যে ‘কালজয়ী গানে’ ধন্য বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-12-12 18:36:20

চির চেতনার নাম বঙ্গবন্ধু। চির ভালোবাসার নাম বঙ্গবন্ধু। বাঙালির চির আত্মপরিচয়ের নামটুকুও সেই বঙ্গবন্ধু। এ মহান মানুষটির জন্ম না হলে বাঙালি জাতি কোনোদিনই হয়তোবা স্বাধীনতার সুখ অর্জন করতে পারতো না। এতোটাই তেজোদীপ্ত, এতোটাই গৌরবগাঁথা বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির জনক পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।

১০ তারিখ সকালেই বঙ্গবন্ধু নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’

বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছান ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেলে পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি প্রত্যাবর্তনময় ভাষণ দেন।

আজ ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে তৎকালীন সময়ে আকাশবাণী কোলকাতা একটি বিশেষ শ্রদ্ধাসঙ্গীত নির্মিত করে সম্প্রচার করে। তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সুরশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-কে দিয়ে গাওয়া হয় সেই গানটি। আবেদুর রহমানের কথায় এই গানটি সুরারোপ করেন প্রখ্যাত সুরকার সুধীন দাসগুপ্ত। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আকাশবাণীতে একাধিকবার প্রচারিত হয়ে ছিল গানটি।


“বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়” - এই গানটি অবিস্মরণীয় এক ঐতিহাসিক গানের নির্দশন। যে গানের মর্মমূলে শুধুই আবেগমথিত বঙ্গবন্ধু। এই গানটিতে এতো অনুভূতি, এতো আবেগ, এতো সুরের মুর্ছনা যা হৃদয়কে দারুণভাবে নাড়া দেয়। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটের সাথে এই গানটা যে এতোটা তাৎপর্যপূর্ণ গানটি হৃদয় দিয়ে না শোনলে কিছুতেই অনুভব করা যায় না।

প্রতিটি লাইনেই যেন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের দুঃখগাঁথা নির্যাস। তাঁর জীবনবোধের শ্রেষ্ঠ আদর্শের ধারাভাষ্যকার গানের অন্তরা, সঞ্চারি। চিরসুধাময়ী কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘কিংবদন্তী কণ্ঠ’ সেই গানটিকে কালজয়ী করে তুলেছে। গানের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, লাইন অমর করে তুলেছে বিশ্বনেতার নিজগৃহে ফিরে আসার এই অধিবাসক্ষণ-কে।

বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার
স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়,
তুমি আজ ঘরে ঘরে
এত খুশী তাই
কি ভালো তোমাকে বাসি আমরা
বলো কি করে বোঝাই?

এদেশ কে বলো তুমি
বলো কেন এত ভালবাসলে?
সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের
এত কাছে কেন আসলে?

এমন আপন আজ বাংলার
তুমি ছাড়া কেউ আর নাই
বলো কি করে বোঝাই?

সারাটা জীবন তুমি নিজে
শুধু জেলে জেলে থাকলে
আর তব স্বপ্নের সুখী
এক বাংলার ছবি শুধু আঁকলে।

তোমার নিজের সুখ-সম্ভার
কিছু আর দেখলে না তাই,
বলো কি করে বোঝাই।

বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার
স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়,
তুমি আজ ঘরে ঘরে
এত খুশী তাই
কি ভালো তোমাকে বাসি আমরা
বলো কি করে বোঝাই?

এ সম্পর্কিত আরও খবর