বাংলার জলাশ্রিত পাখিরা

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 12:51:58

প্রকৃতির পরম বন্ধু পাখি। পাখিরাজ্যে অনেক ধরণের পাখির মাঝে জলাশ্রিত বা জলচর পাখিরা প্রকৃতির গুরুত্ব অনেকাংশে বহন করে আছে। যা বলে শেষ করা যায় না। শুধু উপকারই নয়, শোভাবৃদ্ধির অবদানটুকুও নেহাত কম নয় পরম নিরিহ পাখিদের কাজ থেকে।

শুধুমাত্র পাখি দেখেই দেশেই প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে উঠেছেন অনেকেই।

হাওর, বিল বা প্রকৃতিক জলাশয়ে জলচর পাখিদের খাদ্যগ্রহণ বা শিকার তাৎক্ষণিক উপকারটুকু বহন করে। প্রথমেই উল্লেখ করা যায়- শিকার ধরার জন্য তার এগিয়ে যাওয়ার রণকৌশলের কারণে ঢেউ সৃষ্টি করে কেপে ওঠে জলাশয়। তাতে করে কেপে ওঠা জলাশয়ের পাখিতে সরবরাহ হয় অক্সিজেন। যা মাছসহ জলজপ্রাণীদের বেচে থাকতে সাহায্য করে। তাছাড়া জলচর পাখিদের বিষ্ঠা (মল) পানিতে পুষ্টি দান করে থাকে।

 পাতি-মাছরাঙার শিকার ধরার অদেখা দৃশ্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

আমাদের প্রকৃতিতের জলাশ্রিত অনেক পাখির মাঝে সবচেয়ে কমন (সাধারণ) তিনটি পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। পাতি মাছরাঙা (Common Kingfisher), ডাহুক (White-breasted Waterhen) এবং পাতি সরালি (Lesser Whistling Duck)।

গ্রাম বা বিচ্ছিন্ন জনপথে হাটতে হাটতে হঠাৎই আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে পাতি মাছরাঙার (Common Kingfisher)। ছোট পাখি কিন্তু ভীষণ বৈচিত্র্যময়। রঙের শোভায় সে সবাইকে মুগ্ধতা দান করে। ছোট মাছের সন্ধানে নানা জলাশয়ের ধারে ধারে কাটে তার সারাবেলা। তবে মাছ ধরার কৌশলটুকু আরো বেশি মনোমুগ্ধকর।

ক্লান্তিহীন একাগ্র চাহনি তার শিকারের দিকে। সুযোগ বুঝে সঠিক সময়ে ঝাপ দিয়ে পানিতে শিকার ধরতে বেগ পেতে হয় না– শক্ত ও লম্বা ঠোঁটের কারণে। শিকার বুঝতেই পারে না যে সে মৃত্যু নামক দুই ঠোঁটের মাঝখানে চিরবন্দী হয়ে গেছে। শিকার ধরেই গা থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি ফেলে দেওয়ার জন্য ঝাড়া দিয়ে উঠে পাতি মাছরাঙা।

জলজপ্রকৃতিতে আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডাহুক। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

আপন মনে জলাভূমিতে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় ডাহুক (White-breasted Waterhen)। সবুজ প্রকৃতিতে কালো পিঠ ও সাদা গলা রঙের শোভা বৃদ্ধি করে ডাহুক। গ্রামের পথে যেতে যেতে ক্লান্ত কথিকের নীরবতার মাঝে হঠাৎ ভেসে আসে ডাহুকের ডাক। এই ডাকের সাথে পরিচিতি না থাকলে ‍বুঝা মুশকিল এটা ডাহুকের ডাক কি না।

বেদনার কথা হলো- অপচিকিৎসা নাম প্রাচীন এক চিকিৎসা পদ্ধতির ভ্রান্ত প্রয়োগের কারণে নির্বিচারে প্রকৃতির এই ডাহুক পাখিদের মরতে হয়েছে। গ্রামবাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত টাকালোভী কবিরাজের কারণে ডাহুকদের এই চরম পরিণতি। এই প্রথা এখনো চলমান। তবে পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রকাশ্যে এই ডাহুক শিকার অনেকটা কমছে।

আবাসিক-পাখি পাতি-সরালির উড়ন্ত দৃশ্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

আমাদের গৃহপালিত হাসের মতো ৪২ সেন্টিমিটারের এই পাতি-সরালি (Lesser Whistling Duck)। শীতকালে ওরা সারাদেশের হাওর-বাওর থেকে এসে অপেক্ষাকৃত বড় জলাশয়ে জড়ো হয়। তাদের কিচিরমিটির ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে প্রকৃতি। একত্রে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য মনকাড়া অসাধারণ দৃশ্যের জন্ম দেয় বারবার।

তবে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা হলো- শীতকালে অত্যন্ত ভুলভাবে এই জলচর পাখিটিকে ‘অতিথি পাখি’ বা ‘পরিযায়ী পাখি’ হিসেবে বলা হয়ে থাকে ‘পাতি-সরালি’ কে। আসলে এই পাখিটি আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। শীত ছাড়া অন্য সময় এরা বিচ্ছিন্নভাবে দেশের ছোটবড় হাওর-বিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। শীতের ছোট ছোট বিলের পাখি শুকিয়ে গেলে বড় হাওর-বিলে এসে ওরা জড়ো হয়।

সাধারণ মানুষ না জেনে তাদের অতিথি পাখি বলে বারবার ভুল করেন। যা আপনা থেকেই সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর