হাতির গড়ন নিয়ে কোহ চাং

, ফিচার

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 03:07:15

ব্যাংকক থেকে: ট্রাট শহর থেকে প্রায় আধা ঘন্টা গাড়ি চালালেই পৌছানো যায় ফেরি ঘাটে। আন্দামান সাগরের দ্বীপ কোহ চাং। থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। ৪০ মিনিটের ফেরি পার হলেই কোহ চাংয়ের জেটি। এখানকার দ্বীপগুলোতে কোন গণপরিবহন নেই। ফলে হয় হোটেল বা রিসোর্টের গাড়িতে করে ভ্রমণ করতে হবে অথবা নিজস্ব গাড়ি বা মোটর সাইকেল। 

বেলা এগারোটা নাগাদ আমরা কোহ চাংয়ের তীরে পৌছালাম। নীল জলরাশি যেন আমাদের অপেক্ষা করছিল। স্বাভাবিক ডিসেম্বর গুলোতে এই কোহ চাংয়ে অনেক ভীড় হয়। তবে এবার সেটা অনেকটাই কম। পশ্চিমা দুনিয়ার কয়েকজন পর্যটক ছাড়া বেশিরভাগই স্থানীয় মানুষের ঘুরে বেড়ানো।

থাইল্যান্ডের অন্যান্য জায়গার মতো এখানটাও ভিন্ন স্বাদের মাছের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপটির বিভিন্ন পাশ কেন্দ্র করে রয়েছে নানা ধরনের সমুদ্র সৈকত। আর সেগুলোর বৈশিষ্ঠ্যও ভিন্ন। আর এখানে একেবারে তীরের পাশেই রয়েছে থাকার মোটেল। যেন বারান্দায় বসেই সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা যাবে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

কোহ চাংয়ে কোথায় থাকবেন, সেটা নির্ভর করবে কোন ধরনের সমুদ্র সৈকত আপনার পছন্দ। এখানে প্রতিটি সৈকত বিচিত্রতায় ভিন্ন ভিন্ন। এখানে দ্বীপে নেমে দক্ষিন পশ্চিমে সোজা চলে গেলেই ক্লং সন সৈকত। এই সৈকত ধরে পশ্চিম তীরে অনেকটুকু হাঁটা যায়। এই সৈকতের বালু সাদা এবং এখান সৈকত ঘিরে বেশ কয়েকটি সাদা বাড়িও গড়ে উঠেছে। বাড়ি বা রিসোর্ট যে কোনটি ভাড়া নিয়েই থাকা যাবে এখানে। এই সৈকতের পাড়েই বেশ কিছু বাজার এবং ক্লাব রয়েছে। তাই দিনের মতোই রাতটাও থাকে জমজমাট।

ক্লং সন এখানকার একটি গ্রাম। সেখানে বিশাল ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর গড়ে উঠেছে হাতির ক্যম্প, ফলের বাগান, গলফ ড্রাইভিং রেঞ্জ, মোরগ লড়াইয়ের ময়দান এবং উপত্যকায় কয়েকটি ঝর্ণা।

সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে অতুলনীয় উত্তরের সাদা বালুর সৈকত বা হোয়াইট স্যন্ড বীচ। এই সৈকত এলাকাটি দ্বীপের সবচেয়ে উন্নত এলাকা বলা যায়। এখানকার রিসোর্টগুলোর ভাড়াও কিছুটা বেশি। এখানে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্যুভেনিয়রের দোকান, সৈকতের পোষাক, ট্যুর এজেন্ট এবং রয়েছে অসংখ্য দর্জির দোকান। এখানে পর্যটকদের জন্য সকল ধরনের ব্যবসা রয়েছে এবং সত্যিকারের থাই পর্যটনের স্বর্গ বলা যায় এটিকে।

এখানে দক্ষিণের সাদা বালুর সৈকতটির চরিত্র ভিন্ন। যদি আপনি নীরবে নিভৃত্তে সময় কাটাতে চান বা সৈকতের পাশে বসে একটা ককটেইল নিয়ে ঝিমাতে চান। তাহলে এটা আপনার জায়গা। যেহেতু এটা হৈ হুল্লোড়ের সৈকতগুলো থেকে একটু দূরে, তাই ভাড়াও কিছুটা কমই পড়বে।

পার্ল বীচ যেটাকে বলা হচ্ছে এখানে মূলত কোন সৈকত নেই। হোয়াইট স্যন্ড বীচ আর ক্লোং প্রাওয়ের মধ্যকার পাথরের তীরটিকে বলা হয় পার্ল সৈকত। এখানে সাগরের পাড় ধরে গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালাতে লাগে অপূর্ব। এখানে রয়েছে স্নরকেলিংয়ের ব্যবস্থা। চাইলেই সাগরতল থেকে ঘুরে আসা যায়।

ছবি: বার্তা২৪.কম

এই দ্বীপটি পাহাড়ি দ্বীপ। দ্বীপের চূড়ায় উঠলে ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন আরো কিছু দ্বীপ দেখা যায়। সেখানে ছবি তুলতে ব্যস্ত পর্যটকরা।

আচ্ছা এই দ্বীপকে কেন চাং বলা হয় সেটাইতো এখনো বলা হলো না। ট্রাট থেকে যখন আমরা কো চাংয়ে যাচ্ছিলাম, সহযাত্রী পে বললেন, এই দ্বীপটি দেখতে হাতির মতো। থাই ভাষায় হাতির নাম চাং। এই চাংয়ের নামে এখানে পানীয় রয়েছে, বিয়ার রয়েছে। রয়েছে আরো হরেক ধরনের পণ্য এবং এই ব্র্যান্ডের অধীনে আরো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

দূর থেকে দ্বীপকে যখন খুব স্পষ্ট দেখাচ্ছিল তখন পে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, দেখো দ্বীপটিকে হাতির মাথার মতো দেখাচ্ছে কিনা? আমি দ্বিধাহীন ভাবেই বললাম আমার মনে হচ্ছে না। দ্বীপের আকার হাতির মতো না হলেও এখানে রয়েছে হাতি পালনের বেশ কয়েকটি ফার্ম। কয়েকটি ফার্মের হাতিতে চড়ে রাইড যেমন দেয়া যায়, তেমনি বন্ধুত্ব স্থাপনের মত খেলাও যায়।

তবে বছর দুয়েক আগে থাইল্যান্ডে খেলা বা সার্কাসের জন্য হাতিকে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষন দেয়া নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পড়ি। এরপর থেকে আর কখনোই এই হাতির খেলা দেখার শখ আমার হয়নি।

ছবি: বার্তা২৪.কম

এই দ্বীপে খাবারের দোকানে রয়েছে বৈচিত্র। ইতালিয়ান, ম্যাক্সিকান, আরব, ইংরেজ থেকে শুরু করে থাই খাবারের জমজমাট সব রেস্টুরেন্ট এখানে। এখানে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকানে দেখলাম কুমিরের ছবি টানানো।

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এখানে কুমিরের মাংসও খেতে পাওয়া যায়। এটা সত্য যে ট্রাটে কুমির আর হরিনের মাংস অনেকটাই সহজলভ্য। তবে এই খাবারের দোকানে এই কুমিরের মানে হচ্ছে, সৌভাগ্য বয়ে আনা।

আমরা ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে আবার সৈকতের ধারে নেমে আসলাম। এখানে আরো উল্লেখযোগ্য সৈকতের মধ্যে রয়েছে নর্থ ক্লং প্রাও সৈকত, দক্ষিন ক্লং প্রাও সৈকত, কাই বে সৈকত, লনলী বা একাকি সৈকত, বাইলান বে, ক্লং ক্লই সৈকত, ইস্ট কোস্ট সৈকত, লং বীচ প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর