মারজিয়ার গল্প এখন অন্যদের অনুপ্রেরণা

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 06:11:51

নারীর স্বাধীনতা আসলে কী? আসলেই কি নারী স্বাধীন? এমন প্রশ্ন দিয়ে উত্তর শুরু করেছিলেন রাজশাহীর উদ্যোক্তা মারজিয়া পুষ্প- যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার জন্য স্বাধীনতার স্বরূপ কী?

জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে থাকেন সমাজ অনেক এগিয়ে গিয়েছে, নারীদের এখন অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়। নারীরা এখন সব করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি এমন নয়। এখনও সমাজের নির্ধারিত ‘মার্জিত’ পোশাক না পরলে এ নিয়ে নারীকে কথা শুনতে হয়, প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আর চলাফেরায় অবলম্বন করতে হয় সতর্কতা। অথচ নারীকে মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া সমাজেরই দায়িত্ব।’

মারজিয়া পুষ্প, এক সফলতার নাম। শুধু নারীদের জন্যই নয়, বরং সবার জন্য। কীভাবে সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে সফল হওয়া যায়, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন তিনি।

জয়পুরহাটে শৈশব কাটানো মারজিয়া তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। জয়পুরহাট থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। এখান থেকে সফলতার সাথে শেষ করেন উচ্চমাধ্যমিক। এরপরে, উচ্চশিক্ষা অর্জনে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে। প্রথম শ্রেণি নিয়ে সম্পন্ন করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পড়াশোনা চলাকালীনই লক্ষ্য ঠিক করেন ব্যবসায়ী হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই পরিবারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ নিজেই চালাচ্ছিলেন মারজিয়া। করছিলেন কোচিংয়ে শিক্ষকতা ও টিউশনি। তবে, স্বাধীনভাবে নিজের কিছু শুরু করার ভাবনা থেকে এবং খাবার নিয়ে আগ্রহের কারণে মাস্টার্স পড়ার সময়ই শুরু করেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা।

রেস্টুরেন্ট শুরু করলেও গতানুগতিক ধারায় না গিয়ে ভিন্নতা নিয়ে আসার প্রচেষ্টায় নিজের রেস্টুরেন্ট মেন্যুতে রাখেন সি-ফুডের মতো খাবার। একজন পেশাদার শেফ ও অল্প কিছু কর্মী নিয়ে শুরু করেন রেস্টুরেন্ট। আসা শুরু করে অর্ডার। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে মারজিয়ার রেস্তোরাঁ। তার রেস্তোরাঁর কর্মী সংখ্যা এখন দশ, অর্ডারও আসছে আগের চেয়ে বেশি—প্রতিদিন প্রায় ৫০টি।  

এতো গেলো মারজিয়ার সফলতার গল্প। কিন্তু নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কম বাধার সম্মুখীন হননি তিনি। রেস্টুরেন্ট শুরুর পর মেসের নিয়ম মেনে মাগরিবের আগে বাসায় ফিরতে হতো মারজিয়াকে, অন্যথায় জুটতো জরিমানা। নিজে আলাদা বাসা নেয়ার পর এই সমস্যার সমাধান হয়। তবে, গত বছরের জুলাইয়ে বৈশ্বিক মহামারির সময়ে অন্য সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো মারজিয়ার রেস্টুরেন্ট অ্যারো স্পুনকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু অদম্য মারজিয়া থেমে যাননি। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ফুডপ্যান্ডার হাত ধরে।

ফুডপ্যান্ডার রজশাহীর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলে একইসাথে রেস্টুরেন্ট এবং বাসা থেকে খাবার সরবরাহ চালিয়ে যান এই সময় থেকে। এভাবে, করোনাকালে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি চালু করতে সক্ষম হন নিজের একটি গ্রোসারি শপ এবং সামনেই পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করার।

স্বাধীনতার অর্থকে এভাবেই নিজের মধ্যে খুঁজে নেন মারজিয়া- স্বাধীনভাবে নিজের কিছু করতে পারার ক্ষমতাকে। এ ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে, এমনকি নিজের ব্যবসা শুরুর পরও নানা মানুষের নানান কথা শুনতে হয়েছে মারজিয়াকে। কিন্তু দমে যাননি তিনি। নিজের লক্ষ্যপূরণে সব প্রতিকূলতাকে নিজের লক্ষ্য পূরণের অনুপ্রেরণা ও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। এখন মারজিয়া তার মতো অনেকের আইডল। যাদের আস্থা রয়েছে নিজের আত্মবিশ্বাসে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর