এলিয়েন রয়েছে নতুন মতে, উদ্বেগ ছিল হকিংয়েরও

, ফিচার

শুভ্রনীল সাগর, স্পেশালিস্ট রাইটার, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 12:12:18

২০২০ নানাভাবে আমাদের বিস্মিত-দুঃখিত করেই চলেছে! বছর শেষ হতে এখনও প্রায় দিন পনেরো বাকি। যাওয়ার আগে, শেষ পাতে দইয়েই মতো, এলিয়েন নিয়ে নতুন করে শোরগোল তুলে দিলেন ইসরায়েলের সাবেক স্পেস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের প্রধান হাইম এশেদ। তার বক্তব্য, এলিয়েন রয়েছে এবং এমনকি ‘গ্যালাকটিক ফেডারেশেন’-এও যুক্ত রয়েছে তারা।

বর্তমানে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হাইম বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বহু বছর ধরেই এলিয়েন নিয়ে কাজ করে আসছে। এমনকি মঙ্গলগ্রহে মানুষ ও এলিয়েন প্রতিনিধিদের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারও রয়েছে।

৮৭ বছর বয়সী এ অধ্যাপক ইসরায়েলের হিব্রু সংবাদপত্র ‘ইয়েডিয়ট আহারোনট’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অজানা ওই উড়ন্ত বস্তুরা (সম্ভাব্য এলিয়েন) তাদের বলেছে, তারা যে এইখানে রয়েছে তা প্রকাশ না করতে। মানুষ এখনও এজন্য প্রস্তুত নয়। 

ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নাকি এলিয়েনদের বিষয়ে অবগত এবং প্রায় জনসম্মুখে প্রকাশও করে দিচ্ছিলেন কিন্তু গ্যালাকটিক ফেডারেশন তাকে আটকালে খবর বাইরে আসেনি। এই খবর প্রকাশ না করার মধ্য দিয়ে গ্যালাকটিক ফেডারেশন আসলে গণ হিস্টেরিয়া রুখতে চাচ্ছিল। কারণ, ফেডারেশন বিশ্বাস করে, মানবজাতির বিকশিত হয়ে এমন একটি জায়গায় পৌঁছানো দরকার যেখানে আমরা থাকবো.. মহাকাশ ও মহাকাশযান কী তা আরও ভালোভাবে বুঝবো, যোগ করেন তিনি।

এনবিসি নিউজ অবসরপ্রাপ্ত এই জেনারেলের উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এলিয়েনদের একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, তারা পৃথিবীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারবে।

অধ্যাপক হাইমের কাছে প্রশ্ন ছিল, কেন তিনি এতোদিন পর বিশেষ করে ২০২০ সালের শেষের দিকেই এসব তথ্য জানাচ্ছেন?

এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি এখন যা বলছি তা যদি আরও পাঁচ বছর আগে বলতাম তাহলে আমাকে হাসপাতালে যেতে হতো। আজ তারা ভিন্নভাবে কথা বলছে। আমার হারানোর কিছু নেই। আমি আমার ডিগ্রি ও অ্যাওয়ার্ডগুলো পেয়েছি। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমি সম্মানিত।

গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ বাহু ‘স্পেস ফোর্স’ উন্মুক্ত করেছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও ক্ষতি, দুই দিক দিয়েই মহাশূন্য হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ।

স্পেস ফোর্স মহাশূন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এখতিয়ার দেখভাল করবে। ভূ-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করবে তাদের নিয়ন্ত্রাণাধীন স্যাটেলাইটগুলো।

এলিয়েন নিয়ে সতর্ক করেছিলেন স্টিফেন হকিংও

পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার। খ্যাতিমান জোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশতত্ত্ববিদ স্টিফেন হকিংয়ের অনুমান ছিল, ২৬০০ সাল নাগাদ পৃথিবী পুরোপুরিই মানুষের জন্য বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে উঠবে। এই অনুমানকে সামনে এনে ২০১৭ সালের ২০ জুন মাসে নরওয়ের একটি আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে তাকে প্রশ্ন করা হয়, আমাদের কি উচিত নয় পৃথিবীর গণ্ডি ছেড়ে মহাকাশেও মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা খোঁজা? তার সরাসরি উত্তর ছিল, না।

পৃথিবী নানান দিক থেকে হুমকির মুখে। কাজেই আমার জন্য ইতিবাচক হওয়া কঠিন, হকিং বলেন।

এরও আগে থেকে তিনি এলিয়েনের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। তিনি বলেন, এলিয়েন সভ্যতার সন্ধান ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে মানুষের সাবধান হওয়া উচিত।

বুদ্ধিমান এলিয়েনরা হতে পারে প্রাণহরণকারী লুটেরা। সম্পদের খোঁজ ও তা লুটপাটে মহাজগতজুড়ে বিচরণ করছে। পৃথিবীর মতো গ্রহগুলো দখল করে তারা উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারে বলে তার অনুমান।

কিউরিওসিটি স্ট্রিম নামে একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটের ডকুমেন্টারি ‘স্টিফেন হকিং’স ফেভারিট প্লেসেস’-এ তিনি এলিয়েন নিয়ে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গ্লিজ৮৩২সি (Gliese 832c) নামক একটি গ্রহ এলিয়েনের সম্ভাব্য বাসস্থান হতে পারে অনুমান করে ডকুমেন্টারিতে তিনি বলেন, কোনো একদিন, এরকমই কোনো গ্রহ থেকে আমরা এলিয়েনদের কাছ থেকে সংকেত পেতে পারি।

কিন্তু আমাদের প্রতিউত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত। একটি অত্যাধুনিক সভ্যতার সাক্ষাৎ হবে অনেকটা আদি আমেরিকানদের কলম্বাসের মুখোমুখি হওয়ার মতো। সেটার পরিণতি ভালো হয়নি, যোগ করেন তিনি।       

হকিংয়ের এই উদ্বেগকে আবার অন্য জোতির্বিজ্ঞানীরা ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, মানুষ ১৯০০ সালের পর থেকেই মহাকাশে বিচরণ করছে। গত ১শ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত মানুষ রেডিও ও টিভি সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছে। যদি সেরকম অত্যাধুনিক কোনো এলিয়েন সভ্যতা থেকেই থাকে তাহলে এতোদিন মহাশূন্যে মানুষের অস্তিত্ব অবশ্যই তারা টের পেতো। হকিংয়ের অনুমান ধরে নিলে, হয় তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো অথবা পৃথিবীকে বানাতো তাদের কলোনি।

মত থাকলে দ্বিমত অবশ্যই থাকবে। বিপুলা এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের আমরা কতটুকুই জানি! অনন্ত এ নক্ষত্রবীথির বিচারে পৃথিবী এতো এতোটাই ক্ষুদ্র যে পুরোটাই অপার রহস্যময় শূন্যতা। সেখানে ভিনগ্রহীরা যে নেই, একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার বিজ্ঞান চলবে প্রমাণ সাপেক্ষে। দেখা যাক, কোন পক্ষ কাদের আগে খুঁজে বের করতে পারে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর