করোনার থাবায় চীনা নববর্ষ

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট,  বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 06:39:02

চীনা নববর্ষ হলো চন্দ্রবর্ষের সূচনা, যাকে বলে লুনার ইয়ার৷ ঈদ-দুর্গোৎসবের মতোই, এই উৎসবে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকা চীনা মানুষেরা যেতে চায় দেশের বাড়িতে, স্বজনদের কাছে৷ আর বাজি পোড়ানো হয় ভূতপ্রেত তাড়ানোর জন্য৷

কিন্তু এবার করোনার কারণে জানুয়ারির শেষে ও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থের চীনা নববর্ষ সীমিতভাবে পালিত হবে। যে কোটি কোটি মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে অংশ নিতে আসবেন, তাদের সঙ্গরোধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির আওতায় কঠোরভাবে আনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ। 

বিশেষভাবে, বিদেশে কর্মরত শ্রমশক্তির সদস্যরা চীনা নববর্ষ উপলক্ষে দেশে এলে তাদেরকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা হবে। তদুপরি নববর্ষের   আনুষ্ঠানিকতা সীমিত করার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।  

ঐতিহ্যভাবেই চীনা নববর্ষের আমেজে উৎসবমুখর বেইজিং শহরকে দেখলে চেনার উপায় থাকে না। বেইজিং-এর দু'কোটি বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেক দেশ ও গ্রামের বাড়িতে ফিরেন নববর্ষ উপলক্ষ্যে। আরো কয়েক কোটি মানুষ আসেন বিদেশ থেকে। সবাই এবার করোনার থাবায় ভীত, সন্ত্রস্ত। 

ইংরেজি নববর্ষের মতোই সরকারি টিভিতে নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় ‘গালা শো'-এর আয়োজন করা হয়। বিশিষ্ট শিল্পীরা চাইনিজ-ম্যান্ডারিন ভাষায় গান পরিবেশন করেন। লোকজ নৃত্যগীত ছড়িয়ে পড়ে লাখ লাখ দর্শকের মধ্যেও। করোনার জন্য নববর্ষের এই বিশেষ আয়োজনে বিঘ্ন ঘটবে।

চীনা নববর্ষকে সাপের বর্ষও বলা হয়। কিন্তু সাপ বলতে তো শুধু বিষধর সর্প নয়৷ চীনে সাপকে মনে করা হয় জ্ঞান, সমৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়ুর প্রতীক৷ তবুও সাপ ঠিক ড্র্যাগনের মতো অতোটা শুভ কিংবা কল্যাণকর না হলেও উৎসবের সাজসজ্জায় গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায়৷

উৎসবময়তায় মানুষ ড্রাগন, সাপের বেশ ধরে। বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের অবয়বে মুখ-ঢাকা লক্ষ লক্ষ মানুষ চীনের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের কার্নিভ্যালে অংশ নেন। চলে আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর অঢেল পানাহার। চিরাচরিতভাবে উৎযাপিত চীনা নবর্ষের চিরচেনা রূপ বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালে থাকবে অনুপস্থিত।

বিশেষত, বিদেশে ও বড় বড় শহরে অবস্থানরত চীনারা নববর্ষ উপলক্ষে পূর্বপুরুষের আদি ভিটায় গমন করে এবং সেখানেও নানা আয়োজনে অংশ নেয়। করোনাকালে ব্যাপক জনচলাচলের এসেছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।  

চীনা নববর্ষ একদিন নয়, পনের দিনের জমকালো আয়োজন। নতুন বছরের নতুন চাঁদের উদয় থেকে অমাবস্যাতিথির পূর্বপর্যন্ত চলে নববর্ষ।  পুরো দেশ ও জাতি চরম আবেগ ও আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয় নানা আয়োজনে। কিন্তু করোনার থাবায় এবার সেটা কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। 

গত বছর ২০২০ সালে নববর্ষ মোটামুটি নিরুদ্বেগে পালিত হয়েছিল। কারণ, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের উদ্ভব হলেও সেটি পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে নি। কিন্তু ২০২০ সালে সারা বিশ্বের মতো চীনের সর্বত্র করোনার বিস্তার ঘটেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে নববর্ষ আসছে, তাতে করোনার ভীতি রয়েছে। ফলে করোনার থাবায় কয়েক শতাব্দী প্রাচীন চীনা নববর্ষ পালনে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে বিগত বছরে ইংরেজি নববর্ষ, ঈদ, পুজা, ক্রিসমাস ইত্যাদি সীমিত করার পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার বিখ্যাত কার্নিভ্যাল, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সের বিভিন্ন জাতীয় উৎসব বাতিল করা হয়েছে। ভ্যাকসিন এলেও নতুন করে করোনার ঢেউ বিস্তৃত হওয়ায় সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি আবারো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সামনে চলে এসেছে। আর এতেই থমকে গেছে চীনা নববর্ষের আয়োজন।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর