করোনার দাপটে আবার মুখোশে ঢাকা জীবন!

বিবিধ, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 06:11:43

‘লস এঞ্জেলস রিভিউ অব বুক’ (এলএআরবি) বিশ্বব্যাপী ফিকশান আর নন-ফিকশানের শ্রেষ্ঠতম বইগুলো খুঁজে বের করে। বৈশ্বিক মহামারিকালে সাহিত্যকর্ম অনুসন্ধানের সময়ে তারা প্রাধান্য দিয়েছে মহামারিতে মানব বিপর্যয়ের আখ্যানকে। জার্নাল তাদের লোগো সমেত প্রচ্ছদে মুখোশের ছবি দিয়ে করোনায় আক্রান্ত পৃথিবী ও মানুষের রূঢ়তম বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে।

সাহিত্যের সেই ইমেজ বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবার বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উদ্ভূত করোনা ২০২০ সালের প্রথমার্ধে পুরো পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়। পৃথিবীর মানুষ সামাজিক দূরত্বের নিভৃতিতে চলে যায়। আরোপিত হয় লকডাউন এবং গৃহবন্দিত্ব। মানুষ পরিণত হয় মুখোশে ঢাকা জীবন্ত প্রাণিতে।

করোনার দাপটে সেই মুখোশে ঢাকা জীবন আবার ফিরে এসেছে। বিশ্বের নানা দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউ। রেকর্ড ভেঙে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। নতুন নতুন করোনা রোগীতে উপচে পড়ছে হাসপাতাল। বিপুল রোগীর চাপে তছনছ হয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ব্যবস্থা।

ফ্রান্স ও জার্মানির কোভিড-পরিস্থিতির কারণে গোটা ইউরোপের অতিমারি-সঙ্কট চরমে। ইতিমধ্যেই ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছে জার্মানি। তারপরেও প্রদেশগুলিকে সংক্রমণ রুখতে আরও বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন জার্মান চান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল।

এদিকে, টানা কয়েক সপ্তাহ সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী থাকার পরে আমেরিকাতেও বাড়ছে করোনা। মৃতের হার কমলেও গত সপ্তাহেই দেশে সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ৬১ হাজারের বেশি মানুষ। আগের দু’সপ্তাহের তুলনায় যা ১১ শতাংশ বেশি।

চলতি সপ্তাহ থেকে লকডাউন খানিকটা শিথিল করা হচ্ছে ব্রিটেনে। ধীরে ধীরে বিধি আলগা করে ২১ জুনের মধ্যে পারস্পরিক মেলামেশায় সব রকমের কড়াকড়ি তুলে নিতে চায় ব্রিটেন। যদিও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মনে করেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ রুখতে হবে। আমরা আইনত বাধ্য নিয়ম মানতে। কিন্তু এই মুহূর্তে তা হচ্ছে না।’

ইউরোপে কিছুদিন বিরতি দিয়ে করোনা সংক্রমণের গতি আবার ঊর্ধমুখী। বিরূপ অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে নানা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ইনটেনসিভ কেয়ারের চিকিৎসকেরা দু’সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের ডাক দিয়েছেন। উদ্বেগজনক ভাবে সংক্রমণ বাড়ায় একই আর্জি জানিয়েছে ফ্রান্সের চিকিৎসকরা। ফরাসি সরকার ইতিমধ্যেই প্যারিস-সহ একাধিক বড় শহরে আংশিক লকডাউন জারি করেছে।

প্যারিসের একদল চিকিৎসক সতর্ক করেছেন, খুব শিগগিরই হয়ত শহরের হাসপাতালগুলো উপচে যাবে এবং রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে চিকিৎসা পরিকাঠামোয় ঘাটতি দেখা যাবে। পরিস্থিতি এমনই যে ফের লককাউন জারি হলে অর্থনীতির গতি থমকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন লগ্নিকারীরা। গ্রিস বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও এথেন্স-সহ বেশ কিছু জায়গায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেছে। মে পর্যন্ত স্পেনেও বজায় থাকছে কড়াকড়ি।

ইউরোপ-জুড়ে সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে বলে মার্চ মাসের গোড়াতেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার ইউরোপীয় শাখার প্রধান বলেছিলেন, অতিমারি নিয়ে ‘ক্লান্তি’ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মানার অনীহা আনতে পারে। তার উপরে প্রতিষেধক এসে যাওয়ার স্বস্তিতেও অনেকে বিধি মানতে আগ্রহ দেখাবেন না।

এদিকে, লকডাউন শিথিল করা হয়েছে ব্রিটেনে। ‘গৃহবন্দি দশা’ মেটায় দিনটিকে ‘হ্যাপি মানডে’ বলছে দেশের সংবাদমাধ্যম। এ বার থেকে ছ’জন সদস্যের ছোট দল জমায়েত করতে পারবে বাড়ির বাইরে। তবে সম্ভব হলে এখনও বাড়ি থেকেই কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছে ব্রিটেন সরকার। খুব প্রয়োজন না হলে দেশের বাইরে সফর করাও নিষেধ। নিয়ম না-মেনে বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় ৭ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করেছে বরিস প্রশাসন। ১২ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়া হবে জরুরি নয় এমন দোকানপাটও। রেস্তরাঁ ও পাবের বাইরে বসে পানাহার করার অনুমতিও পাওয়া যাবে।

তবে, সবই হবে যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে। কিন্তু ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের নানা স্থানে আবার শোনা যাচ্ছে করোনা বিস্তারের ভীতিকর পদধ্বনি।

বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনার গতি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় করোনায় সংক্রমিত পাঁচ হাজার ৪২ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে কঠোরভাবে স্বাস্থবিধি মান্য করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

এদিকে ভারতের মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবের মতো পশ্চিমবঙ্গেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি রুখতে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব-সহ দেশের মোট ১২টি রাজ্যকে পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি সেরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। এই আবহে করোনাবিধি, টিকাকরণ-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি মেনে চলার উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষ করে ভোটের মৌসুমে রাজনৈতিক জনসভা থেকে শুরু করে মিছিল বা প্রচারের কাজে জমায়েতের ফলে সংক্রমণ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর