উত্তম কুমারের নায়িকারা: বাস্তবে ও পর্দায়

সিনেমা, বিনোদন

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 16:19:26

বাস্তবে ও রূপালি পর্দায় উত্তম কুমার (জন্ম ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৬-মৃত্যু ২৪ জুলাই, ১৯৮০) ছিলেন নায়িকা বহুল জীবনের অধিকারী। মূলনাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়কে আড়াল করে উত্তম কুমার নামে কলকাতার সিনেমায় তিনি অর্জন করেন মহানায়কের মর্যাদা।

তিন সন্তানের মধ্যে উত্তম কুমার ছিলেন সবার বড়। তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম চপলা দেবী। তার ছোট ভাই তরুণ কুমার একজন শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে উত্তম কুমার গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন, তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায় মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। গৌরব চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমারের একমাত্র নাতি, বর্তমানে কলকাতার টালিগঞ্জ সিনেমা পাড়ার একজন জনপ্রিয় ও ব্যস্ত অভিনেতা।

১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে।

বাস্তবের এই উত্তম কুমারের সঙ্গে মিশে আছেন আরও কয়েক জনের নাম। স্ত্রী গৌরী দেবীর পরই আসে সুপ্রিয়া দেবীর কথা, যিনি বাস্তব ও পর্দায় ছিলেন উত্তম কুমারের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। আরও ছিলেন সুচিত্রা সেন ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।  

পর্দায় সুচিত্রার মত প্রায় সমান ভাবেই উত্তমের সঙ্গে আলোচিত ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। সোনার হরিণ থেকে তাদের জুটির এক সাথে পথচলা শুরু। এরপর তারা একে একে উত্তরায়ণ, কাল তুমি আলেয়া, সন্যাসী রাজা, বন পলাশীর পদাবলী, বাঘ বন্দীর খেলা’র মত জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।

পরবর্তীতে দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়। স্বামী বিশ্বনাথ চৌধুরীর সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলে তিনি ‍উত্তমের সাথে একই ছাদের নিচেই থাকতেন। যদিও, তাদের কখনো বিয়ে হয়নি। বলা বাহুল্য, সিনেমার জগত ছাড়া বাস্তবেও সুপ্রিয়া দেবীর সাথে উত্তম কুমারের এক গভীর সম্পর্ক ছিল। নিজের স্ত্রী এবং বাড়ি ছেড়ে নিজের জীবনের শেষ সতের বছর তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সাথেই কাটিয়েছেন। সুপ্রিয়া দেবীও নিজের স্বামীকে পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে উত্তম কুমারের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।

উত্তম সুচিত্রা এবং উত্তম সুপ্রিয়াকে নিয়ে ক্রেজ তখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। একদম শেষ দিকে উত্তম কুমারের সাথে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়। উত্তম কুমার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সাবিত্রীর বেশ ‍সুনাম করেছেন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ ছিলেন অনেকেই। হাত বাড়ালেই বন্ধু, দুই ভাই, নিশি পদ্ম, মোমের আলো ইত্যাদি সিনেমায় তাদের জুটি প্রশংসিত হয়েছে।

ধন্যি মেয়ে বা মৌচাকের মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রীর সাথে জুটি বেঁধে উত্তম কুমারের কমেডি চরিত্রেও নাম করেন। তার সাথে অবশ্য উত্তম কুমারের কোনো অন্তরঙ্গতার খবর আসেনি।

তবে উত্তম কুমারের জীবনে এক অনিবার্য নাম ছিল সুচিত্রা সেন। কলকাতার বাংলা সিনেমায় এই জুটি জনপ্রিয়তার ইতিহাস রচনা করেছিল।   

সুচিত্রা সেন এবং উত্তম কুমার, দু’জন যেন ছিলেন দু’জনার, 'মেড ফর ইচ আদার'। এই জুটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অমর জুটি নামে খ্যাত। দু’জন মিলে এক সাথে ৩০ টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবকয়টি ছবিই চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল। কিছু ছবি পেয়েছিল কিংবদন্তির মর্যাদা।

হারানো সুর, অগ্নি পরীক্ষা, প্রিয় বান্ধবী, শাপমোচন, ইন্দ্রাণী, সপ্তপদী ইত্যাদি ছবির মাধ্যমে এই জুটি প্রায় ২০ বছর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিলেন। কলকাতার সিনেমাপাড়ায় গুঞ্জন ছিল যে, পর্দার বাইরেও দু’জনের মাধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

উত্তম কুমারের নায়িকারাও বাস্তবে এবং পর্দায় আলোচিত ছিলেন। তাদের ঘিরে পর্দা ও বাস্তব জগতে সৃষ্টি হয়েছিল জনআগ্রহ। কলকাতার দর্শকদের কাছে উত্তর কুমার ও তার নায়িকাদের নিয়ে উৎসাহের শেষ ছিল না।

বেঁচে থাকলে নায়িকা বহুল মহানায়ক উত্তম কুমার স্পর্শ করতেন ৯৩ বছর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর