মিশা-জায়েদের পছন্দে ভোটার, অপছন্দে বাদ!

বিবিধ, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 22:42:31

আগামী ২৫ অক্টোবর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০ মেয়াদের নির্বাচন। এই উপলক্ষে অনেকদিন পর বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে বিএফডিসি।

গতকাল (০৪ অক্টোবর) বর্তমান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান কমিটির শিল্পী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষ হয়েছে হট্টগোল দিয়ে। এরই মধ্যে এই কিমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম করে ভোটার তৈরি ও বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এবারের নির্বাচনের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৪৪৯ জন ভোটারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও গত নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৬২৪ জন।

এক হিসাবে জানা যায়, মিশা-জায়েদ কমিটি বর্তমান মেয়াদে ১৮১ জন শিল্প সমিতির সদস্যের ভোটাধিকার বাতিল করেছেন। আর নতুন করে ভোটার করা হয়েছে ২০ জনকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ১৮১ জনের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে তাদের প্রায় বেশিরভাগ সদস্যকে গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারায় ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। ভোটাধিকার বাতিল করে করা হয়েছে সহযোগী সদস্য। যাতে করে তারা ভোট না দিতে পারেন।

গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া ন্যুনতম পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অবিতর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। কার্যকরী পরিষদের আবেদন গৃহীত হলেই তিনি পূর্ণ সদস্যপদ পাবেন। ভোটাধিকার এবং কার্যকরী পরিষদের যে কোন পদের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আর আবেদনকারীকে অবশ্যই পেশাগতভাবে চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হতে হবে।

এই নিয়মে প্রায় ১৮১ জনের ভোটাধিকার বাতিল করা হলেও এই একই নিয়ম ভেঙ্গে নতুন ভোটার করার অভিযোগ উঠেছে মিশা-জায়েদ খানের কমিটির বিরুদ্ধে।

নতুন ভোটার তালিকায় স্থান পাওয়া শিরিন শিলার মুক্তি পাওয়া সিনেমার সংখ্যা ৪টি, এইচ আর অন্তরের ১টি, সানজু জনের ৪টি, জলির ৩টি, তানহা তাসনিয়ার ৩টি। এমন অনেক নতুন ভোটারের মুক্তি পাওয়া সিনেমার সংখ্যা ৫ এর কম হলেও গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে এবার ভোট দেয়ার অধিকার পাচ্ছেন তারা।

এছাড়া এবারের নির্বাচনে যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে অনেকেই গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারা না মানার পরেও ভোটাধিকার পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় আছেন ডি এ তায়েব, মিষ্টি জান্নাত, আসিফ নূর, বেগম প্রেমা, বিন্দিয়া কবির, আরিয়ান শাহ, শ্রাবণ খান, শ্রাবণ শাহ, জেবা চৌধুরী। এদের কেউই গঠনতন্ত্রের শর্ত মতে ৫টি সিনেমায় কাজ করেননি।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এমন নিয়ম দেখিয়ে ভোটার বাদ, নিয়ম ভেঙ্গে নতুন ভোটার তৈরির কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিশা-জায়েদ কমিটির যাদের পছন্দ বা নিজেদের লোক মনে হয়েছে তাদের গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারার নিয়ম না মেনে এবার ভোটার করা হয়েছে। আর যাদের এই কমিটির জন্য হুমকি মনে হয়েছে তাদের এই একই নিয়মে বাদ দেওয়া হয়েছে। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটি জানিয়েছে শিল্পী সমিতির একাধিক সদস্য।

এদিকে প্রায় চার শ সিনেমায় কাজ করা অভিনেত্রী পারভীন গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘সমিতির কার্যালয়ের সামনের জায়গাটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি আগের কমিটির অমিত হাসানের উদ্যোগে হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন এ জায়গায় গাছ ও ফোয়ারা স্থাপন করেছেন তিনি। কিন্তু চলতি কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের দাবি, কাজটি তাঁর করা। একদিন বলেছিলাম, আপনি না, এটি অমিত ভাই করেছেন। এই কথাই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আমাকে এবার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় বর্তমান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে। মিশা সওদাগর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমাদের পছন্দে বা অপছন্দে এমনটি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা আমাদের একক সিদ্ধান্ত নয়। কার্যকরী পরিষদ ও উপদেষ্টামণ্ডলী মিলে যাচাই–বাছাই করে গতবারের ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। যোগ্য কিছুসংখ্যক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে আমরা শুনেছি। আমারা তো আর ভুলের ঊর্ধ্বে নই।’

অন্যদিকে মিশা-জায়েদ কমিটির সহসভাপতি রিয়াজ ভোটার তালিকা নিয়ে মিশা সওদাগর বক্তব্যের বিরোধিতা করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা দু–একজন মিলে করেছেন। কমিটির সবাই মিলে তালিকাটা দেখতে মিটিং করার কথা বলেছি বারবার। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সে সুযোগ দেননি।’

এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে এবারের নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

২০১৭ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। আসন্ন ২৫ অক্টোবর নির্বাচনেও মিশা-জায়েদ এক হয়ে প্যানেল দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর