অমিত শাহ: ভারতের 'আধুনিক চাণক্য'

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:43:19

এই মুহূর্তে  দক্ষিণ এশিয়ায় তার চেয়ে কুশলী রাজনীতিবিদ আর একজনও নেই। ভারতে তাকে গণ্য করা হয় 'আধুনিক চাণক্য' হিসেবে। যেখানেই হাত দিয়েছেন, শক্তিতে-কৌশলে ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর দ্বিতীয় শীর্ষ ক্ষমতাবান মানুষ তিনি দিল্লির রাজনীতিক ক্ষমতার বলয়ে।

অমিত অনিলচন্দ্র শাহ। উপমহাদেশের নিরিখে ষাট-সত্তর বছর বয়স না হলে যেখানে রাজনীতির কল্কে পাওয়া যায় না, সেখানে মধ্য-পঞ্চাশ বয়সেই তিনি অবস্থান করছেন খ্যাতির মধ্য-গগনে। অর্জনের অসংখ্য পালকে গৌরবদীপ্ত তার সৌভাগ্য মুকুট।

অমিত শাহ, গুজরাতি বৈশ্য পরিবারের সদস্য, জন্মগ্রহণ করেন ২২ অক্টোবর ১৯৬৪ সালে মুম্বাই শহরে। ব্যবসা তার রক্ত ও বংশ ঐতিহ্যে মিশে আছে। কিন্তু, জৈন-মাড়োয়ারি বাণিজ্য পরম্পরার অমিত শাহ পড়েছেন বিজ্ঞানে। বায়োকেমিস্টির স্মাতক তিনি।  আশ্চর্যজনক ভাবে ব্যবসা ও বিজ্ঞানের বহুদূরের বিষয় রাজনীতি নামক ক্ষেত্রে চলে আসেন তিনি। এবং স্পর্শ করেন সাফল্যের শীর্ষতম শৃঙ্গ।   

দিল্লির মসনদের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র অন্যতম 'মাস্টার মাইন্ড' অমিত শাহের রাজনীতির সূচনা হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক (আরএসএস) ও হিন্দু মহাসভার মাধ্যমে, যারা বিজেপি'র মতামদর্শিক পরিচালক। প্রায়-অবহেলিত ও দক্ষিণপন্থী দলটিকে বিশাল ভারতের অন্যতম প্রধান দলে পরিণত করে ক্ষমতাসীন করতে যে কয়জনের অবদানকে সর্বাগ্রে রাখা হয়, অমিত শাহ তাদের অন্যতম।

টিম মোদির অন্যতম প্রধান একজন রূপে গুজরাতে দলকে ক্ষমতায় আনতে অবদান রয়েছে অমিত শাহের। গুজরাতে মোদির মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তারপর কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদির সঙ্গে জুটি গড়ে সমাসীন হয়েছেন দল ও সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির আসনে। বাজপেয়ী-আদবানী জুটির মতোই ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী বিবেচনা করা হয় মোদি-শাহ জুটিকে।

কেন্দ্র ও রাজ্য রাজনীতিতে একের পর সফলতার জন্য শাহের স্ট্র্যাটেজি ও একশনকে মোক্ষম হাতিয়ার রূপে গণ্য করা হয়, যা দিয়ে এই গুজরাতি রাজনীতিবিদ উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলোতে দলের জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন। আসন্ন ২০২১ সালের নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির লড়াইয়ের মূলনেতৃত্ব দেবেন অমিত শাহ। 

যদিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন, কিন্তু সুস্থ হয়েই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অমিত শাহ। খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মুখর। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) তার জন্মদিনে টুইট শুভেচ্ছাবার্তায় দেশের প্রতি তার কাজ, নিষ্ঠা ও ভূমিকার কথা ফের একবার দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান 'ভারতের অগ্রগতিতে অমিত শাহ যে অবদান রেখেছেন তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।' তিনি আরো বলেন, 'বিজেপিকে শক্তিশালী করে তুলতে অমিত শাহের যে প্রচেষ্টা তা উল্লেখযোগ্য।'

বৃহস্পতিবারই ৫৬ বছরে পা দিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, 'আধুনিক চাণক্য' অমিত শাহ। সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপির সভাপতি পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। শাহের সময়কালেই দেশের বহু রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি'র পদ্ম শিবির। ২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালেও সবচেয়ে বড় বিজয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের মসনদে বসে বিজেপি।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি তার মন্ত্রিসভায় অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেন। তারপর থেকে দলের পাশাপাশি সরকারেরও তিনিই কার্যত দ্বিতীয় শীর্ষতম ক্ষমতাবান ব্যক্তি। মোদির পরই শাহের স্থান। এ অর্জন তার রাজনৈতিক সাফল্যের স্মারক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর