রাতেও হেজু মিয়ার ভাজা-পোড়া

, ফিচার

হাসান মাহমুদ শাকিল,ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:57:52

লক্ষ্মীপুর থেকে : বাদাম, চাল, মুড়ি, ছনা বুট, মটর বুট ও সিমের বিচি ভাজা লোভনীয় খাবার। এগুলো গ্রাম্য ঐতিহ্যও বহন করে। এসব খবার গ্রামের মানুষের খুব পছন্দের। গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টি মানেই ভাজা-পোড়া। শহুরে মানুষকেও এসব খাবার আকৃষ্ট করে। অনেক সময় ভাজা-পোড়া না থাকলে আড্ডাও জমে না। বন্ধু-বান্ধব, স্কুল-কলেজ ও খেলার মাঠ সব জায়গায় ভাজা-পোড়া বিক্রি করতে ও খেতে দেখা যায়।

শহর-গ্রামে শুধু দিনের বেলায় নয় রাতেও ঝালমুড়ি, বাদাম, ছনা, মটর বুট, সিমের বিচি বিক্রির দোকানে মানুষের ভিড় দেখা যায়। এমন একজন দোকানদার লক্ষ্মীপুরের রহিম মিয়া ওরফে হেজু মিয়া। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার দোকানে পাওয়া যায় ভাজা-পোড়া। হেজু মিয়ার দোকানটা, এটি স্থায়ী নয়। ভ্যানে করে শহরের উত্তর স্টেশন থেকে বাজারের ব্রিজ পর্যন্ত তাকে এসব বিক্রি করতে দেখা যায়।

হেজু মিয়ার ভ্যানে চুলায় সন্ধ্যা থেকে আগুন জ্বলে। তাৎক্ষণিক তিনি মুড়ি ভাজেন। আর সেগুলো দিয়ে ঝালমুড়ি বানান। মচমচে হওয়ায় এই মুড়ি খেতে তার ভ্যানের কাছে ক্রেতারা ভিড় জমান।

প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করে আসছেন। তবে দিনের বেলায় তাকে দেখা যায় না। রাতের বেলায় তিনি ভাজাপোড়া বিক্রি করেন। দিনের চেয়ে রাতে এসব খাবারের ক্রেতা বেশি থাকে বলেন মনে করেন হেজু মিয়া।

তার কথার প্রমাণও মেলে, রাত হলেই দেখা যায় তার ভ্যানের কাছে ভিড় জমান বিভিন্ন বয়সের ক্রেতারা। এছাড়া দিনে তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।

রাস্তা ঘাটে অনেকেই বাদাম ও ডাল ভাজা বিক্রি করেন। তবে তাদেরকে রাতের বেলা তেমন দেখা যায় না। অবসর সময়ে অতিরিক্ত আয়ের জন্য হেজু মিয়া তার বাবার ব্যবসাটি চালু রেখেছেন। যেখান থেকে প্রতিদিনই দু-তিনশ’ টাকা তিনি আয় করতে পারেন।

রহিম মিয়া লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পশ্চিম বাঞ্চানগর এলাকার মাঝি বাড়ির মনছুর আহমেদের ছেলে। তার বয়স ৪৮ বছর। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে পড়াশোনা না করলেও মেয়ে পঞ্চম ও ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

জানা গেছে, এসব ভাজা-পোড়ার ব্যবসা একসময় হেজু মিয়ার বাবা মনছুর আহমেদ করতেন। ভ্যান গাড়িটিও তার বাবার ছিল।  তিনি ২০ গ্রাম বাদাম ৫ টাকা, মটর বুট ২৫ গ্রাম ৫ টাকা, ছনা বুট ২০ গ্রাম ৫ টাকা ও সিমের বিচি ২৫ গ্রাম ১০ টাকা ধরে বিক্রি করেন। এসব তিনি কেজি ধরেও বিক্রি করেন। তবে মুড়ি কেজি ধরে বিক্রি করা হয় না। ঝাল মুড়ি বানিয়ে ১০ টাকা ধরে বিক্রি করেন তিনি।

মধ্যরাতে শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে হেজু মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি বলেন, বাবার ব্যবসাকে পার্টটাইম কাজ হিসেবে নিয়েছি। ভালো লাগলে করি, না নাগলে মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখি। ভ্যান নিয়ে বের হলে ৭-৮শ টাকার ভাজা বিক্রি করা যায়। এতে আমার ২-৩ শ’ টাকা থাকে।

তিনি আরো জানান, দিনে রায়পুর ট্রান্সপোর্ট এন্ড সার্ভিসেস নামে একটি ট্রান্সপোর্টের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি এ ব্যবসাটি করে আসছেন। এরআগে তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এ ব্যবসায় প্রায় ৫-৬শ’ টাকা তার দৈনিক উপার্জন হয়। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর