যে পাখির শরীরে রঙের বিস্ময়

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 12:40:59

শরীরে যেন বিস্ময়কর রঙের সৌন্দর্য! নানান রঙের মুগ্ধশোভা। প্রকৃতি তাকে যেন সাজিয়েছে আপন রঙের মাধুরী মিশিয়ে। চোখধাঁধানো তার এমন রূপের জন্য তাকে পাখিদের রাজা বললেও হয়তোবা ভুল বলা হবে না। রঙের বৈচিত্র্যের জন্যই এই পাখিটির দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই অপূর্ব পাখিটার নাম ‘কমন গ্রিন ম্যাগপাই’।

সবুজ-নীল-লাল-খয়েরি-সাদা এসব রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণ। তামাটে-খয়েরি রঙের ডানাসহ শরীরের নিচের অংশের সবুজ আবরণটা গাছের সবুজ পাতার সাথে মিশে একাকার। গাছের পাতার আড়ালে চুপটি করে বসে থাকলে তাকে হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া কঠিন। চাঁদি, পিঠ এবং লেজে রয়েছে নীল রঙের উপস্থিতি। মাথার পেছন দিকে রয়েছে একটা ঝুটি। ভালো করে না দেখলে অবশ্য এটি চোখে পড়ার নয়। কালো রঙের ডোরাকাটা অংশটি মোটা হয়ে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চলে গেছে। তাতেই মাথার পেছনের ঝুটিকে কিছুটা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এরা আসলে খানিকটা দুঃসাহসী ধাচের পাখি। অন্য পাখির এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে শিকার কেড়ে নিতে ভীষণ পটু এরা।

পাখিটির রং এমন যে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

এ পাখির বাংলানামকরণ করা হয়েছে সবুজতাউরা কিংবা সোনা থালা। ইংরেজি নাম Common Green Magpie এবং বৈজ্ঞানিক নাম Cissa chinensis। এরা হাঁড়িচাচা (Rufous Treepie) পাখিদের নিকটতম বংশধর বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী। পৃথিবীতে তিন প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে এক প্রজাতির দেখা মেলে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও লেখক ড. মনিরুল খান এই পাখিটি সম্পর্কে বলেন, ‘গ্রিন-ম্যাগপাই ভীষণ সুন্দর একটি পাখি। খুব বেশি দেখা যায় না। তবে একেবারেই যে পাওয়া যায় না তা-ও আবার বলা যাবে না। আমি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানেও একে দেখেছি। তবে খুব কম। সবচেয়ে বেশি এদের দেখা যায় চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এই দিকটাতে। বৃহত্তর সিলেটের বনসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের উত্তরে অর্থাৎ জামালপুর ও শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাওয়া যায়। এরা আগ্রাসী বা জেদি ধরণের পাখি। উচ্চকণ্ঠে ডাকাডাকি ও চ্যাঁচামেচি করে। যেন তার এলাকায় সে একাই রাজত্ব করে চলেছে।’

প্রকৃতিকে তার রঙের সৌন্দর্য দিয়ে ভরিয়ে রাখে। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

তিনি আরো বলেন, গ্রিন ম্যাগপাই আমাদের দেশের বড় আকারের দুর্লভ আবাসিক পাখি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৮ সেমি এবং ওজন ১৩০ গ্রাম। দেহ দীর্ঘ এবং ঠোঁট মোটা। এদের চোখ গাঢ় লাল। পায়ের পাতা ও নখ প্রবাল কীটের মতো লাল। ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা এক। চিরসবুজ বনের নির্জন এলাকায় একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়।

শিকার এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, গাছের ডালে বা পাতার ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে শিকার করে গ্রিন ম্যাগপাই। আমিষজাতীয় খাবার তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। যেমন-ছোট পাখি, পাখির ডিম, সাপ, টিকটিকি, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ প্রভৃতি। এপ্রিল-মে এদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় ঘন বনের পাতার আড়ালে বাসা বানিয়ে ৪ থেকে ৬টি ডিম দেয়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বিচরণ রয়েছে।

এর মৌলিক নাম হলো ‘গ্রিন ম্যাগপাই’। যারা চেনার এই ইংরেজি নামটি পড়েই চিনে নিতে পারবেন। পাখিদের শারীরিক অবয়বের সাথে ইংরেজি নামগুলোই মনে রাখলে তাদের শনাক্ত করতে অনেকটাই সুবিধা হয় বলে জানান প্রফেসর ড. মনিরুল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর