‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘কেনো হঠাৎ তুমি এলে’, ‘ঝুম’, ‘প্রেম তুমি’, ‘বুকের বা পাশে’ এমন বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের পেছনের মানুষ সাজিদ সরকার। সংগীত পরিচালক হিসেবে এরই মধ্যে এসেছেন আলোচনায়। প্রায় ১০ বছরের বেশি গান নিয়ে কাজ করা এই তরুণ সংগীত পরিচালক সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন বার্তা২৪.কমের। সাজিদের সঙ্গে আলাপচারিতা চালিয়েছেন কৌশিক।
বার্তা২৪.কম: সবাই গায়ক হতে চায়, আপনি কেন গানের পেছনের মানুষ হতে চাইলেন?
সাজিদ: ছোট থেকেই খুবই গান প্রিয়, অনেক গান শুনতাম আমি। একদিন চিন্তা এলো গানের পেছনের দিকটা নিয়ে, কিভাবে সাউন্ড এবং অন্যান্য জিনিসগুলো সম্পাদন করা হয়? সেই চিন্তার ঘুরপাক থেকে কম্পিউটারে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকলাম। এসব কথা আমার এসএসসি পরীক্ষা পরবর্তী সময়ের ২০০৬ সালের দিকের। এর আগে স্কুলে থাকাকালীন এক বন্ধুর জন্য শখের বসে একটি গান বানিয়েছিলাম। নিজের মতো করে মিউজিক করতাম। এক সময় ফেসবুকের দৌলতে পরিচয় হয় হাবিব ওয়াহিদ ভাইয়ের সাথে। তাকে প্রায় সময় আমার করা মিউজিকের কাজ পাঠাতাম, ফিডব্যাক শুনতাম। ২০০৮ সালের দিকে হাবিব ভাইয়ের সাথে প্রথম দেখা হলে তিনি তার গানের কাজে আমাকে সহযোগী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। সাতপাঁচ না ভেবেই যুক্ত হই।
বার্তা২৪.কম: আলোচনায় কিভাবে?
সাজিদ: সহযোগী হিসেবে কাজ করার পরবর্তীতে এককভাবে কাজ করতে শুরু করি। আমার প্রথম অ্যালবাম ‘শিহরণ’ দিয়ে এককভাবে কাজ করার যাত্রা শুরু করি। এরপর বেশকিছু নাটকের গানে কাজ করেছিলাম। প্রথম গানেই অনেক প্রশংসিত হয়। প্রথমে শিহাব শাহীনের মনফড়িং নাটকে তাহসানের কণ্ঠে ‘মেঘের পরে’ গানটির সুর–সংগীত দিতে শুরুটা। এছাড়া শিহাব শাহীন ভাইয়ের ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমার ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘শূন্য থেকে’ গান দুটি আমাকে আলোচনার প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসে। এছাড়াও তাহসান, মিনার, তানজীব সরোয়ারসহ অন্যান্য গায়কদের বেশ কয়েকটি পরিচিত গানের মিউজিকে কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে আরও ভালোভাবে মেলে ধরার সুযোগ পাই। ‘কেনো হঠাৎ তুমি এলে’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘ঝুম’, ‘প্রেম তুমি’, ‘একটাই তুমি’, ‘বুকের বা পাশে’ ইত্যাদি আলোচিত গানে নিজের অবদান রাখতে পারাটাও অবশ্যই আমার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন।
বার্তা২৪.কম: এত কাজ করেছেন, আপনার করা গান জনপ্রিয় হয়েছে কিন্তু আপনি সেভাবে প্রচারে আসেননি?
সাজিদ: আমি নিজেকে আড়াল রেখে কাজ করবো এরকম কোনো পরিকল্পনা আমার ছিলোনা। আমার বেশিরভাগ সময়ই আমি গানের জগতে ডুবে থাকি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন নতুন সুর সৃষ্টি করতে। দেখা যেতো দিনের প্রায় অর্ধেকের বেশি একটি সময় আমি গান নিয়ে আছি, নতুন নতুন জিনিস রপ্ত করার চেষ্টা করতাম। মানুষকে আমার চেহারা চেনানো কখনোই আমার লক্ষ্য ছিলোনা, আমার লক্ষ্য থাকতো মানুষের কাছে নিজের পরিচয় ছাপিয়ে নিজের কাজ উপহার দেওয়া।
বার্তা২৪.কম: সংগীত পরিচালকের বাইরে আপনি নিজেও তো গান গান?
সাজিদ: অনেকেই গান করার ব্যাপারে আমাকে বলে, কিন্তু এখনো আমি নিজেকে গায়ক পরিচয়ে গড়ে তুলতে প্রস্তুত না। কেউ আমার থেকে ভালো গাইলে আমি অবশ্যই গানটা তাকে দিয়েই করাবো। আপাতত গায়ক পরিচয় গড়ার পরিকল্পনা নেই।
বার্তা২৪.কম: প্রায় ১০ বছরের বেশি গান নিয়ে কাজ করছেন, নিজেকে এই জগতে মেলে ধরতে পেরেছেন বলে মনে হয়?
সাজিদ: আমার সবসময় উদ্দেশ্য ছিলো আমার সবোর্চ্চ দিয়ে কাজ করে যাবো। এই দীর্ঘ সময়ে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি, পেরেছি কিনা সেটা শ্রোতারাই বলুক। এই ১০ বছরের সময়টাই অনেক বেশি গান করতে না পারলেও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিতে পেরেছি এই বিষয়টা আমাকে অত্যন্ত অনুপ্রেরণা জোগায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে।
বার্তা২৪.কম: আগামীর পরিকল্পনা...
সাজিদ: এ পর্যন্ত, এত পথ আসতে একজন সাজিদ সরকারের পেছনের কারিগর আমাকে ভালোবাসা সকল মানুষের সমর্থন। সকলের ভালোবাসা ছাড়া এতদূর কখনো আসা সম্ভব হতো না। আশা করি সবাই পূর্বেই মতোই আমার কাজকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন। আপনাদের ভালোবাসায় আমার এগিয়ে চলা অনুপ্রেরণা। সবাইকে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দিয়ে যেতে চাই। আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গেলে, গান ছাড়া নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে পারিনা।