কটিয়াদীতে চিনি পাথরের তৈরি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

, ফিচার

ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2023-09-01 11:58:12

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মুমুরদিয়া ইউনিয়নের বর্তিহাটা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন ও বিভাময় কারুকার্যসমৃদ্ধ একটি মসজিদ সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। স্থাপত্যশৈলী ও নকশাকৃত দৃশ্যে দেদীপ্যমান। লোকজনের কাছে ‘ ভুইঁয়া জামে মসজিদ’ নামেই পরিচিত। মসজিদটি শত বর্ষ পেরিয়েছে । মসজিদটির মূল অংশ এবং বারান্দাসহ প্রায় দুই কাঠা জায়গায় ওপর অবস্থিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল মসজিদের অবকাঠামোয় আলাদা সমতল ছাদ নেই। ভেতর দিয়ে ছাদের বেশিরভাগ অংশে সরাসরি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের কয়েকটি গম্বুজ।

মসজিদ ভবনের মধ্যে বড়, দুই পাশে মাঝারি ধরনের ও চারকোনায় একই ডিজাইনের চারটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়াও ছয়টি ছোট ও দুইটি জোড়া পিলারের দুইটি গম্বুজ রয়েছে।

গম্বুজগুলোর উচ্চতা ৫-১২ ফুট। ছাদবিহীন মসজিদের প্রতিটি পিলারের মাথায় রয়েছে গম্বুজ বা মিনার। মসজিদের মূল ভবনের ভেতরে ও বাইরের দেয়ালসহ সম্পূর্ণ জায়গা সিরামিক দিয়ে ফুল, ফুলের গাছ ও আঙুর ফলের ছবির মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কয়েক বছর আগে মূল মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পার্শ্বে সম্প্রসারণ করা হয়।

কয়েক বছর আগে মূল মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পার্শ্বে সম্প্রসারণ করা হয়। মূল ভবনটি একতলা । বর্তমানে মসজিদটি প্রায় পাঁচ কাঠা জায়গায় অবস্থিত। নতুন অংশের পুরোটাই উন্নতমানের টাইলস দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। চাকচিক্য এ চিনির টুকরো মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে অজু করার বিশাল পুকুর ।

এ পর্যন্ত মসজিদের বিভিন্ন অংশের সংস্কার করা হলেও মূল শৈল্পিকতা, কারুকাজ ও নকশায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সংস্কারের সময় মসজিদটির আয়তনে প্রশস্ততা আনা হয়। মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন প্রায় ১৫ শ মুসল্লি। ভুঁইয়া জামে মসজিদ। মসজিদের মূল সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য চিনিটিকরির কারুকাজ ও নির্মাণশিল্পীদের নিখুঁত কর্মযজ্ঞ। দেয়াল ও ফলকগুলো মোগলীয় নির্মাণশৈলী ও রীতি সাজানো এবং সৌন্দর্যকরণ করা হয়েছে। মূল স্থাপনার ছাদে রয়েছে সুবিশাল তিনটি গম্বুজ। রঙবেরঙের চীনামাটির টুকরোর পাশাপাশি ব্যাপকহারে চীনা মোজাইকেরও ব্যবহার করা হয়েছে।

জানা যায়, মসজিদ নির্মাণ করেন বর্তিহাটা ভুইঁয়া বাড়ির চার ভাই। তারা হলেন, লবু ভুইঁয়া, মো. ফতে আলী ভুইঁয়া, বেচু আলী ভুইঁয়া, মো. ওছু আলী ভুইঁয়া। বাংলা ১৯২৫ সনে এটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।

ছাদবিহীন মসজিদের প্রতিটি পিলারের মাথায় রয়েছে গম্বুজ বা মিনার।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মজিবুর রহমান বাচ্চু (৬৫) বার্তা ২৪.কম’কে বলেন, ‘এই এলাকার ভুইঁয়া বংশের চার ভাই মিলে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তারা ব্যাবসা করতেন। কথিত আছে যে, ট্রেন দিয়ে কটিয়াদীর মানিকখালি রেল স্টেশনে এই মসজিদের টাকা আনা হয়৷ পরে গরুর গাড়ি দিয়ে সেই টাকা এলাকায় এনে মসজিদ তৈরির কাজে খরচ করা হয়েছিল। ভারত থেকে কারিগর এনে মসজিদের কারুকার্য করা হয়।’

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম ভুইঁয়া বার্তা ২৪.কম'কে বলেন, ‘মসজিদটি শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এটি সংরক্ষণ করে ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজ উদ্যোগেই আমরা কিছু সংস্কার কাজ করেছি।’

মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম বার্তা ২৪.কম'কে বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লীরা নামাজ পড়তে আসে। সরকারি উদ্যোগে এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও শোভাবর্ধন করার দাবি জানাচ্ছি।’

সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের স্মারক মসজিদটি। কিন্তু প্রাচীনতার কারণে ও কিছুটা অযত্নে মসজিদের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যগুলো দিনদিন নষ্ট হতে চলেছে। কিছু পাথর ও উজ্জ্বল টালিগুলো খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর