স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ

, ফিচার

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 06:11:35

২৬ মার্চ, ২০২১ সাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সুবর্ণজয়ন্তী। আসন্ন ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণলগ্ন। ইতিহাসের গতিপথ ধরে লাল ও সবুজে আচ্ছাদিত তাবৎ বাংলাদেশে এবং সমগ্র বাঙালি জাতিসত্তা এখন অবস্থান করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে।

৯ মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের কর্মকর্তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের মধ্যে এক বৈঠক হয়। এতে কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বছরের পর বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক অসমতা, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধের ফলে তখনকার শতকরা ৭০ ভাগের বেশি মানুষ বসবাস করতে থাকেন দারিদ্র্যসীমার নিচে, যার ভিত্তিতে উচ্চারিত হয়েছিল কিসিঞ্জারের বিদ্রূপ।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে, বাংলাদেশ যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা যেন শত্রু ও সমালোচকদের প্রতি চপোটাঘাত এবং যোগ্য জবাব। বাংলাদেশের অর্জন হলো উন্নয়নের বিশাল ক্যানভাসে 'স্ক্রিনশট'-এর মতো জ্বলন্ত ও দৃশ্যমান। আগ্রাসিভাবে নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাস ও লিঙ্গ অসমতার মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে অভাবণীয় ও অচিন্তনীয় গতিতে। বর্তমানে, বাংলাদেশের অর্থনীতি উদীয়মান। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে ক্রমশ উপরে উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আশা, অগ্রগতি ও সামনের দিকে এগিয়ে চলা একটি প্রেরণাদীপ্ত নাম।

এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিসরে বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রযাত্রা অতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত। অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অগ্রগামী। উন্নয়নের বিন্যাসে ও মানবিক অর্জনের কাঠামোতে বাংলাদেশের অবস্থান দৃষ্টান্তমূলক ও অনুসরণযোগ্য।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণকে বলা যেতে পারে জাতিসত্তার

আত্মত্যাগ, গৌরব ও অগ্রগতির প্রেরণাস্তম্ভ, যে প্রেরণার চেতনাশিখায় অতল অন্ধকার, শূন্যতা ও হাহাকারের সুবিস্তীর্ণ অতীতকে সম্ভবনার রূপালি রেখায় আর অর্জনের সোনালি ঝলকে ভরপুর করেছে বাংলাদেশের সদাজাগ্রত বাঙালি জনতা। তবে, তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনও বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তার মধ্যে রয়েছে নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি অন্যতম। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার, স্বচ্ছতার ও বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়গুলো হয়ে আছে গুরুত্বর উদ্বেগের কারণ। দুর্নীতি, নির্যাতন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশের সামগ্রিক গতি বার বার বিপন্নতার কবলে আক্রান্ত হয়েছে। তদুপরি ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি, শান্তুিপূর্ণ সহাবস্থানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ইত্যাদি উন্নততর মূল্যবোধ ও বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত পবিত্র রাজনৈতিক মতাদর্শসমূহ প্রায়শ ব্যাহত হয়েছে মহল বিশেষের অপতৎপরতার কারণে।

এমনকি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একাত্তরের রক্তাক্ত রণাঙ্গনের জাতীয় ঐক্য ও মৈত্রীকেও বিভক্তির চোরাবালিতে ঠেলে দিতে উদ্যত হয়েছে পরাজিত অপশক্তি ও জাতির চিহ্নিত শত্রুরা। সামনের বদলে পেছনের দিকে দেশকে পরিচালিত করতে চেয়েছে স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। হত্যা, সন্ত্রাসের রক্তাক্ত পথে গণতান্ত্রিক-উন্নয়নমুখী গতিবেগকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে বার বার ছোবল হেনেছে কুচক্রী মহল।

তথাপি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শান্তি ও অগ্রগতির প্রতি বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা সাময়িকভাবে বিঘ্নিত করলেও ব্যাহত করতে পারেনি অপশক্তির ধারক-বাহকগণ। বরং বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস এই উচ্চকিত-সত্যের সাক্ষী যে, শাঠ্য-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়না। অন্ধকার, অন্যায় ও চক্রান্তরে বিরুদ্ধে বাঙালি চিরদিনই লড়েছে এবং বিজয়ী হয়েছে। জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে লড়াকু বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ এক অপরাজিত দেশের নাম। আর বাঙালি এক অপ্রতিরোধ্য জাতির নাম।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও কুশলী নেতৃত্বে বাংলাদেশে সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে যে, গৌরবে, অর্জনে ও অগ্রগতির প্রেরণায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করবেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর