বিতর্ক যেনো কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না মাইনুল আহসান নোবেলের। এবার গান চুরির অভিযোগে খবরের শিরোনামে এসেছে জনপ্রিয় এই গায়কের নাম।
ক’দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে ‘দেশ’ শিরোনামের একটি গান শেয়ার করেছিলেন নোবেল। এরপরই তার বিরুদ্ধে গান চুরির অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ‘অ্যাবাউট ডার্ক’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট নাসির উল্লাহ।
নোবেলের বিরুদ্ধে গান চুরির অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘অ্যাবাউট ডার্ক’ ব্যান্ডদলের গিটারিস্ট ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এরফান আহমেদ পূর্ণ বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, ‘২০১৬ সালে ‘অ্যাবাউট ডার্ক’ প্রতিষ্ঠিত হয়। গান প্রকাশের শেষ সময়ে নোবেল আমাদের ব্যান্ডে যোগ দেয়। তবে ব্যান্ডের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আত্মসাৎ এর অভিযোগে তাকে ব্যান্ড থেকে কিছুদিন পরই বের করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি নোবেল যে গানটি নিজের বলে প্রকাশ করেছিলো গানটি ২০০৫ সালে নাসির উল্লাহ ভাইয়ের লেখা। ২০১৬ সালে গানটিতে দুইটি লাইন সংযোজন করে নোবেল। তবে তাকে দল থেকে বের করে দেওয়ার পর আমরা নোবেলের ওই দুই লাইন বাদ দিয়ে গানটি নতুন করে ‘তুমি’ শিরোনামে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশ করেছি। এক বছর আগেও নোবেল এই গানটি নিজের দাবি করে প্রকাশ করেছিল। তবে আলোচনার মুখে সে সময়ও গানটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সে। আর এবার যে গানটি নোবেল প্রকাশ করেছে সেটা আমাদের গান প্রকাশের আগে প্রাকটিস করা গানের রেকর্ড ভার্সনটা।’
গান চুরির বিষয়টি নিয়ে এতোদিন চুপ থাকলেও সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে নোবেল লিখেছেন- প্রসঙ্গ - #ABOUT_DARK (আমি নাকি গানচোর)
প্রথমত, এই বিষয় নিয়ে বিতর্কে যাওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। শুধুমাত্র আমার ভক্তদের সামনে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা আমার দায়িত্ব মনে করি। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি আজ কিছু কথা বলব।
যেহেতু #Underground_Music_Scene আজকের এই নোবেলকে তৈরি করেছে, অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ছোট্ট দুটি ব্যান্ডের সঙ্গে নিয়মিত চর্চা করে করে এবং কিছু সংখ্যক শো করেই আমার আত্মবিশ্বাস এবং কণ্ঠ তৈরি হয়েছে, যা আজ কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
তাই, পুরো #communityটা আমাকে অপছন্দ করলেও তাদের প্রতি আমার একটি বিরাট শ্রদ্ধাবোধ রয়ে গেছে। আমি মনে করি তাদের অনেকেরই #potentials আছে আমার অবস্থানে, এমনকি আরও উঁচু পর্যায়ে পৌঁছানোর। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বলতে পারেন আজকের আমার এই কলম ধরা।
শুরু থেকেই বলি, দুটি ব্যান্ডের গায়ক ছিলাম। একটি #Black_Stain যেখানে আমাকে অডিশনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল এবং দ্বিতীয়টি “#ABOUT_DARK” যার প্রতিষ্ঠাতা আমি নিজে এবং আমার কয়েকজন ভাই-বন্ধু।
কিছুদিন পর #Black_Stain থেকে আমরা একটি এ্যালবাম রিলিজ করি যার নাম “নির্বাসিত স্বাধীনতার পর” এবং অন্যদিকে ”#ABOUT_DARK” নিয়ে আমরা নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে থাকি।
#ABOUT_DARK এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আমি একজন, তাই এই ব্যান্ডের প্রতি দ্বায়িত্ববোধটা একটু বেশিই ছিল সবসময়। অনেক ঝড়ঝাপটা একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। এক পর্যায় গিয়ে একজন গিটারিস্ট নিয়োগ করি যে অন্যান্য ব্যান্ড-মেম্বারদের তুলনায় বয়সে অনেকটাই বড়। তার নাম নাসির উল্লাহ (ছুট্টি)। বয়স আনুমানিক ৪০।
প্র্যাকটিসের দিনগুলোতে ঢাকার ট্রাফিক পাড়ি দিয়ে ডেমরা থেকে শ্যামলী (অন্তত ২০ কি:মি) লোকাল বাস-লেগুনায় ঝুলে আসতে হতো আমাকে। যারা ঢাকাতে থাকেন অথবা এই রুটে যাওয়া আসা করেছেন, তারা বুঝবেন আমি কোন ভোগান্তির কথা বলছি। টানা দুটি বছরের সাধনার ফলাফল #ABOUT_DARK ব্যান্ড এবং আমার লেখা গানটি, যার নাম “#দেশ” এখন “#তুমি” নামকরণ হয়েছে।
এখন আসি জনাব #ছুট্টির বৈশিষ্টে। বয়স বেশি এজন্য সব ব্যান্ড মেম্বাররাই উনার কথা মেনে চলত। এক কথায় উনার চাটুকারিতাই করত। কিন্তু আমি কখনই চাটুকার ছিলাম না, এখনও নই। যে কারণে #ছুট্টি মিয়া আমাকে তখনও পছন্দ করতেন না, এখনও করেন না।
অনেক ইতিহাস-পাতিহাস হলো, এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। সত্যি বলতে “#দেশ” গানটির আংশিক সুর ছুট্টি ভাইয়েরই করা ছিল। কিন্তু গানটির প্রাণদাতা আমি #নোবেল! গানটির যে ভার্সন আমি আমার পেইজে পোস্ট করেছিলাম তার সম্পূর্ণ লিরিক্স আমার লেখা, অনেকাংশে সুর আমারই করা, কম্পোজিশনে রয়েছে আমার ছোয়া, আমি ব্যান্ডে থাকাকালীনই গানটি প্রথম রেকর্ড হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা এই গানের বেড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে আমার রক্ত-ঘাম ঝরানো পরিশ্রম। এই গানের প্রতি কি আমার অধিকার নেই?
আমার ব্যান্ড ছাড়ার প্রসঙ্গে এবার কিছু বলা যাক। “#দেশ” গানটি রিলিজ হবে-হবে, সমস্ত রেকর্ডিং হয়ে গেছে। মিক্স-মাস্টারের কাজ চলছে, এমন সময়ে আমরা #ABC রেডিওতে একটি শো পাই। তখনকার সময়ে কোন নাম পরিচয় ছাড়া একটি ব্যান্ডের জন্য রেডিওতে শো পাওয়া মানে বিরাট ব্যাপার! এবং আমার প্ল্যান ছিল ওখানে কিছু বাংলা-ইংরেজি কভার গান করব এবং শো চলাকালীন আমরা রেডিওতে আমাদের মৌলিক গান “#দেশ” রিলিজ করব। কারণ ওই মুহূর্তে রেডিওর চেয়ে বড় কোন প্লাটফর্ম আমাদের হাতে ছিল না।
কিন্তু বরাবরের মতই সবাই এই প্রস্তাবে রাজি হলেও জনাব ছুট্টি দ্বিমত পোষণ করেন। স্বভাবতই বাকিরা চাটুকারিতা করলেন। এমতাবস্থায় আমি বাধ্য হলাম ওই একনায়কতন্ত্র থেকে সরে আসতে। পরে উনারা নতুন গায়ক নিয়ে নেন।
সবসময় নিজের সিদ্ধান্তকেই সঠিক মনে করার কারণে বাংলাদেশের একজন সম্ভাবনাময় গিটারিস্ট হওয়া সত্বেও এখনও জনাব ছুট্টির প্রতিভা সবার কাছেই অজানা।
ওদের নতুন গায়ক আমার স্বরভঙ্গি নকল করে গানটি গাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং ব্যান্ডটা আমার লেখা লিরিক্সকে লিপ্যন্তর (transliterate) করেছে মাত্র। এত কিছুর পরেও যদি বুঝতাম গানটির প্রতি ওরা কোন সুবিচার করতে পেরেছে, তাহলে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া এই কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে আমি যেতাম না। কিন্তু যেতে বাধ্য হলাম কারণ নিজের সৃষ্টি করা গান নিজের সন্তানের মত। সন্তানের প্রাপ্য পরিচর্যা না পাওয়া কোন বাবার কাছেই গ্রহনযোগ্য নয়।
তাই USA-তে থাকাকালীন ছুট্টি ভাইয়ের সঙ্গে আমি কথা বললাম। নিজের অজান্তে হয়ে যাওয়া সকল ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে, নিজের লেখা গানটির আমার গাওয়া ভার্সন রিলিজ করার অনুমতি চাইলাম। দেখলাম উনি অনুমতি দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে দ্বায়িত্ব দিয়ে দিলাম লিরিক্স ভিডিও বানানোর জন্য।
সমস্ত কাজ প্রায় শেষ, তখন ছুট্টি মিয়ার টনক নড়লো। আমাকে বললো, গানটি তুমি পাবলিশ করতে পারবে না। হয়তো মনে মনে এটাই চলছিল যে একটি গান নোবেলের কণ্ঠে শোনার পর অন্য কারও কণ্ঠে কেনই বা শুনবে?
ভালো কথা, মনে চাপা কষ্ট নিয়ে তখন আর আমি গানটি রিলিজ করলাম না। কিন্তু নিজের অনেক সাধনার ফসল এই গান “#দেশ” তাই মনের তীব্র আকাঙখা সামাল দিতে না পেরে গানটি আপনাদের কাছে পৌঁছানোর একটু চেষ্টা করেছিলাম।
গানের আমার কোন অভাব নেই যে আমার গান চুরি করতে হবে। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক রেকর্ড লেবেল আমাকে তাদের জন্য মৌলিক গান করার অনুরোধ করছেন। তবে সৃষ্টিকর্তা গানের গলার সাথে সাথে আমার মধ্যে আরেকটি ব্যাপারও দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে গানের বিষয়ে আমি প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে। যার কারণে এখনও বাজারে আমার মৌলিক গান আসেনি।
আশা করি আমার ভক্তরা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমাকে নিন্দুকেরা গালিগালাচ করুক এটা আপনাদের একান্তই কাম্য নয়, সবই আমি বুঝি। আমাকে ক্ষমা করবেন এবং খুব শীঘ্রই আসছে আমার, আপনার সবার অপেক্ষিত #সুনন্দা।