মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীরও যে নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, আর তা যে একটি জনসমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, এমন প্রমাণ বিজ্ঞানীরা আগেই পেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের সংস্কৃতি যেমন সময়ের সঙ্গে বদলায়, তেমনটাই কি সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে ঘটে?
সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রমাণ পাওয়া না গেলেও পাখিদের সংস্কৃতি যে প্রয়োজনের সঙ্গে বদলায় তার প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা। ‘কারেন্ট বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এমনই আশ্চর্য এক গবেষণাপত্র।
উল্লেখ্য, প্রাণীবিদ্যার অভিধানে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির অর্থ কিছুটা আলাদা। এখানে সংস্কৃতি বলতে বোঝায় এমন কোনো অভ্যাস বা বিশেষ কৌশল যা একটি নির্দিষ্ট প্রাণী থেকে একটি সমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
যেমন, ১৯২০ সালে ব্রিটেনের একটি গ্রেট টিট পাখিকে দেখা যায়, ক্যানবন্দি দুধের ঢাকনা খোলার এক অদ্ভুত কৌশল আবিষ্কার করেছে পাখিটি। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্রিটেনের সমস্ত গ্রেট টিট পাখিই খাবার সংগ্রহের জন্য একই কৌশলে দুধের ঢাকনা খুলতে শিখে যায়। এই শিক্ষার উৎস যে সেই প্রথম পাখিটি, তাতে সন্দেহ নেই।
তারপর ২০১৫ সালে জানা যায় পৃথিবীর সমস্ত গ্রেট টিট পাখিই এই একই কৌশল শিখে গিয়েছে। শুধুই গ্রেট টিট নয়, অন্য বিভিন্ন পাখি এমনকি ডলফিন বা তিমির মধ্যেও এই ঘটনা দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই শিক্ষা বংশপরম্পরায় বজায় থাকে। তবে প্রয়োজন পড়লে কি তার বিবর্তনও ঘটে? এর উত্তর মিলল সম্প্রতি।
ইউরোপের কয়েকটি গবেষণা সংস্থার মিলিত উদ্যোগে গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় প্রয়োজন অনুযায়ী পাখিরা এই সংস্কৃতি বদলাতেও শিখেছে। আর এক্ষেত্রেও গবেষণার সূত্র সেই গ্রেট টিট পাখি। দুধ সংগ্রহের জন্য তাদের সাধারণ বোতল না দিয়ে বিশেষ গোলকধাঁধা তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। সব ধাঁধা একইরকম নয় অবশ্য। এই বিশেষ প্রজাতির পাখির বুদ্ধির উপর ভরসা আগেই ছিল।
ফলে তারা যে ধাঁধা সমাধান করে খাবারের হদিশ পেয়েছে, তাতে অবাক হননি তাঁরা। কিন্তু দেখা গেল, দ্রুত নিজস্ব গোষ্ঠীর মধ্যে সেই ধাঁধা সমাধানের সূত্রও ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। ফলে একজন সমাধান করতে পারার পর বাকিরা অনায়াসেই লক্ষে পৌঁছে যাচ্ছে। এমনকি নতুন শাবকদের মধ্যেও সেই কৌশল ছড়িয়ে পড়েছে সমানভাবে।
তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একটি জনগোষ্ঠী একাধিক ধাঁধা সমাধান করতে সমস্যায় পড়ছে। যে গোষ্ঠী আগে কোনো ধাঁধা সমাধান করেনি, তারা অতি দ্রুত কৌশল শিখে যাচ্ছে। কিন্তু আবার নতুন ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিলে তারা অনেক সময় পুরনো কৌশল আঁকরে ধরে থাকছে। তবে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও, বিশেষত পাখিদের মধ্যে এই ধরণের বিবর্তন ঘটে কিনা, তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।