বিশ্বব্যাপীই করোনার প্রকোপ বেড়েছে। ওমিক্রনের অতিসংক্রমণের কারণে বৈশ্বিক মহামারি ত্রাস ছড়াচ্ছে। করোনার আবার ঊর্ধগতির মুখে বাংলাদেশেও। গত এক সপ্তাহে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮৫ জন নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের। গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ১ হাজার ৮৮২ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৬৫৯ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত সাত দিনে মারা গেছেন আরও ২৭ জন, আগের সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৩ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এই ২৭ জনের মধ্যে ১৮ জনেরই কোনও না কোনো ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে, ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ডায়াবেটিসে এবং ২২ দশমিক ২ শতাংশ হৃদরোগে ভুগছিলেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ইস্যুতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে যদি সবাই নিজ থেকে সতর্ক না হই, তাহলে এটিকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্ত দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত লোকজন আসা যাওয়া করছে।
করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ধরন নিয়ন্ত্রণে ২টি সুপারিশ জানিয়েছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটির সব সদস্যের উপস্থিতিতে দুটি সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সবধরনের সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম সীমিতকরণ করার পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্ট লাইনারদের বুস্টার ডোজ দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন। উপরন্তু গত দুই বছরের করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ মানুষের প্রাণ, কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে বিপন্ন, কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করেছে বিশ্ব অর্থনীতির। মহামারির আঘাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপে শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে ভয়াবহ বিপর্যয় পার করছে ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। তবে, সবগুলো দেশকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাজ্যের করোনা বিপর্যয়। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬ জনের।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের মতে, বর্তমানে প্রতিদিন যুক্তরাজ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রোববার (১২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন। যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়, সেক্ষেত্রে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ৪০ শতাংশই এই ভাইরাসটির রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে করোনা রোগীদের ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। অভূতপূর্ব গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাসটি। প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে। এত ব্যাপক সংক্রামক ভাইরাসের আগে আমরা দেখিনি।
ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের হার এবং ঊর্ধ্বগতির বর্তমান করোনা চিত্র বলছে, সামনেই একটি করোনা ঢেউ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য এবং খুব দ্রুতই, আবারও আমাদেরকে ‘ভ্যাকসিন বনাম ভাইরাস’ রেসে নামতে হবে' উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।