ঋত্বিক ঘটকের পিতৃ ভিটা ভেঙ্গে ফেলায় ১২ নির্মাতার প্রতিবাদ

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-03 21:49:03

‘নাগরিক’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ হাতে গুনে মাত্র ৮টি সিনেমার নির্মাণ করেছেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। আর তাতেই বিস্ময় জাগিয়েছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মনে। ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আলোচনা সমালোচনায় তাঁর নাম বহুল উচ্চারিত বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।

বিশ্ববরেণ্য বাঙালি চলচ্চিত্রকার জীবনের শুরুর সময়টা তিনি কাটিয়েছেন পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীতে। অথচ তাঁর স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানকার স্থানীয় সংবাদে এসেছে, সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের পুরোধা ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক বাড়ি ভেঙে ফেলছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এমন ঘটনায় দেশের বরেণ্য ১২ জন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা হলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, তানভীর মোকাম্মেল, মানজারে হাসীন মুরাদ, মোরশেদুল ইসলাম, এনায়েত করিম বাবুল, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, শামীম আক্তার, নূরুল আলম আতিক, এন রাশেদ চৌধুরী, ফওজিয়া খান, আকরাম খান ও রাকিবুল হাসান।

বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ১২ নির্মাতা জানিয়েছেন, ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক বাড়ি রাজশাহীর মিঞা পাড়ার ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার ঘৃণ্য উদ্যোগকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। পরিত্যক্ত ঐ বাড়িতে একটি ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা দেশের চলচ্চিত্র কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু সামরিক শাসন এবং স্বৈর শাসনকালে সে স্থানে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজশাহীর ঋত্বিক চলচ্চিত্র সংসদ কর্মীরা সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূরের কাছে ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে একটি চলচ্চিত্র কেন্দ্র করার জন্য দাবিপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

কিন্তু বিগত ৩ বছরে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। গত শনিবার ২১ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেল স্ট্যান্ড করার অজুহাতে ভবনের একটি অংশ গুড়িয়ে দেয়। আমরা এ হীন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিষয়টি আজ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে, এম খালেদ বাবুর গোচরে এলে তিনি দ্রুত জেলা প্রশাসককে ভাঙ্গার কাজ স্থগিত করতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।নির্দেশমতো ভাঙ্গার কাজ স্থগিত হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি এটা সাময়িক ব্যবস্থা।

বাংলা চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা নির্মাণে ঋত্বিক ঘটক একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি আমাদের এই বাংলাদেশে জন্মেছিলেন এতো আমাদের শ্লাঘার বিষয়।

আমরা অনতি বিলম্বে ঋত্বিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গে একটি ভিন্নমাত্রার চলচ্চিত্র আন্দোলন এই প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে। আর এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আমাদের জোর দাবি হোমিওপ্যাথি কলেজটি ভিন্ন একটি স্থানে স্থানান্তর করে ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হোক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর