ভেসে এসেছে মহালয়ার শব্দাসুর, তবে দুর্গার আসতে কিছুটা দেরী

, ফিচার

রাজীব নন্দী | 2023-08-25 15:59:50

‘জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী...’ এই ছিলো প্রতিবারের মতো এবছরের পহেলা আশ্বিনের প্রভাত। কিন্তু করোনাকালে বদলে যাওয়া পৃথিবীর বুকে আশ্বিনের এই শারদপ্রাতে ‘আপাতত’ জাগছে না দেবী। এবছর দেবীর কিছুটা মান-অভিমান। ভালোবাসার মর্ত্যবাসীর উপর হয়তো কিছুটা রাগও। আশ্বিনের শারদপ্রাতে বাপের বাড়ি আসতে কিছুটা টানাপড়েন বা দরকষাকষি চলছে ক্ষেপা-ভোলানাথ স্বামী মহাদেবের সাথে। কিন্তু প্রশ্ন, বিলম্ব কেন দেবীর?

আজ ১৭ই সেপ্টেম্বর, শুভ মহালয়া। প্রতিবছর মহালয়া মানেই পূজার আমেজ। অথচ এবছর মহালয়ার পরও দীর্ঘ ৩৫ দিনের অপেক্ষার ফাঁদে পড়লো বাঙালি। করোনার প্রকোপে বদলে যাওয়া পৃথিবীতে কাকতালীয়ভাবে উমাও যেন বাপের বাড়ি আসতে গড়িমসি করছে! কারণ, মহালয়া আজ হলেও এবছর পূজা দেরিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উত্তরটা লুকিয়ে আছে পঞ্জিকার পাতায়। যে মাসে দুটি অমাবস্যা পড়ে সেই মাসকেই বলা হয় ‘মল মাস’। মল মাসে কোন শাস্ত্রাচার বা শুভ কাজ হয় না। তাই এবছর দুর্গা পূজায় বিলম্ব। পঞ্জিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, এবছর মহালয়ার ৩৫ দিন পর শুরু পূজার। অর্থাৎ মহাপঞ্চমী হবে ২২ অক্টোবর। এরকম পঞ্জিকার মারপ্যাঁচে পড়ে উমার বাপের বাড়ি আসা বিলম্ব হয়েছিলো ১৯৮২ এবং ২০০১ সালেও।  

পিতৃপক্ষের অবসানে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। মহালয়ার এই দিনে কারিগরদের প্রতিমা বানানো শেষ হয়ে যায়। অথচ প্রতিমায় রঙের পোঁচ পড়েনি, এখনও চলছে খড় বাঁধার কাজ। করোনা আতঙ্কে কাটিয়ে কিছুটা থিতু হচ্ছে চারপাশ। বিশ্বাসীদের কামনা- মানব জাতিকে করোনামুক্ত করতে মা দুর্গা আসছেন মর্তে। দুর্গাকে বলা হয়- মহিষাসুরমর্দ্দিনী, যিনি মহিষাসুরকে দমন করেছেন। আর সেই পৌরাণিক কাহিনীর ধারাবিবরণীটি প্রতিবেশী ভারতের ‘আকাশবাণী কলকাতা’র জনপ্রিয় বাংলা প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান। ১৯৩২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সেই দরাজ কণ্ঠের ধারা বিবরণী প্রতিবছর মহালয়ার দিন সম্প্রচারিত হয়ে এসেছে। এবছরও ব্যতিক্রম নয়। একে বলা হয়, ভারতের বেতার ইতিহাসে দীর্ঘতমকাল ধরে সম্প্রচারিত একটি স্থায়ী বেতার অনুষ্ঠান। দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে রয়েছে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দুর্গা সপ্তশতী থেকে গৃহীত দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ, বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রুপদী সংগীত এবং পৌরাণিক কাহিনির নাট্যরূপ।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, আজ ১৭ ই সেপ্টেম্বর মহালয়া। ভোর থেকে বিকেল ৪ টা ৩০ পর্যন্ত তর্পণের সময়। দুর্গাপূজা শুরু হবে ২১ অক্টোবর বুধবার থেকে। ২৩ অক্টোবর শুক্রবার, মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। কোভিড সংক্রমণের জেরে সংশয়ে আছে বহু পূজো কমিটি। কম বাজেটে, কম উচ্চতায় এবং জৌলুসবিহীন দুর্গা পূজা আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির সূত্রে জানা গেছে, এবারের দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠানমালা পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে। খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পূজা করার বিষয়েও সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের অনুমতি নিতে হবে। থাকবে না কোন ‘থিম’ বা বিশেষ প্রদর্শনী।

মহালয়া মানেই আকাশে-বাতাসে শরতের আভা। পূজা পূজা আমেজ। ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমোঘ কণ্ঠে শাশ্বত পাঠ শোনা গেছে- ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জি, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা’। কিন্তু না; এবছর এবছর দুর্গার আগমন হবে দোলায়। দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক বা মহামারী! এর আর নতুন কী, পৃথিবীবাসী তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মহামারীর অভিঘাত। তাই পূজা বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার আশঙ্কার কথা বলছে পঞ্জিকা। তাই বলে নিরাশ হতে নেই। কারণ দেবী বিদায় নিবেন গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে, যার অর্থ ‘ফল শুভ’ হয়। ‘ধৈর্য ধরো বৎস’-এতো দেবীরই নির্দেশ। রসিকজন বলছে, করোনা ভ্যাকসিনের মতো কেন দেবী দুর্গার আগমনেও যেন বিলম্ব। যে বিলম্ব অনিবার‌্য, করোনা ভ্যাকসিনের মতো ‘অপেক্ষা’ ছাড়া গতি নেই। তাই শারতপ্রাতে আলোকমঞ্জি বেজে উঠলেও ধরণীর বহিরাকাশে কোভিডের মনখারাপের মেঘমালা!

শুভ মহালয়া!

এ সম্পর্কিত আরও খবর