পরিযায়ী দিবসে কৃষি উপকারী ‘এক পরিযায়ী’কে স্মরণ

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-30 05:56:43

আর একদিন পরই পরিযায়ী দিবস। ৮ মে শনিবার বাংলাদেশেসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হবে ‘বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস’ (World Migratory Bird Day-2021)। যে সকল পাখিরা কিছুদিনের জন্য পৃথিবীর অন্যদেশ থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করতে আসে- তাদের পরিযায়ী পাখি বলে। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর বিস্ময়কর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বহু পরিযায়ী পাখিকে অবলীলায় নিয়ে আসে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন হাওর-বিলের ঝোপঝাড়ে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি বাস করে। বিরামহীন হাঁকডাক আর চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করে সকাল আর সন্ধ্যা প্রকৃতিকে মুখরিত করে রাখে তারা।

এ বিশেষ প্রজাতির পাখি ১৯ সেন্টিমিটারের ‘খয়রা লাটোরা’। এর ইংরেজি নাম Brown Shrike এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lanius cristatus। এরা পরিযায়ী পাখি এবং আমাদের দেশে কৃষির ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, খয়রা-লাটোরা সবার বাড়ির আশেপাশেই রয়েছে। যেখানে একটু খোলা মাঠ সেখানে আছে। বিশেষ করে পানি বা জলাশয়ের আশেপাশে। বাইক্কা বিলে গেলেই এই পাখিটি সবচেয়ে বেশি চোখে পাড়বে। এই পাখিটিকে মানুষ সহজে চিনতে পারে।

প্রজাতিটির উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা শীতের আগেই আমাদের দেশে চলে আসে। অক্টোবর থেকেই আসাতে শুরু করে। নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুই এ পাখিটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে। এই পরিযায়ী পাখি আমাদের দেশে আগেভাগেই চলে আসে এবং ফিরে যায়ও দেরি করে। পরিযায়ী হাঁসরা যেমন আমাদের দেশে আসে দেরি করে এবং চলেও যায় তাড়াতাড়ি এরা কিন্তু হাঁসেদের মতো নয়। হাসেরা হয়তো দুই মাস থাকে। খয়রা-লাটোরা আমাদের দেশে ৬ মাস, ৭ মাস প্রায় থাকে। তারপর চলে যায় চীনের একেবারে উত্তরে বা রাশিয়াতে কিংবা সাইরেবরি পর্যন্ত ওরা যায়। সেখানেই ওরা বাসা বাঁধে এবং ছানা তোলে। আবার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসেই বাংলাদেশের দিকে উড়াল দেয়।

ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম এই কয়েকটা দেশেই ওরা বিচরণ করে। এ আবার কিন্তু এই অঞ্চলের বাইরে কোথায় যায় না। পাকিস্তান বা পশ্চিম ভারতে এদের দেখা যায় না বলে জানান ইনাম আল হক।

খয়রা-লাটোরা (স্ত্রী) এর তীক্ষ্ম দৃষ্টি শিকারের দিকে। ছবি: ইনাম আল হক

খয়রা-লাটোরা (স্ত্রী) এর তীক্ষ্ম দৃষ্টি শিকারের দিকে। ছবি: ইনাম আল হক

ওদের খাদ্য তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওদের খাবার হলো, যেসব পোকা আছে ঘাসের মধ্যে ওগুলোই ওরা খায়। সেজন্য ওরা একটা লাঠির উপর বসে থাকে এবং চোখ রাখে মাঠের ঘাসের মধ্যে। ওখানে যেসকল পোকা খুঁজে পায় সেগুলোই দ্রুত উড়ে এসে খেয়ে থাকে। খয়রা-লাটোরাদের রয়েছে ঠোঁট অনেক শক্ত।

অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ইনাম আল হক বলেন, আমরা বাইক্কা বিলের এই প্রজাতির পাখিগুলোকে ধরে ওদের পায়ে অতিক্ষুদ্র রিং যখন পড়িয়েছিলাম তখন দেখেছি ওর ঠোঁট অন্য পাখির তুলনায় অনেক শক্ত! ওকে হাত দিয়ে সাবধানতাবশত যত্ন করে না ধরলে সে খুব জোরে কামড় দিয়ে হাতে রক্ত বের করতে দিতে পারে। ওকে ধরার মাত্রই দেখবেন ও আপনার হাতের চামড়া কেটে ফেলবে। ওর ঘাড়ের পেশিতেও অনেক জোর রয়েছে। ফলে সে জোরে চাপ দিয়ে ঠোঁটগুজে হাত কেটে দিতে পারে।

ওদের শিকার ধরার একটি বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, বড় ঘাসের কোনো বড় পোকা বা টিকটিকিসহ অন্যান্য ছোট্ট সরীসৃপ প্রাণী ধরলে ঠোঁটে করে নিয়ে গাছের কাটার মধ্যে গেঁথে ফেলে। তারপর ছিঁড়ে ছিঁড়ে আয়েশ করে খায় এবং তার ছানাকেও খাওয়ায়। গাছের কাটায় ঝুলিয়ে দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় বলে একে ‘কসাই পাখি’ও বলে। এটা ওরা ওদের প্রজননভূমিতেই বেশি করে থাকে।

শারীরিক গঠনের ভিন্নতা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ছেলে এবং মেয়ে পাখির শারীরিক রঙে একটু পার্থক্য রয়েছে। মেয়ে পাখিটির বগল ও বুকে আঁইশের মতো দাগ থাকে। পালের শেষপ্রান্তে ছোট ছোট দাগ আছে বলে আঁইশের মতো মনে হয়। আর ছেলেটার পেট আর পিঠ হালকা খয়েরি।

খয়রা-লাটোরা কৃষিজমির আশেপাশেই রয়েছে। আমাদের কৃষিজমির পোকামাড়ক দমনে এই পাখিটির বড় একটি ভূমিকা রয়েছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর