জনশূন্য সৈকত। একের পর এক ঢেউ এসে মাথা খুঁটছে পর্যটকহীন বালুকাবেলায়। সাগর ছুঁয়ে ছুটে আসছে শীতল বাতাস। বেজায় তেতে থাকলেও বেয়াড়া বাতাসের সঙ্গে মোটেই কুলিয়ে উঠতে পারছে না মধ্য দুপুরের সূয্যিমামা।
লকডাউনের বিধিনিষেধে কদিন ধরেই পর্যটকহীন কক্সবাজার সৈকত। ঢেউয়ে ভেসে আসা জেলি ফিসগুলো ভেজা বালুতে নিশ্চল। রোদে পুড়ে শুকিয়ে শ্যাওলা হয়ে আছে। ওগুলোর কাছ ঘেঁষে দুলকি চালে পশ্চিমে এগিয়ে যাচ্ছে একটা ঘোড়া। নিঃসঙ্গ সওয়ারির কোনো তাড়া নেই আজ। গত কদিন ধরেই কোনো পর্যটক জোটেনি তার কপালে।
সৈকতে পেতে রাখা চেয়ারগুলো স্তূপ করে রাখা। লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী সবখানেই খাঁ খাঁ শূন্যতা। কোথা থেকে যেন ছুটে এলো আজিজ নামের ছেলেটা। হাতে ক্যামেরা। প্রতিটি ছবির জন্য পাঁচ টাকা করে নেয়।
করোনাকাল হলেও এখনও প্রতিদিন আড়াইশ টাকা ভাড়া গোনে আব্দুল আজিজ। এখন যদি ক্যামেরাটা না চালায় তাহলে আসছে মৌসুমে তাকে আর ক্যামেরা ভাড়া নাও দিতে পারে মালিক। তাই আয় না থাকলেও ক্যামেরার ভাড়া গুণতে হচ্ছে রোজ। তার মতো শপাঁচেক ক্যামেরাওয়ালা প্রতিদিন চষে বেড়ায় কক্সবাজারের সৈকতে। পর্যটকদের ছবি তোলে। সারাদিনের আয় নিয়ে সন্ধ্যেয় ফিরে যায় ঘরে। আজ অবশ্য তাদের সংখ্যাটা হাতে গোনা। গত কদিন কোনো পর্যটক না পেয়ে অধিকাংশ ক্যামেরাওয়ালা আজ আসেই নি সৈকতে।
জাহিদুল ইসলামের গল্পটা অবশ্য ভিন্ন। বয়স দশ/বারোর হ্যাফপ্যান্ট পরা ছেলেটা মূলত খেলা দেখায়। তার খেলা মানে শারীরিক কসরত। বালুর ওপর ডিগবাজি খায়। পা উপরে তুলে হাতে ভর দিয়ে বালুর ওপর হাঁটে। দুহাতের ভরে শূন্যে উঠিয়ে ফেলে শরীরটাকে। খুশি হয়ে যে যা দেয় তাতেই খুশি।
কিন্তু কদিন ধরে খেলা দেখানোর মতো কাউকে পায়নি জাহিদুল। তবুও আশা ছাড়েনি। আজও এসে বসে আছে সৈকত লাগোয়া ঝাউ বনে। তার মতো আরও অনেক সৈকতজীবী ঝাউবনের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে বসেছে।
শূন্য সৈকতের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছগুলোতে কেবল বাতাসের কাঁপন। শাখাগুলো অনবরত নড়ছে। জনশূন্য সৈকত জীবনের গল্প বলছে যেন।
লেখক: ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক