পাতাল বাড়িতে থাকেন যারা….

, ফিচার

সেন্ট্রাল ডেস্ক ৩ | 2023-08-22 11:08:46

পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, তবুও নিজের ঘর৷ তাই কষ্ট করে হলেও নিজেদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চান না তিউনিশিয়ার এক অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ তারা থাকেন মাটির নীচে! তিউনিশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ডেজেবেল ডাহার অঞ্চলের মানুষ গত কয়েক শতাব্দী ধরে মাটির নীচে তৈরি ঘরবাড়িতে বাস করছেন৷ দেয়াল আর ছাদ মাটির তৈরি হওয়ায় গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর শীতকালের ঠান্ডা হাওয়া থেকে মুক্তি পান বাড়ির বাসিন্দারা৷ রাজধানী তিউনিস থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মাতমাতা এলাকায় এমন বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়া সেখান থেকে আরেকটু দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলে লিবিয়ার সীমান্তেও এমন বাড়ির দেখা পাওয়া যাবে৷ সত্তরের দশকে স্টার ওয়ার্স মুভির সেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল মাতমাতা এলাকার একটি বাড়ি থেকে তৈরি করা হোটেল৷ সেই থেকে ওই এলাকায় পর্যটকদের আগমন শুরু হয়৷ ফলে স্থানীয়দের আয়ের একটি অন্যতম উৎস হয়ে পর্যটন৷ ২০১১ সালের আরব বসন্ত এবং ২০১৫ সালে তিউনিশিয়ার কয়েকটি পর্যটন স্থানে হামলার কারণে সে দেশে পর্যটক আগমনের সংখ্যা কমে গেছে৷ তার প্রভাব পড়েছে মাতমাতার পর্যটন শিল্পেও৷ সেখানকার বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী তায়েব বলেন, ‘‘আমাদের ঘর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল৷ কিন্তু এখন পর্যটক আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় কিছু আয় করতে পারছি না৷’’ পর্যটন ছাড়াও মাতমাতা এলাকার অধিবাসীদের আয়ের আরেক উৎস হচ্ছে জলপাই চাষ৷ তবে বিভিন্ন কারণে এমন বাড়িতে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে৷ কারণগুলোর মধ্যে আছে, উত্তরাধিকার নিয়ে সমস্যা, এলাকায় খরা, বৃষ্টির কারণে বাড়ি ধসে পড়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি৷ এছাড়া গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাসের আগ্রহের কারণেও গুহার মতো বাড়িঘরে বসবাসের সংখ্যা কমছে৷ পাতাল ঘরে বসবাস অনেকের কাছে কষ্টকর মনে হয়৷ কারণ বিদ্যুৎ নেই, নেই পানির ব্যবস্থাও৷ তাইতো অনেকে ওই অঞ্চলেই নতুন পাকা বাড়ি নির্মাণ করে থাকছেন৷ কিন্তু পাতাল বাড়ির বাসিন্দা সালিহা মোহামেদি তার বাড়ি ছেড়ে যেতে চান না৷ তিনি মাটির ঘরেই থাকতে চান৷ ‘‘বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মানে হবে আমার জীবন আর ঐতিহ্য ছেড়ে যাওয়া,’’ বলেন তিনি৷ ৬০ বছরের মুনজিয়া জানালেন, তিনিও এই বাড়ি থেকে নতুন কোনো বাড়িতে যেতে চান না৷ ‘‘আমরা সবকিছুই কিনতে পারি, কিন্তু মনের শান্তি কিনতে পারি না,’’ এই হলো তার কথা৷ ৩৮ বছরের লতিফা বিন ইয়াহিয়াও তার বাড়ি ছেড়ে যাবেন না৷ ‘‘আমার বাবা মারা গেছে৷ মাও নেই৷ মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে৷ তারা সবাই যার যার জীবন বেছে নিয়েছে৷ এখন আমি যদি চলে যাই তাহলে বাড়িটাও শেষ হয়ে যাবে,’’ বলেন তিনি৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর