'জগতের বিস্ময়' নামে পরিচিত যে পাতা

, ফিচার

শেখ বিবি কাউছার | 2023-09-01 21:38:30

আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক গাছ ও উদ্ভিদ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেসব ঔষধি গাছ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তার মধ্যে পাথরকুচি অন্যতম। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে আমাদের দেশে অধিকাংশ গাছ কিংবা উদ্ভিদের ফল ও পাতায় রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব নিয়ামত। তিনি প্রত্যেক দেশেই তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য প্রতিষেধক হিসেবে দিয়েছেন প্রকৃতির মাঝেই অপূর্ব এক ঔষধি ভান্ডার।

পাথরকুচি পাতা চেনে না এমন মানুষ মনে হয় খুব কম আছে। এই উদ্ভিদটি এমন যে, এটি লাগানোর জন্য প্রয়োজন হয় না তেমন কোন মাটি, টব, সার কিংবা যত্ন। পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে যত্ন ছাড়াই চারা পাওয়া যায়। তবে ভেজা আর স্যাঁতসেতে জায়গায় এটি খুব দ্রুত বাড়ে। তারপরও এই পাতাটির মধ্যে এত সব ঔষধি গুণ অবাক করবে আপনাকে। এটি আমাদের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কফ পাতা’ নামে পরিচিত।

বিজ্ঞানীদের মতে, পাথরকুচি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। যেমন,
কিডনির পাথর অপসারণে, মৃগী রোগে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায়, ত্বকের যত্নে, পাইলস্ কিংবা অর্শ রোগে, জন্ডিস নিরাময়ে, শরীরের জ্বালপোড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ডায়রিয়া, কলেরা, এমনকি ছোট শিশুদের ঠান্ডা লাগার প্রতিকার হিসাবেও পাথরকুচি পাতার রস ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশের বাইরেও আফ্রিকা, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকায় পোকামাকড়ের কামড়, জখম, আলসার, ফোঁড়া, প্রদাহের জন্য পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করা হয়। ব্রাজিলে এটি ব্যবহার করা হয় কাশি, ব্যাথা, ব্রংকাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রোগের প্রতিষেধক হিসেবে। ভারতের বুন্দেলখন্ড অঞ্চলে জন্ডিসের চিকিৎসায় এ পাতার তাজা রস ব্যবহার হয়। সিঙ্গাপুরে এই রস জ্বরের ঔষধ হিসেবে খাওয়ানো হয়। বিশ্বজুড়ে পাথরকুচি পাতা ব্যাপক ব্যবহারের কারণেই একে ‘জগতের বিস্ময়’ বলা হয়।

বীরুৎ*জাতীয় এই উদ্ভিদটির মধ্যে এত গুণাগুণ ভাবতেই অবাক লাগে! এটি খুব একটা লম্বা হয় না। পাতার মাঝেই খাঁজকাটা অংশে নতুন গাছ জন্মায়। দেখতেও খুবই সুন্দর।

গাছটি অনেক রোগের প্রতিষেধক তো বটেই এমনকি এটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব। আর এটি ২০০৮ সালে আবিষ্কার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান। তিনি পাথরকুচি পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সফল হয়েছেন বলে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়।

করোনাকালীন এই সময়টাতে ঔষধি গুণে ভরপুর এই পাথরকুচি পাতাটি হতে পারে আমাদের জন্য মোক্ষম দাওয়াই। কফ, কাশি, সর্দি, ঠান্ডা নিরাময়ে এ পাতাটি আমরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায়ও রাখতে পারি। পাথরকুচি পাতা ও এর নরম কান্ডগুলো একসাথে কুচি করে কেটে সরিষার তেল, পেঁয়াজ, লবণ, লেবুর রস, ও কাঁচামরিচসহ সব উপকরণ দিয়ে মেখে ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়। এতে তেতো ভাবটা কম লাগে এবং খেতে দারুণ স্বাদও পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে যারা কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত তারা চাইলে এই ঔষধি গাছটি বাণিজ্যিকভাবেও চাষ করতে পারেন। বাইরের দেশে এটি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। আর একটু উদ্যোগী হলেই ছাদে বা বারান্দায় অনায়াসে লালন করে বিপদে হাতের কাছে পেতে পারি এ মহৌষধি।

শেখ বিবি কাউছার, প্রভাষক, নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর