‘গৈইলত থাকি, মোক ঘর করি দেয় কাই’

, ফিচার

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-09-01 23:25:07

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের সুরিরডারা গ্রামের বাসিন্দা মহেছেনা বেগম। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় অসহায় জীবন যাপন করছেন এই ষাটোর্ধ্ব নারী। সন্তানরা থেকেও নেই। ফলে গোয়ালঘরে গরুর সাথে কয়েকমাস ধরে বসবাস করছেন মহেছেনা বেগম।

জানা যায়, তার স্বামী ছেড়ে গেছেন প্রায় ছয় বছর আগে। এরপর দুই ছেলে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন মহেছেনা। ৫/৬ মাস আগে বড় ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। সাথে নিজের করা ঘরটাও ভেঙে নিয়ে গেলেও নিজের প্রথম পক্ষের ছেলেকে রেখে যান মা মহেছেনার কাছে। গৃহহীন মহেছেনার আশ্রয় হয় ছোট ছেলের গোয়াল ঘরে, গরুর সাথে। এই তীব্র শীতেও দশ বছর বয়সের নাতিসহ গরুর সাথে একই ঘরে বসবাস ষাটোর্ধ্ব মহেছেনার।

মহেছেনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াল ঘরের একদিকে একটি মাঁচান আর একদিকে শোবার বিছানা। মাঝখানের কোনায় গরু রাখার স্থান। গোবর-মূত্রের গন্ধ নিয়ে সেই ঘরেই বসবাস মহেছেনার। যেন নিজ ভূমিতে পরবাসী তিনি। ছোট ছেলে বাড়িতে থাকলেও স্বল্প আয়ে মায়ের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে দেওয়ার ‘সামর্থ’ নেই তার। বিকল্প না থাকায় ছেলের গোয়ালঘরে আশ্রয় হয়েছে মহেছেনার।

মহেছেনা বলেন, ‘বড় বেটা প্রথম বউ ছাড়ি দিয়া ফির বিয়া করি অন্যটেই থাকে। নাতিটাক মোর কাছত রাখি গেইছে। ছোট বেটা দিন আনি দিন খায়। মোক ঘর করি দেয় কাই? নাতিটাক নিয়া ছোট বেটার গৈইলত (গোয়ালে) থাকি।’

গরুর গোবর আর মূত্রের গন্ধে সমস্যা হয় কি না, এমন প্রশ্নে মহেছেনা বলেন, ‘ সমস্যা হয় কিন্তু কী করমো বাবা, ঘর করারতো সামর্থ নাই!’

অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজের ও নাতির খাবার জোগান মহেছেনা। নিজের বয়স কত সেটাও ঠিকমতো বলতে পারেন না। তবে গোয়ালঘরে থাকা নিয়ে তাঁর ছোট ছেলের প্রতি কোনও অভিযোগ নেই। বরং ছেলের জন্য অনেকটা সাফাই গাইলেন ষাটোর্ধ্ব এই নারী।

‘নাতিসহ যাওয়ার আর জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত কামাই করি আনি নাতিসহ খাঙ। ছোট বেটা নিজে চইলবার পায় না মোক কেমন করি দিবে। উয়ারও (ওরও) একটায় ঘর। কাইয়ো ঘরও দেয়না, সাহায্যও করে না।’

মহেছেনার ছোট ছেলে কাজে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মহেছেনা যে বাড়িতে কাজ করেন সেই বাড়ির বড় ছেলে মারুফ আহমেদ মহেছেনা ও তার নাতির জন্য আলাদা ঘর করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সেজন্য সমাজের সামর্থবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মারুফ আহমেদ বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাড়া পেয়েছি। আরও কিছু সহায়তা দরকার। সকলের সহায়তা পেলে আগামী মাসেই মহেছেনা ও তার নাতির জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর