পদ্ম-শাপলা পাতায় মা ডাহুক ও ছানাদের খুনসুটি!

, ফিচার

মানসুরা চামেলী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 20:39:44

মা ডাহুকটি চলছে আগে আগে তার পিছু পিছু কুচকুচে কালো লোমশ ছানাগুলো! কখনও পদ্ম পাতা উপরে দাঁড়িয়ে হাঁটছে কখনও পানিতে মায়ের সঙ্গে সাঁতার কাটছে। আবার মাকে ফাঁকি দিয়ে কচুরিপানার মধ্যে লুকোচুরিও খেলছে দূরন্ত ডাহুক ছানাগুলো। ক্ষণে ক্ষণে মা ডাহুক ‘কোয়াক, কোয়াক’ সুরে ডেকে উঠছে, আর ছানাগুলো মুরগির মতো ‘কক্ কক্’ শব্দ করছে।


‘মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী/ নিদাঘের রৌদ্রতাপে একা সে ডাহুকী/ বিজন তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে/ বনচ্ছায়া- অন্তরালে তরল তিমিরে’; নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই চিত্রের দেখা মিলল রমনা কালিমন্দির সংলগ্ন পদ্ম ও শাপলা ফুল বেষ্টিত লেকের পানিতে। সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় চিরচেনা বিরহী পাখি মা ডাহুক ও তার তিন ছানা।


রমনার এই লেকটা জুড়ে শাপলা ও পদ্ম ফুলের ছড়াছড়ি। সেখানে দিনভর থাকে নানা পাখির আনাগোনা। কানি বক আসছে শিকার খুঁজতে কখনও কুঁড়ো বক তার তৃষ্ণা মেঠাচ্ছে, আবার কখনওবা ডাহুক ও তার ছানা দলবলে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাপলা ও পদ্মর জলে।


শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বার্তা২৪.কম-এর ফটো করেসপন্ডেন্ট মো. হাসানের ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে মা ডাহুক ও তার ছানাদের খুনসুটি।


মা ডাহুকটি ছানাদের মুখে তার চঞ্চু দিয়ে খাবার তুলে দিচ্ছে। আবার ডানা দিয়ে আগলে রাখছে। একটু পর পর ছুটে গিয়ে শিকার ধরে এনে ছানাদের ভাগ করে মুখে তুলে দিচ্ছে। রমনা পার্কের সবুজ প্রকৃতিতে শাপলা ও পদ্ম ফুলের এই লেকে ডাহুকের বিচরণ অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। অনেক দর্শনার্থী মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিচরণ দেখছেন।


জেনে নেই ডাহুক পাখিকে

ডাহুক পাখি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। ডাহুকের ইংরেজি নাম White-breasted waterhen। বৈজ্ঞানিক নাম Amaurornis phoenicurus। মাপ ৩২ সেন্টিমিটার।


স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে অনেকটা একই রকম। ডাহুকের লেজ ছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভা সমৃদ্ধ। লেজটা অধিকাংশ সময় খাড়া থাকে। হাঁটার সময় লেজটাকে নাচিয়ে হাঁটে। পা লম্বা, পায়ের নখগুলো লম্বা লম্বা। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরি-কালো।


মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা। ঠোঁট হলুদ রঙের, ঠোঁটের ওপরে লাল রঙের ছোট্ট দাগ আছে। তবে ডাহুকের বাচ্চারা সবসময় কুচকুচে কালো রঙের হয়।


ডাহুক পাখির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা, ধান ইত্যাদি।


পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়। অনেক সময় খাবারের খোঁজে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। বাসা বাঁধে জলার ধারে ঝোপে কিংবা বাঁশঝাড়ে, তবে পানি এদের প্রধান আশ্রয়।


জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজননকাল। ৬-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকি উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন।


বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ডাহুক দেখা যায়। নির্দয় শিকারিদের অত্যাচার আর বসবাসের জায়গার অভাবে প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর