই হলে দর্শকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৫ বা ৬ জন। এবার কিন্তু বড় সংখ্যক দর্শক। হল প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। এখানেও থিয়েটারের ক্যাফে থেকে খাবার কিনতে হলে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এক বোল পপকর্ন আর কোল ড্রিংকসের খরচ পড়ে যাবে ৫০০ টাকার মতো। তবে কেউ যদি বাইরে থেকে খাবার কিনে প্রবেশ করে, তাতেও অপরাধ নেই। আমরা এই ধরনের কোন সুযোগ না নিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থাণীয় সময় বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করলাম থিয়েটারে।

৪টা ২০ মিনিটে থিয়েটারের স্ক্রিনে আলো আসল। কানালাউই কেন এর আগে আমার তাড়াহুড়োতে মুচকি হাসছিল, সেটা বোঝা গেলো এবার। কারন মূল সিনেমা শুরু হতে ঢের বাকি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলবে আসন্ন মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর ট্রেইলার আর বিজ্ঞাপন।

বাংলাদেশে সিনেমার আগে যেমন দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় আর সবাই দাঁড়িয়ে যায়, এখানেও এমনটা রয়েছে। তবে এখানে হচ্ছে রাজা এবং রাজপরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আয়োজন। বর্তমান রাজা মহা ভিজরালংক্রানের শৈশব থেকে শুরু করে, কৈশোর, যৌবনে এয়ারফোর্সের প্রশিক্ষণ থেকে সিংহাসনে বসা পর্যন্ত ঘটনাগুলো রাজ সংগীতের মাধ্যমে দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো। এসময়টা রাজপরিবারের সম্মানে সবাইকে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

প্রায় ৪টা ৫০ মিনিট নাগাদ সিমেনা শুরু হলো। স্পাইডারম্যান চরিত্রটি কিশোর চরিত্র। যেখানে কিশোর বয়সের অ্যাডভেঞ্চার আর রোমান্টিকতার সংমিশ্রন থাকে। স্পাইডারের ম্যানের পিটার পার্কার চরিত্রটিতে টম হল্যান্ডের অভিনয় ছিল সত্যি অসাধারণ। কিশোর বয়সের লজ্জায় লাল হওয়া প্রেমে পড়া মুখটির অসাধারণ ছবি একেছেন তিনি। অ্যাভেঞ্জার্স: অ্যান্ড গেম সিকোয়েলে আয়রন ম্যান, টনির মৃত্যুর পর এখানে সময়ে সময়ে কিছুটা হতাশ দেখা যায় পিটারকে। তবে একই সঙ্গে বারবার শেষ সুপার হিরো হিসেবে এই মনুষ্য জগতকে টিকিয়ে রাখার লড়াই থেকেও পিছপা হতে পারে না। এই ছবিতে টনি না থাকলেও তার বন্ধু সহকারী হ্যাপী হোগান এগিয়ে আসে স্পাইডারম্যানকে রক্ষায়। কারণ মার্ভেল সিরিজের এই অসাধারণ চরিত্রটি প্রেমে পড়েছে স্পাইডারম্যানের আন্টির।

বাংলাদেশের মুভি থিয়েটারগুলোতে যেমন হাত তালি বা অট্ট হাসি থাকে, এখানে তেমনটা না। বরং অনেক হাসি আসলেও সেটা মৃদুর বেশি শব্দ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।

এন্ড গেমের পরে বেশ ক্লান্ত পিটার এই মুভিতে ইউরো ট্রিপে বের হয় স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে। যেখানে গাইড হিসেবে রয়েছে শিক্ষক রোজার হ্যারিংটন। সিনেমায় রোজার হ্যারিংটন চরিত্রে মার্টিন স্টার এবং নেড লিডস চরিত্রে জ্যাকব ব্যটালনের অভিনয়ে দম বন্ধ হওয়া হাসি আসবেই। তবে সেখানে কিন্তু এখানে হো হো করে হাসার উপায় নেই। মানুষ যেন যতোটা চেপে হাসি আটকে রাখা যায়।

এই ছবিতে স্পাইডার ম্যানের লড়াই করতে হয়েছে কোয়েন্টিন বেকের বিরুদ্ধে। যে কিনা ডিজিটাল ইলুইশন তৈরি করে বার্লিন এবং লন্ডনের মতো শহর ধ্বংসের পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। প্রেমিকা মিশেল মারফত যখন পিটার এই ইলুইশন সর্ম্পকে জানতে পারে, ঠিক একই সময়ে মিশেল নিশ্চিত হয় পিটারই যে স্পাইডারম্যান।

লন্ডনে শেষ যুদ্ধে ইলুইশন ভেঙ্গে কোয়েন্টিন বেকের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে স্পাইডারম্যান। তবে একেবারে শেষ চিত্রে, দেখা যায় শহরের টিভি স্ক্রিনগুলোতে ব্রেকিং দেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছে ভালো চরিত্র হিসেবে পরিচিত কোয়েন্টিন মৃত্যুর আগে তার খুনি হিসেবে স্পাইডারম্যানকে দায়ী করে যায় এবং এটাও জানিয়ে দেয় যে- স্পাইডার ম্যানের আসল নাম পিটার পার্কসন।

পরিচালক জন ওয়াটস পুরো ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট উত্তেজনার মধ্যে রাখেন দর্শকদের। স্পাইডারম্যান, ফার ফ্রম হোম দর্শকদের এক মিনিটের জন্যেও হতাশ করেনি। বরং সময়ে সময়ে হাসি এবং অ্যাডভেঞ্চার রেখেছেন।

মার্ভেল সিরিজের ছবির শেষ দৃশ্য দেখতে হলে পুরো ছবির কলা কুশলী সকলের নাম পড়ে বের হয়ে আসতে হয়। কারণ সিনেমার শেষ মিনিটের আগে মাঝখানে তিন মিনিট প্রোডাকশনের বিস্তারিত চলে আসতে থাকে।

এটা বলতেই হবে, ছুটির বিকেল কাটানোর জন্যে এই স্পাইডারম্যান, ফার ফ্রম হোম একটি পারফেক্ট মুভি। যে কারণে ১ হাজার ৬০০ লাখ ডলারের এই ছবি প্রথম ৪ দিনেই বক্স অফিসে আয় করেছে ১ হাজার ৬৪০ লাখ মার্কিন ডলার; যা এই বছরে সেরা আয়ের ছবিগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর