আলিফের ভালোবাসাময় মানবিক খাবারের সাতকাহন

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:32:25

২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি 'ভ্যালেন্টাইন ডে'তে আনুষ্ঠানিক ভাবে বৈশাখী টিভির পিঠা উৎসব দিয়ে ভালোবাসার মিশেলে যাত্রা শুরু। তারপর এলো বৈশ্বিক করোনা মহামারি। কোভিড শুরু হবার পর বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড পেসেন্ট ও এফেক্টেড ২০০ জনের বেশি ফ্যামেলির জন্য খাবার গেছে আমার কিচেন থেকে। আমার এই কিচেনকে অনেকে মানবতার কিচেন নাম দিয়েছেন। বললেন আলিফ।

পুরো নাম আলিফ রিফাত। ডাক নাম শায়লা। বাবা  উচ্চ পদস্থ ব্যাংকার (অগ্রণী ব্যাংক), মা একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। ৪ ভাই বোন এর মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। স্বামী সৈয়দ আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী। ১ ছেলে রুৎবা, ১ মেয়ের  প্রীণন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতকোত্তর আলিফ চাকরিতে যোগ দেন নি। আবার পুরোপুরি ঘর-সংসারেও থেমে থাকেন নি। পারিবারিক ঐতিহ্য আর নিজের অদম্য আগ্রহে রন্ধনশিল্পে মনোনিবেশ করেছেন।

প্রথমে বন্ধু ও চেনাজানা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয় আলিফের খাবার। পরে করোনাকালে সামাজিক প্রয়োজনে বাড়াতে বাধ্য হন কাজের পরিসর। অনেক বাড়িতে একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্বামীকে নিয়ে নিজের রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছেন তিনি। ভালোবাসা আর মানবিকতায় এখন  উজ্জ্বল নাম আলিফ'স ডেলিকেট ডিসেস।

বার্তা২৪.কম'কে আলিফ বলেন, অর্ডার অনুযায়ী সব খাবারই করছি। লাঞ্চ, ডিনার, স্ন্যাক্স আইটেম বেশি পপুলার। মূলত ফেস বুক পেইজ-এর মাধ্যমে অর্ডার হয়। পরিচিতরা সরাসরি অর্ডার দেয় ফোনে।

'যে সময়টা মানুষ ঘর থেকে বের হতো না ভয়ে। সে সময় আমি ও আমার হাসব্যন্ড মিলে কোভিড পেসেন্টদের খাবার সাপ্লাই দিয়েছি হাসপাতাল আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে। তাতে আমরা যেমন তৃপ্তি পেয়েছি, তেমনি আমাদের পরিচিত ও আস্থা বেড়েছে', জানান আলিফ।

আলিফের দেশের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার রামনগর গ্রাম হলেও জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ভাতিঝি তিনি। লেখাপড়া করেছেন ভিকারুন নিসা স্কুল ও কলেজ এবং পরে ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রাহাত খানের অনুপ্রেরণায় শখের রন্ধনশিল্পকে আনুষ্ঠানিক ক্যাটারিং ব্যবসায় নিয়ে আসেন আলিফ। তার বাসায় বেড়াতে এসে সামান্য চিকেন ফ্রাই আর ভেজিটেবল স্যতে খেয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় বন্ধুরা। এরপর থেকে পিছনে লেগে থাকে ব্যবসা শুরু করার জন্য। বন্ধু আঁখি, রিতা নাহার আর শান্তা মারিয়া মিলে তা ব্যবসা শুরুর মূল অনুপ্রেরণার দেন। আলিফ'স ডেলিকেট ডিসেস নাম ঠিক করেন শান্তা মারিয়া আর রাহাত মিলে। পেইজ ওপেন করে দেন রাহাত।

'আনুষ্ঠানিক ব্যবসায় কোয়ালিটির দিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখি। অর্ডার কনফার্ম হবার পর বাজার করা হয়। এটাই কোয়ালিটি মেইনটেইনের মূল। আর রান্নার কাজ আমি নিজে করি। তাছাড়া, যা আমার ডাইনিং টেবিলে প্রস্তুত করে আমার সংসারের সদস্যদের দিই, তেমন ঘরোয়া খাবারই পৌঁছে দেই ক্লায়েন্টের ডাইনিং-এ', জানান তিনি।

বৈশাখী টিভি, দৃক, বিমান বাংলাদেশ, এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মূলত আলিফের ক্লায়েন্ট। নায়েম এবং মাউশি এর বিভিন্ন ট্রেনিং সেশনে ফুড সাপ্লাই দেন তিনি। তার ফাস্ট ক্লায়েন্ট রিতা নাহার সিনিয়র রিপোর্টার বৈশাখি টিভি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর