৪৮ ঘণ্টা পর ফেসবুকে আসলে যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে!

, ফিচার

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপেন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 21:59:20

খুব যে ব্যস্ত ছিলেন নান্টু মিয়া, সেটা নয়। বরং পকেটে টাকা না থাকায় ইন্টারনেটের প্যাকেজ কিনতে পারছিলেন না। এই লকডাউনে বেতন কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তবে বেতন কমলেও গত কয়েক মাস ইন্টারনেটের স্বাভাবিক সরবরাহতে বিঘ্ন ঘটতে দেয়নি তিনি। বরং দুই একবেলা না খেয়েও ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার টাকা জমিয়েছেন।

ইদানিং তো ফেসবুকে ঢুঁ মারলেই আবার ভিডিওতে অনেক সময় দিতে হয়, তাই ডাটাও ফুরিয়ে যায় দ্রুত। তবে ইন্টারনেটের প্যাকেজ কিনতে যেয়ে, খেয়ে না খেয়ে পেটে গ্যাস্ট্রিক-আলসার জুড়িয়েছিলেন। সে কারণে চিকিৎসকের কাছেও ধর্না দিতে হয়েছে। পেট থেকে শুরু করে মাথার টেস্টও দিয়েছে চিকিৎসক। তবে একবার নান্টু ভেবেছিলেন, এসব টেস্ট না করে বরং এই টাকায় এক মাস ইন্টারনেট চালাতে পারবেন, ফেসবুকের দুনিয়ায় চষে বেড়াতে পারবেন!

কিন্তু চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় কে জানি কানে কানে এসে বলে গেলেন, ‘ফেসবুকের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি!’ এটা শুনে পেটের ভেতর একটা মোঁচড় দিয়ে উঠলো। নান্টু ঠিক করলেন, টেস্টগুলো করাবেন। সেদিনই টেস্ট করে পরের দিনই রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে হাজির হলেন।

চিকিৎসক বললেন, 'আর দুদিন পরে আসলেই হয়তো আপনার পেট কেটে ফেলে দিতে হতো!' ভাগ্যিস বিপদের আগে এসেছেন!

‘নান্টু জানতে চাইলেন, ‘ডাক্তার, বাঁচবোতো?’

চিকিৎসকের কাছ থেকে ‘হ্যাঁ’ বোধক উত্তর শুনে চেম্বার থেকে খুশি মনে বের হলেন নান্টু। আর সেই ‘হ্যাঁ’ এর শক্তিতে প্রেসক্রিপশনে লেখা ৪ টি ওষুধের বদলে ২ টি ওষুধ কিনলেন। এবং ১০ দিনের কোর্স থাকলেও ৬ দিনের ওষুধ কিনলেন এবং ওষুধ কেনার বাজেটের টাকা থেকে মোবাইলে ১০ জিবি ইন্টারনেট কিনে নিলেন।

বাসায় ঢুকেই বিছানায় শুয়ে পড়লেন মজার এক ‘ফেসবুক’ জগৎ নিয়ে। কিন্তু ফেসবুকে এসেই কেমন যেন ধাক্কা খেলেন নান্টু। এগুলো কি হচ্ছে! সকলের ছবি পাল্টে গিয়েছে! ফেসবুকে সবাই এ্যাভাটারের গ্রাফিক্স ছবি পোস্ট দিচ্ছে। আর অনেকেই বলতে চাচ্ছেন, নিজেদের ছবি পরিবর্তন না করে তারা সকলের চেয়ে আলাদা রয়েছেন।

দুদিন ফেসবুক জগতের বাইরে থাকলেও এটা বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, এই ধারায় ছবি এখন আপলোড করতে থাকবে সবাই এবং কিছুদিন পর নিশ্চয়ই কোন গণমাধ্যমেরও নিউজ লিংক দেখবেন যে, ‘এইভাবে ছবি পরিবর্তন করার সুযোগ দিয়ে ব্যবহারকারীদের সকল তথ্য উপাত্ত হাতিয়ে নিচ্ছে ফেসবুক! যাই হোক আরো কয়েক ঘণ্টা বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটু নিচে সার্ফ করতেই চলে আসলো, ‘বাবু খাইছো?’হায়! এটা কে কাকে বললো, বুঝতে পারছে না নান্টু! কোন লিংকও পাচ্ছে না! তবে এটা যে ব্যাঙ্গ করে বলা হচ্ছে! সেটা দারুণ বুঝতে পেরেছে নান্টু। সে এবং তার প্রেমিকা একজন আরেকজনকে ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করে প্রায়ই। এই ধরনের আহ্লাদও করে তার কাছে প্রেমিকা জানতে চায়, ‘খেয়েছে কিনা?’ কিন্তু এই ফেসবুকবাসী জানলো কিভাবে! পুরো বিষয়টি মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় নান্টুর। থাক! এটা নিয়ে ভেবে আর কাজ নেই, দ্রুত নিচে সার্ফ করে।

ওমা! সেখানে পেঁয়াজের ঝাঁজ! প্রতিবেশি ভারতকে এক হাত দেখে নেয়া! ইলিশের জন্য হাহাকার! ক্রিকেট ব্যাট হাতে বোরখা পড়া মায়ের ছবি নিয়ে কি তুমুল তর্ক। আবার খিঁচুড়ি নিয়ে কোলাহলতো রয়েছেই! কিছুই বুঝতে পারছে না নান্টু। ৪৮ ঘণ্টা পর ফেসবুকে এসে মনে হচ্ছে, ত্রিশ বছর পর নিজের দেশে ফিরে আসার মতো। চারদিকে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে, উচুঁ উচুঁ দালান উঠেছে, ফ্লাইওভার হয়েছে, কিন্তু সে কোন কিছুরই সাক্ষী নয়!

প্রেমিকাকে ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিলো নান্টু! জিজ্ঞাসা করলো, ‘বাবু খাইছো?’

উত্তর আসলো, ৪৮ ঘণ্টা ফেসবুকে না থাকলে এমনই হয়! ‘বাবু’ ডাকতে লজ্জা লাগে না! ফোন কেটে দিলো প্রেমিকা! ফেসবুককে আবারো নতুন করে আবিষ্কার করতে মন দিলো নান্টু! কি হলো! কেন তাকে লজ্জা পেতে হবে! 

এ সম্পর্কিত আরও খবর