ভারতের প্রধান চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে মহারাষ্ট্রের পুনা শহর। বোম্বে বা মুম্বাইয়ের পর দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর পুনা বা পুনে পরিচিত ভারতের অন্যতম ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’, ‘ডেকানস কুইন’ (দাক্ষিণাত্যের রানি) এবং ভারতের অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজ নামেও।
ভারতীয় মিডিয়ার এক জরিপে উদীয়মান স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ক্ষেত্র হিসেবে প্রথম স্থান লাভ করেছে সায়াদ্রি পাহাড়ের উপত্যকায় মুলা এবং মুঠা নদী তীরের পুনা। মুম্বাইয়ের করপোরেট চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে এক ঘণ্টার ড্রাইভের দূরত্বে অবস্থিত পুনায় তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় বলে শহরটি এখন চিকিৎসা ও পর্যটনের হটস্পট।
চিকিৎসা ও পর্যটনের হটস্পট পুনা পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জনপদ। পুনা সতেরো শতাব্দীতে প্রথমবার ভোঁসলে মারাঠাদের রাজধানী হিসেবে গুরুত্ব অর্জন করেছিল। এটি মুঘলগণ অস্থায়ীভাবে দখল করলেও শেষ পর্যন্ত মারাঠার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং দ্রুত বিকশিত মহানগর হিসেবে পুনা ধনী কাজিন সিটি মুম্বাইয়ের ছায়া থেকে সরে এসে ভারতীয় মানচিত্রে নিজস্ব কুলুঙ্গি খোদাই করেছে। ভারতের অন্য বেশিরভাগ জায়গাগুলো দেখার জন্য এক বা দুটি কারণ থাকলেও পুনা-এর এমন বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে, যা বারবার ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানায়।
ভারতের অন্যান্য শহরগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় খুব গরম বা খুব শীত থাকলেও পুনা প্রাকৃতিক কারণে সর্বদা একটি মাঝারি আবহাওয়ার নাতিশীতোষ্ণ শহর, যা কখনই খুব বেশি গরম বা খুব বেশি শীত হয় না বলে বছরের যে কোনও সময় এই জায়গাটি পরিদর্শন করা যায়। আবহাওয়া শীতল এবং বায়ুযুক্ত ও দূষণমুক্ত আর মাঝে মাঝে ঝরঝরে বৃষ্টির সাথে মনোমুগ্ধ দৃশ্য পুনা-কে অনিন্দিত করেছে।
পুনা-এর খাবার-দাবার অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বিভিন্ন ধরণের আইটেমে ভরপুর। পুনা সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির লোকদের বাসস্থান এবং খাবারের প্রভাব অনস্বীকার্য। পারসি খাবার বা খাঁটি নিরামিষ, হাই-এন্ড রেস্তোঁরা বা রাস্তার পাশে খাওয়ার প্রচুর অফার রয়েছে পুনা-তে। রয়েছে প্রাচীনতম পার্সিয়ান বেকারি 'কায়ানি বেকারি', যাতে শ্রিউসবারি বিস্কুট এবং প্যাস্ট্রি বিশ্বসেরা। 'কোরেগাঁও পার্ক' এবং 'ব্যানার' হ'ল শহরের আরো দুটি প্রধান রেঁস্তোরা কেন্দ্র।
পুনা-র নাইট লাইফ এমন একটি বিষয় যা পার্টির লোকেরা সবসময় প্রত্যাশায় থাকে। সেখানে পরিশীলিত নাইটক্লাবগুলো এবং শহরের গানের দৃশ্যগুলোও দুরন্ত হয়ে উঠছে। এনরিক ইগলেসিয়াস, আকন, জে শান, ডেভিড গুয়েতার মতো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক তারকা এখানে অভিনয় করেছেন। এই শহরটিতে দুটি বড় আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়।
পুনা একটি শপিং স্বর্গ। বাজেট ক্রেতাদের থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ক্রেতাদের কাছে কেনাকাটার অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিখ্যাত রাস্তার শপিংয়ের জায়গাগুলোতে প্রচুর মল রয়েছে, যেখানে খুব ভাল দর কষাকষি করে মার্কেটিং করা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শপিংয়ের গন্তব্য হ'ল কোরেগাঁও পার্ক, এমজি রোড, এফসি রোড এবং জেএম রোড। ফিনিক্স মার্কেট সিটি, আমানোরা টাউন মল, সিজনস্ মল এবং ওয়েস্ট এন্ড মল পুনা-র প্রধান উচ্চ-শপিং গন্তব্য।
কৌশলগত কারণে মুম্বাই ছাড়াও পুনা থেকে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী স্থানে সহজে অ্যাক্সেস করা যায়। মহাবালেশ্বর, পাঁচগনি, লোনাওয়ালা এবং খান্ডালার মতো পার্বত্য স্টেশনগুলোও নিকটে রয়েছে এবং মুম্বাই পুনা থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরে। পুনা ভ্রমণকারীদের জন্য আরেকটি বড় আকর্ষণ হ'ল গোয়া। গোয়ার সৈকত এবং পার্টি লাইফ সহজে উপভোগ করা যায় পুনা থেকে স্বল্প সময়ের ভ্রমণের মাধ্যমে।
পুনা দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এটিকে 'ভারতের অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এই শহরটিতে পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৪৮) প্রায় ৩০টি উপাদান এবং অনুমোদিত কলেজ রয়েছে। ভান্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (১৯১৭) সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় গবেষণা ও নির্দেশনার জন্য খ্যাতিমান এবং ২০,০০০ এরও অধিক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি রয়েছে সেখানে। পুনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষিণ কমান্ডের সদর দফতর, যার কাছেই রয়েছে খদকসোলা একাডেমি। রয়েছে মহারাজা সরাজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিল্প ও কলার বিশ্ববিশ্রুত উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র। একইভাবে চলচ্চিত্র শিক্ষার জাতীয় প্রতিষ্ঠানও পুনা-ত অবস্থিত।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে পুনা অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি, নিবেদিত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, স্বল্প ব্যয় এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দেশ-বিদেশের লোকজন ছুটছেন সেখানে। গলাকাটা খরচ ও করপোরেট পদ্ধতির চাপ এড়িয়ে মুম্বাই বা ভারতের মানুষও বেছে নিচ্ছেন এক ঘণ্টা দূরের মনোরম শহর পুনা-কে। পুনা-র চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অগ্রগতি এনেছেন বিশ্ববরেণ্য চিকিৎসক ডা. চারুদত্ত আপ্তে (https://sahyadrihospital.com/doctors/dr-charudutt-apte/), যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বমানের সায়াদ্রি হাসপাতাল চেইন (https://sahyadrihospital.com/)।
সায়াদ্রি হাসপাতাল চেইন তাদের ৯টি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালের মাধ্যমে পুনা এবং পাশের নৈসর্গিক শহর নাসিকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রকে সুপরিকল্পিতভাবে সাজিয়েছে। ১০০০ হাজার শয্যা, শতাধিক চিকিৎসক, ২৬০০ স্টাফ ও টেকনিশিয়ান নিয়ে সায়াদ্রি হাসপাতাল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে ও দ্রুততার সঙ্গে অতি-অগ্রসর চিকিৎসা সেবার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। বিভিন্ন জটিল অপারেশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিক থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এই হাসপাতাল।
হাসপাতালের বিদেশি রোগীদের জন্য আলাদা বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মাদ জিসান আনসারি বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমরা মুম্বাই এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশি রোগীদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও সার্বিক সুযোগ-সুবিধার দিকে খেয়াল রাখি। শুধু তাই নয়, মুম্বাইয়ের অর্ধেক খরচে আমরা একই মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। তাছাড়া, মুম্বাইয়ের চেয়ে ভিড়, ঝামেলা, জীবনযাত্রার খরচ ও চিকিৎসা ব্যয় কম বলে ভারতের ও বিদেশের রোগীরা সায়াদ্রি হাসপাতালকে বেছে নিচ্ছেন।
মোহাম্মাদ জিসান আনসারি বলেন, আমরা এখানে চিকিৎসা সেবা পেতে আগ্রহীদের জন্য অনলাইনে নির্ভুল রোগ নির্ণয়, সঠিক পরামর্শ প্রদান ও স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করি। যে কেউ চিকিৎসা সংক্রান্ত মতামত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে হোয়াটসআপ নম্বরে (+91 77680 03770) এবং ইমেইলে (ips@sahyadrihospitals.com ; zeeshan.ansari@sahyadrihospitals.com) যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগিতা করে থাকি।