শিরোনাম নির্বাচনে বেগ পেতেই হয়! ‘আফ্রিকার যে পাখিটি বাংলাদেশের পাখির মতো’ এটা হবে? নাকি ‘বাংলাদেশের যে পাখিটি অফ্রিকার পাখির মতো’ এটা হবে? কিছুক্ষণ চিন্তায় পড়তেই হলো। কেননা, দেশপ্রেম বলে একটি বিশেষধরনের শব্দ হৃদয়ে প্রচলিত। আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা যা-ই লিখি না কেন, সবার আগে নিজের দেশ। সবার আগে মাতৃভূমি।
তাই, বিদেশি কোনো কিছুর বিষয়ে লিখতে গেলেই নিজের দেশের নামটি আগে থাকাই অতি বাঞ্চনীয় এবং যুক্তিযুক্ত। সেই বোধশক্তির বিবেচনায় শিরোনামটি নিজ থেকেই মস্তিস্কে সুসজ্জিত হয়ে গিয়েছে। নিমেষেই পাওয়া গেল পছন্দসই শিরোনাম। যেটি ওপরে ব্যবহৃত হয়েছে।
বহুবার বলেছি এবং বলতেও চাই- পাখি প্রকৃতির এক চিরন্তন বিস্ময়! তাকে নিয়ে ভাবার, লেখার কিংবা উপলব্ধি করার বহু কিছু বিষয় রয়েছে। যা সহজে ফুরোবার নয়। আর আমরা বার্তা২৪.কম আমাদের বিপন্ন প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাঠককে সচেতন করার লক্ষ্যে সে-ই শুভ পথেই হাঁটছি।
এক ধরনের পাখি আছে যারা বন্যপ্রাণীর শরীরের পোকা খেয়ে থাকে। বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ দেশ আফ্রিকায় এই পাখিটির নাম ‘অক্সপেকার’ (Oxpecker)। এরা বন্যপ্রাণীর শরীরের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে থাকে। এই অক্সপেকারের অনুরূপ পাখি আমাদের ‘ভাত-শালিক’ (Common Myna)। এরাও অক্সপেকার পাখির মতো আমাদের দেশের বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত প্রাণীর শরীর থেকে পোকা খেয়ে থাকে।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ অক্সপেকার সম্পর্কে বলেন, আফ্রিকায় অক্সপেকার নামে একটি বিশেষ পাখি রয়েছে যারা বন্যপ্রাণীদের শরীরের নানা ধরনের পোকা খেয়ে থাকে। প্রাণীদের লোমের ভেতরের ক্ষতিকর পোকাগুলো খেয়ে এরা প্রাণীগুলোকে নানান রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের দেশের ভাত-শালিক পাখিরাও তাই।
তিনি আরও বলেন, তারাও অক্সপেকার পাখির মতো কাজ করে। আমাদের বিভিন্ন গবাদিপশুর শরীর থেকে ভাত-শালিকরা পোকা খায়। শুধু তা-ই নয়, গরু-মহিষের নাক-কানের ভেতর থেকে এরা পোকামাকড় টেনে বের করে খায়।
আদনান আজাদ আসিফ ‘ভাত-শালিক’ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের এমন কোনও এলাকা নেই, যেখানে এই ভাত-শালিকের দেখা পাওয়া যায় না। পাখিটিকে আমাদের দেশের আনাচে কানাচে দেখা যায়। এটা হচ্ছে এমন পাখি- যাকে কাকের পরে ছেলেবুড়ো সবাই এক নামে চেনে।
তবে এই পাখিটিকে নিয়ে কুসংস্কার আছে যে- ‘আজ একটি শালিক দেখেছি, ভাগ্যটা আজ খারাপ যাবে।’ বা ‘দুইটা শালিক দেখেছি, আজ আমাদের ভাগ্য ভালো।’ শহরগ্রাম সব জায়গাতেই এই পাখিটাকে নিয়ে এমন কুসংস্কার রয়েছে বলে জানান আদনান।
ভাত-শালিকের গুণ এবং খাদ্যগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পাখিটির বিশেষ গুণ হলো সে সুন্দর করে কথা বলতে পারে। মানুষের স্বর অবিকল নকল করে কথা বলতে পারে। ময়নার ইংরেজি নাম হলো- Common Myna। তাদের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু নেই যে এরা খায় না; এরা সব খায়। এরা ডাস্টবিনের খাবার থেকে শুরু করে, বিভিন্ন পোকা-মাকড়, টিকটিকি-ব্যাঙ, খেজুরের রস, নানান ফুলের মধু, পেয়ারা-পেঁপেসহ নানা প্রকারের ফল-মূল এমন কিছু নাই যে এরা খায় না। তাই এদের আরেক নাম সর্বভুক পাখি। এরা আমাদের প্রকৃতির উপকারী পাখি।
এই ভাত-শালিক ইচ্ছে করলে বাবুই পাখির মতো সুন্দর করে গাছে বাসা তৈরি করতে পারে আবার চড়ুই পাখির মতো বিল্ডিং-এ বাসা বানিয়ে প্রজনন করতে পারে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।