এ যেন প্রকৃতির ক্যানভাস! সবুজের গালিচায় মিশে আছে বেগুনি রঙের সমাহার। দূর থেকে সেই বেগুনি রঙ দ্রুতই চোখে পড়ে। তখন জাগে বিস্ময়! কেননা, সেখানে সমস্তই সবুজ। অন্য রঙের কোনো বংশ পর্যন্ত নেই। তাহলে সবুজ এলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন তখন স্বভাবতই জাগে মনে!
তবে এটি শুধু রঙ নয়। এক প্রকারের বেগুনি রঙের ধান। আসন্ন অগ্রহায়ণ মাস ঘিরে কৃষকের স্বপ্নকে জড়িয়ে বড় হচ্ছে এই ধানগুলো। চারপাশে সবুজ প্রান্তর। মাঝখানে বেগুনি রঙের ধানক্ষেত। যে কারো প্রথম দর্শনে ধান ভাবতে অবাক লাগবে। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন।
বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো বেগুনি ধান চাষ করা হয়েছে। আশিদ্রোন ইউনিয়নের তিতপুর গ্রামের কৃষক মো. ছালেহ আহমদ এই ধানের চাষি। অনেকেই এই ব্যতিক্রমী ধানের সাথে পরিচিত নন। দেখা বা এই ধান সম্পর্কে জানার সুযোগও হয়নি কখনো।
অপ্রচলিত এই ধান আবাদের ফলে ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। কৃষকসহ নানান দর্শনার্থী প্রায় প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন বেগুনি ধান দেখার জন্য। আশপাশের অনেক মানুষ আসছেন তাদের ধান ক্ষেত দেখতে।
কৃষক মো. ছালেহ আহমদ জানালেন, এই ধান নাকি ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য উপকারী। মৌলভীবাজারে মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মামাতো ভাইকে বেগুনি রংয়ের ধান চাষ করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে এ ধান সংগ্রহ করি। পরে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুকুর রহমানের সহযোগিতায় নিয়ে এই ধান চাষ করেছেন।
তিনি জানান, জমিতে বীজ রোপণের পর সার দেয়াসহ নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করতে হচ্ছে। দ্রুত ফলন দেওয়ায় এই জাতের ধানে রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় না। গাছ শক্ত হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতেও হেলে পড়ার সম্ভাবনা কম। এই ধানে ফলন বেশি পাওয়ার আশা করছি। দেখা যাক কি হয়?
আগামী অগ্রহায়ণে পাকবে এ ধান। তখন কাটা শুরু করবো। যদি ফলন ভালো হয় তবে আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করবেন বলে জানান কৃষক ছালেক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ ধানের নাম ‘পার্পল রাইস’। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়েছিল গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫-১৫৫ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একর প্রতি ফলনও বেশ ভালো। একর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি বলেন, বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশি নয়, এটা আমাদের দেশি জাতের ধান এবং বোরো মৌসুমের জাত। আগে অন্যান্য জেলায় চাষ হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে চাষ হচ্ছে। একজন চাষি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন।
ধানক্ষেতটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন এর ফলন কী রকম হবে, তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।