গফুর হালী‌র তরে

সুরতাল, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 10:17:11

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তীতুল্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী আবদুল গফুর হালী।

তার ৯১ তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট ২০১৮।


উদ্যোগ সুফী মিজান ফাউন্ডেশন এবং পিএইচপি ফ্যামিলির।


চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে পুরো অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আবদুল গফুর হালী একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আনোয়ারুল হক চৌধুরী।

প্রধান বক্তা থাকবেন কক্সবাজার হন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, দৈনিক আজাদীর বার্তা সম্পাদক গীতিকবি একেএম জহুরুল ইসলাম, নোয়াখালীর এডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী, ডেইলি স্টারের ব্যুরো প্রধান তুষার হায়াত এবং জেলা যুগ্ম জজ আলমগীর ফারুকী।


বিশেষ আলোচক থাকবেন দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাব এডিটর ও লোকসংগীত গবেষক নাসির উদ্দিন হায়দার।


সভাপতিত্ব করবেন আবদুল গফুর হালী একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান ও মাইজভান্ডারী মরমী গোষ্ঠীর সভাপতি মো.সিরাজুল মোস্তফা।

দ্বিতীয় পর্বে সংগীতানুষ্ঠানে আবদুল গফুর হালীর গান পরিবেশন করবেন ‘সোনাবন্ধু’খ্যাত খ্যাতিমান শিল্পী সন্দীপন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রাজা হিসাবে পরিচিত সঞ্জিৎ আচার্য্য, কল্যাণী ঘোষ, মোহছেন আউলিয়ার গানের জনপ্রিয় শিল্পী শিমুল শীল, গীতা আচার্য্য, ফেরদৌস হালী, নয়ন শীল প্রমুখ।


এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ সংগীত পরিবেশন করবেন মাইজভান্ডারী মরমী গোষ্ঠীর শিল্পীরা।


প্রসঙ্গত, আবদুল গফুর হালী চাটগাঁইয়া গানের কালজয়ী শিল্পী। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারী গানে নবযুগের স্রষ্টা, মোহছেন আউলিয়ার গানের প্রবর্তক এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাটকের পথিকৃৎ রচয়িতা।

গফুর হালী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, সেলিম নিজামী ও শিমুল শীলের সংগীতগুরু। তিনি আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তী জুটি শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা।

আবদুল গফুর হালী রচিত শ্যাম-শেফালীর গাওয়া ‘বন্ধু আঁর দুয়াদ্দি য আঁর লয় হতা কেয়া ন হঅ, বানু রে জি জি জি, তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু মাছ মারিবল্লায়, ন যাইও ন যাইও আঁরে ফেলাই বাপর বাড়িত ন যাইও’ এসব গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

গফুর হালীর সাড়া জাগানো আঞ্চলিক গানের মধ্যে রয়েছে, ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা, রসিক তেলকাজলা পাঞ্জাবিওয়ালা, মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে, ও শ্যাম রেঙ্গুম ন যাইওরে, ঢোল বাজের আর মাইক বাজের, বাইন দুয়াদ্দি ন আইস্য তুঁই নিশির কালে, তুঁই মুখ ক্যা গইজ্য কালা, চোডকাইল্যা পিরিত আঁর’।

গফুর হালী রচিত মাইজভান্ডারী, মরমী ও মোহছেন আউলিয়ার গানের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘দেখে যারে মাইজভান্ডারে, দুই কূলের সোলতান ভান্ডারী, আমি আমারে বেইচা দিছি মাইজভান্ডারে যাই, দেহ ছাড়ি প্রাণ গেলেরে, চলরে জিয়ারতে আউলিয়ার দরবার’ ইত্যাদি।

আবদুল গফুর হালীর মাইজভান্ডারী গান নিয়ে জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. হান্স হার্দার প্রকাশ করেছেন গবেষণাগ্রন্থ ‘ডার ফেরুখটে গফুর স্প্রিখট’। বিশ্ববরেণ্য সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ড. পিটার বার্টুসি গফুর হালীর গান নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া আমেরিকার এমোরি ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ড. বেঞ্জামিন ক্রাকাউর গফুর হালীর গান নিয়ে গবেষণা করছেন।

সুফী মিজান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আনোয়ারুল হক চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় আবদুল গফুর হালীর ৩০০ গানের স্বরলিপিসহ তিনটি গীতিকাব্য (সুরের বন্ধন, শিকড় ও দিওয়ানে মাইজভান্ডারী) এবং একটি নাটকসংগ্রহ (আবদুল গফুর হালীর চাটগাঁইয়া নাটকসমগ্র) প্রকাশিত হয়েছে।


চট্টগ্রামের কিংবদন্তী শিল্পীদের মধ্যে একমাত্র গফুর হালীর ৩০০ গানের স্বরলিপিসহ গীতিকাব্য প্রকাশিত হয়েছে যা চাটগাঁইয়া গানের হাজার বছরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।


আরও পড়ুনঃ

সজলের খপ্পরে ভাবনা!
জীবনের কথায় কুমার বিশ্বজিৎ
আসিফের ইদ ধামাকা

এ সম্পর্কিত আরও খবর