সদরঘাট বুড়িগঙ্গা নদী থেকে ঢাকা শহরে প্রবেশ পথে একটি বিরাট ঘাট। সারাদিন লঞ্চের সাইরেন, মানুষের হৈ-হুল্লোড়, কুলিদের দুরন্তপনা, হকারদের বিকিকিনি এটাই সদরঘাটের সাধারণ চিত্র। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে স্বল্প পরিসরে চলছে সদরঘাটের মাঝিদের জীবন বৈঠা।
সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বল্প পরিসরে নৌকা চলাচল করছে। এখন এক নৌকায় নেয়া হচ্ছে ৩-৪ জন, ভাড়া নেয়া হচ্ছে ওয়াইজঘাট থেকে নদীর ওপারে গেলেই জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১০টাকা আর রিজার্ভ হলে ৩০-৪০টাকা। আগে এক নৌকায় ৫জন করে জনপ্রতি ৫টাকা নেয়া হত। আর রিজার্ভ হলে ১৫-২০ টাকা নেয়া হত। তবে দেড়- দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রী পাচ্ছে না মাঝিরা। একজন যাত্রী আসলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কে আগে নৌকায় উঠাবে। যাত্রী কমে যাওয়ায় থমকে গেছে মাঝিদের জীবন।
ওয়াইজঘাট থেকে নদী পার হতে রায়হান মিয়ার নৌকায় উঠি। মন খারাপ রায়হান মিয়ার, আগের তুলনায় কমে গেছে কামাই রুজি। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, " এতদিন তো দুগা ডালভাত আল্লাহ খাওয়াইলে, ভালোই খাইছি। এহনতো বেশি অসুবিধা বাইজ্জা গেছে এই করুনা (করোনা) অবস্থায়। কারে দোষ দিমু? করার নাই কিছু। আল্লাহ যা ইচ্ছা করুক।"
তিনি আরো বলেন, যে পরিস্থিতি আরো বলে এডা এক সপ্তাহ থাকবে। আগে খাইয়া লইয়া আমাগো ৪০০-৫০০ থাকতো, আমরা হারাদিন কাম করতাম। এহন এই তিন চারদিনে যে ভাত খামু হেই পয়সা ও হয় না। দেড়-দুই ঘন্টা এউকগা (একটা) ক্ষ্যাপ হয়।
সদরঘাটে নৌ পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআই শহিদুল বলেন, নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ চোখের আড়াল হলে কয়েকটা চলাচল করে। পুলিশ এবং কোস্টগার্ড সবসময় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নিয়োজিত আছে।
সদরঘাটে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন মোঃ সাগর। লকডাউন আসার আগে প্ল্যাটফর্মে ইনটেক পানির বোতল বিক্রি করতেন কিন্তু লকডাউন আসায় এখন পান সিগারেট বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পান-সিগারেটের ব্যবসা ভালোই চলছে। পেটের দায়ে ব্যবসা পাল্টাতে হলো।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। একপর্যায়ে সংক্রমণ কমে আসলেও, গেল মার্চে তা ফের বাড়তে শুরু করলে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। চারদিকে করোনার ভংকর থাবা থাকলেও সদরঘাটের নিম্ন আয়ের মানুষের পেট মানছেনা ক্ষুধার তাড়না। তাই তারা বেরিয়েছে খাবারের সন্ধানে।